ঢাকায় পানি আসবে ‘খনি’ থেকে

0
287

খবর৭১: রাজধানীর চার পাশের নদীগুলো সব দূষিত, বুড়িগঙ্গার পানি পরিশোধনের অযোগ্য প্রায়। এর মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে বলে মাটির নিচ থেকে পানি তুলতেও সতর্ক সরকার। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করেছে সাভারে পাওয়া ‘পানির খনি’।

রাজধানীতে পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ঢাকা লাগোয়া জনপদটির তেঁতুলঝরা ভাকুর্তা এলাকার মাটির নিচে আছে পানির বিরাট এক ভাণ্ডার বা ‘একুইফার’। এখান থেকে পানি যতই তোলা হোক, সেটি ফুরাবে না কখনও। আর এই খনি থেকে এপ্রিলের আগেই রাজধানীতে পানি সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়ে আগাচ্ছে ওয়াসা।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা মাফিক আগামী ৩১ মার্চ আমরা সাভারের পানির ভাণ্ডার থেকে পারি সরবরাহ করতে পারব। এটি প্রাথমিকভাবে মিরপুর অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।’

ওয়াসা প্রধান বলেন, ‘আমাদের প্রথম ফেইজে আমরা সাভার থেকে পানি উত্তোলনের কাজ হাতে নিয়েছি। সেটি এখন শেষ পর্যায়।’

ঢাকায় মাটির নিচে পানির স্তর এরই মধ্যে এলাকা ভেদে তিন থেকে ১০ মিটার নিচে নেমে গেছে। বৃষ্টির পানি মাটির নিচে গিয়ে এই ফাঁকা স্থান পূরণ করতে পারছে না। কারণ যে পরিমাণ মানি যায়, তার চেয়ে বেশি পানি উঠাতে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমিয়ে আনতে চাইছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংসদকে জানিয়েছেন, সরকারের মহাপরিকল্পনার সুপারিশ অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় শতকরা ৭০ ভাগ পানি ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা ওয়াসা কাজ করে যাচ্ছে। আর এই পানির খনি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে সরকার।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ২০০৯ সালে ঢাকার কাছেই দুটি ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার বা ‘একুইফার’ তথ্য পায় ওয়াসা। এ দুটি ভাণ্ডারের উৎস হচ্ছে হিমালয় পর্বতমালার একটি হিমবাহ। ওয়াসা দাবি করছে, সেখানে প্রায় ৪০ বছর ব্যবহার করার পানি জমা আছে এবং তা এখনও আসছে। অর্থাৎ ‘পুনর্ভরণ’ হচ্ছে, তাই এ দুটি খনির পানি কখনোই ফুরাবে না।

আরেকটি পানির ভাণ্ডার আছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। এ একুইফার আছে প্রায় ৬০০ ফুট নিচে এবং এর বিস্তৃতিও অনেকখানি। সেখানে প্রায় ৪০ বছর ব্যবহার করার মতো পানি জমা আছে।

পানির খনিটি খুঁজে পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত হয় সেখান থেকে পাইপলাইনে মিরপুর এলাকায় পানি নিয়ে আসা হবে। কারণ সেখানে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এই খনি থেকে পানি উত্তোলন ও সরবরাহের আগে একটি কাজ করতে হবে ওয়াসাকে। এই পানি বিশুদ্ধ হলেও এতে আয়রনের মাত্রা খানিকটা বেশি।

ওয়াসা প্রধান বলেন, ‘এ পানি সম্পূর্ণই খাবার উপযুক্ত। তবে এতে আয়রনের মাত্রা বেশি, তাই সেটি দূর করার জন্য সেখানে একটা প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।’

ওয়াসার এমডি বলেন, ঢাকা ওয়াসা এরই মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে মাটির ওপরের উৎসজাত পানির দিকে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকার ৭০ ভাগ পানি মাটির ওপরের উৎস থেকে আসবে, যা পারিবেশবান্ধব।

বিভিন্ন প্রকল্পেই নানা সময় বিলম্ব হয়, এমনকি যেগুলো অগ্রাধিকার প্রকল্প। খনি থেকে পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে সময় সীমা মেনে চলা যাবে কি না, এমন প্রশ্নে ওয়াসা এমডি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক আছে। আমরা কোথাও পিছিয়ে নেই। তাই কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে হবে বলে আশা করছি না।’

‘তবে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আরেকবার মূল্যায়ন করা হবে এবং তখন এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে। আমরা মনে করি, এটি ঢাকাবাসীর জন্য একটি সুখবর।’
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here