ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ

0
560
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ

খবর৭১ঃ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলটির শীর্ষ কয়েক নেতা প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ জরিপ শুরু করেছেন। দলের জন্য নিবেদিত, নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ও জনপ্রিয়- এমন নেতা খুঁজছেন তারা।
সূত্র মতে, ওয়ার্ড জরিপে বর্তমান কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। সে হিসেবে আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেক কাউন্সিলর বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। মেয়র পদেও খোঁজা হচ্ছে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুই মেয়র ওই বছর ৬ মে শপথ গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী আগামী বছরের মে মাসে মেয়াদ শেষ হবে মেয়রদের। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে ভোট করতে হবে। সে হিসেবে আগামী বছরের জানুয়ারির দিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান রোববার বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ের জরিপ শুরু করেছে। কে কোথায় জনপ্রিয়, দলের জন্য নিবেদিত, তা খতিয়ে দেখছি। দায়িত্ব পালনে যারা যোগ্য ও সবার থেকে এগিয়ে থাকবে তারাই মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাবে। কাউন্সিলরদের বিষয়েও জরিপ চলছে। তাদের দলীয় প্রতীক দেয়া হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সেক্ষেত্রেও আমরা জনপ্রিয় দলীয় নেতাকেই সমর্থন দেব।

তিনি বলেন, তবে কে মনোনয়ন পাবে আর কে বাদ যাবে তা এখনই বলা যাবে না। তবে আমরা বর্তমান মেয়র, কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করছি। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য দলীয় নেতা, যিনি দলকে জিতিয়ে আনতে পারবেন তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শনিবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, কয়েক মাস পর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। জোর করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শেখ হাসিনা নির্বাচনে জিততে চান না। আমরা জনগণকে খুশি করে জনগণের রায় মেনে নির্বাচিত হতে চাই। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা কেউ যদি ভাবেন ক্ষমতায় আছি জিতেই যাব, তাহলে ভুল করবেন। আপনাকে জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হতে হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।

প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা যুগান্তরকে জানান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের গত চার বছর চার মাসে সফলতার হিসাব কষলে অনেকের পাস নম্বরও জুটবে না। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর অনেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্কটুকুও রাখেননি। ঢাকার যেসব ওয়ার্ডে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে তার মূল কারণ কাউন্সিলরদের আধিপত্য। অনেক কাউন্সিলরের কাছে দলের স্থানীয় সিনিয়র নেতারা অবমূল্যায়িত ও অবহেলিত হয়েছেন। আমরা সেসব বিষয় মাথায় রেখে জরিপ করছি। সেসব ওয়ার্ডে নতুন প্রার্থীর সন্ধান করছি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভোট করতে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। প্রস্তাবটি শিগগিরই নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হতে পারে। ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের ৪৭তম বৈঠকে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে শতভাগ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েই আগেভাগে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে বিএনপিও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী চূড়ান্তে কাজ করছে ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মতে, আগামী ২০২০-২০২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। সে বছর ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। সরকার ও দলের হাইকমান্ড চায়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালনে ঢাকার দুই সিটি ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত থাকুক। এজন্য জানুয়ারি মাসকেই ভোটের জন্য উপযুক্ত সময় মনে করা হচ্ছে। এছাড়া ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি, ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। মার্চে থাকবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর ব্যাপক কর্মসূচি। আর মে মাস থেকে শুরু হবে রমজান।

রাজধানীবাসীর সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর প্রায় ৪ বছর পর দুই সিটিতে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যান ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে বিজয়ী হন ব্যবসায়ী নেতা মো. আতিকুল ইসলাম। ৭ মার্চ শপথ নেন তিনি। তবে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ একসঙ্গে আগামী বছরের মে মাসেই শেষ হবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here