ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের রানের পাহাড়ে চাপা পড়েছে ও. ইন্ডিজ

0
329

খবর ৭১:  বাংলাদেশের ৫০৮ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে পড়েছে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষের আগে ৫ উইকেট হারিয়ে উইন্ডিজের সংগ্রহ ৭৫ রান। তাতে স্বাগতিকদের থেকে এখনও ৪৩৩ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা। অপরাজিত আছেন শেন ডরউইচ (১৭) এবং শিমরন হেটমেয়ার (৩২)।

ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলেই সাকিব বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ক্যারিবীয়ান ওপেনার কার্লোস ব্রাথওয়েইটকে। এরপর মিরাজ বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার কাইরন পাওয়েলকে (৪)। দলীয় ৬ রানে ক্যারিবীয়ানরা দুই ওপেনারকে হারায়। দলীয় ১৭ রানের মাথায় ইনিংসের নবম ওভারের শেষ বলে সাকিব বোল্ড করেন সুনীল অ্যামবিসকে (৭)। এরপর শিকারে আবারো যোগ দেন মিরাজ। ফিরিয়ে দেন রোস্টন চেজকে। দলীয় ২৯ রানে মিরাজ নিজের তৃতীয় উইকেট নিতে ফিরিয়ে দেন ১০ রান করা শাই হোপকে। টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানই বোল্ড হন। নাঈম হাসান নিজের প্রথম ওভারে এলবির ফাঁদে ফেলেন শিমরন হেটমেয়ারকে। আম্পায়ার আলিম দার আউট ঘোষণা করলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান হেটমেয়ার।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে লিড ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৫৯ রান। দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে অলআউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ ১৫৪ ওভারে তোলে ৫০৮ রান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সবশেষ ব্যাটসম্যান হয়ে আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন। ফিফটি করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, অভিষিক্ত সাদমান ইসলাম এবং জাতীয় দলে আবারো ফেরা লিটন দাস।

ওপেনিংয়ে নামেন সৌম্য সরকার এবং অভিষিক্ত সাদমান ইসলাম। শুরুটা বেশ ভালোই করে নতুন এই ওপেনিং জুটি। তবে দলীয় ৪২ রানের মাথায় রোস্টন চেজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। বিদায়ের আগে এই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। দলীয় ৮৭ রানের মাথায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়। মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক শেষ বলের আগে অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আগের দুই ম্যাচে টানা দুই সেঞ্চুরি করা মুমিনুল হক। কেমার রোচের বলে ব্যক্তিগত ২৯ রান করে রোস্টন রেচের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ৪৬ বল মোকাবেলা করে সেট হওয়া মুমিনুল। সাদমানের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ৮৭ রান।

দ্বিতীয় সেশনে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন মোহাম্মদ মিঠুন এবং সাদমান ইসলাম। এই জুটি থেকে আসে ৬৪ রান। দলীয় ১৫১ রানের মাথায় দেবেন্দ্র বিশুর বলে বোল্ড হন ২৯ রান করা মিঠুন। দলীয় ১৬১ রানের মাথায় বিদায় নেন অভিষিক্ত সাদমান ইসলাম (৭৬)। বিশুর বলে এলবির ফাঁদে পড়ার আগে ১৯৯ বল মোকাবেলা করে ছয়টি বাউন্ডারিতে এই ইনিংস সাজান বাঁহাতি ওপেনার। দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১৭৫/৪। প্রথম সেশনে সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক বিদায় নিয়েছেন, দ্বিতীয় সেশনে বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুন, সাদমান ইসলাম। তৃতীয় সেশন শুরুর কিছুটা সময় পর বিদায় নেন মুশফিক। দলীয় ১৯০ রানের মাথায় বাংলাদেশ পঞ্চম উিইকেট হারায়। লুইসের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১৪ রান।

এই ম্যাচের মধ্যদিয়ে টেস্টে অভিষেক হয় তরুণ ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলামের। বিশ্রামে রাখা হয়েছে ওপেনার ইমরুল কায়েসকে। বাদ পড়েছেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, দলে এসেছেন লিটন দাস। এই প্রথম কোনো পেসার ছাড়া একাদশ সাজিয়েছে টাইগাররা।

দ্বিতীয় দিন অপরাজিত থেকে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটিতে আসে ১১১ রান। দলীয় ৩০১ রানের মাথায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ উইকেট হারায়। কেমার রোচের বলে শাই হোপের তালুবন্দি হন সাকিব। টাইগার দলপতি সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৮০ রান (২৪তম ফিফটি)। ১৩৯ বলে সাজানো সাকিবের ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি। এরপর জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং দলে ফেরা লিটন দাস। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম ফিফটি পান রিয়াদ আর চতুর্থ ফিফটি পান লিটন। দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৮৭/৬। দ্বিতীয় সেশনের কিছু পরেই বিদায় নেন লিটন দাস (৫৪)। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৯২ রান। ক্রেইগ ব্রাথওয়েইটের বলে বোল্ড হওয়ার আগে লিটন ৬২ বলে আটটি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান। দলীয় ৩৯৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ সপ্তম উইকেট হারায়। এরপর ২৬ বলে ১৮ রান করে বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৬তম ফিফটিকে তৃতীয় সেঞ্চুরিতে রূপ দেন মাহমুদউল্লাহ। দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৭১/৮।

তৃতীয় বা শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন তাইজুল ইসলাম (২৬)। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৩৬) সবশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন। নাঈম হাসান (১২) অপরাজিত থাকেন। সাদা পোশাকে তৃতীয় সেঞ্চুরি করা রিয়াদ ২৪২ বলে ১০টি বাউন্ডারি হাঁকান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি করে উইকেট পান কেমার রোচ, দেবেন্দ্র বিশু, কার্লোস ব্রাথওয়েইট এবং জোমেল ওয়ারিকান। একটি করে উইকেট পান শিরমন লুইস এবং রোস্টন চেজ।

চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৪ রানের ব্যবধানে। নিজেদের খেলা সবশেষ ৫ টেস্টে টানা দুটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ আর টানা তিনটিতেই হেরেছে ক্যারিবীয়ানরা। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে চোট পেয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার বদলে নেতৃত্বভার পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছিলেন সাকিব। ৯ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও ধবলধোলাইয়ের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here