ঢাকার অবৈধ ভবনগুলির দায় কার?

0
378

খবর৭১ঃ বনানীর যে বহুতল ভবনে আগুন লেগেছে সেখান থেকে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো। ছাপড়া দেওয়া এই বাজারে শনিবার আগুন লাগে বনানীর আগুনের মাত্র দু’দিন পর। এই বাজারের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট কাজ করে। তবে আগুন নেভানো হলেও পুড়ে ছাই হয়ে যায় কাঁচাবাজারের মালামাল।

আগুনে পাশের ডিসিসি মার্কেটের অল্প কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই মার্কেটে এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতেও অগ্নিকাণ্ডে বহু দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।

ঢাকায় এমন অনেক বহুতল ভবন রয়েছে যেগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার জন্যে জরুরি পথ রাখা হয়নি। মানা হয়নি এরকম আরও অনেক আইন কানুন।

তার একটি প্রমাণ বনানীর এফ আর টাওয়ার। কিন্তু কীভাবে বছরের পর বছর ঝুঁকিপূর্ণ, নিয়মবহির্ভূত এসব ভবন টিকে আছে?

আইনজীবী মঞ্জিল মোরশেদ, যিনি অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে জনস্বার্থে বেশ কয়েকটি মামলা করেছেন আদালতে, তিনি বলেছেন, রাজউক এবং ফায়ার সার্ভিসের যেসব আইন রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না বলে এসব ভবন এখনো টিকে আছে।

আইনজীবী বলেন, ‘এই ক্ষমতাটা কিন্তু রাজউকের আছে। কিন্তু রাজউকের পক্ষ থেকে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ আমরা দেখি না। ফায়ার ব্রিগেডের যে আইন আছে সেখানে মামলা করার বিধান আছে এবং ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলে তারা সেটাকে সিল করে দিতে পারে যাতে কেউ ওই ভবন ব্যবহার করতে না পারে। কিন্তু সেরকম কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুধু দূর্ঘটনা ঘটলে তারা সেসব ভবন থেকে লোকজন উদ্ধার করে।’

এই তো বেশি দিন নয়, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই পুরাণ ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তারও আগে ঘটেছে আরও বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

প্রতিবার এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, ওই কমিটি থেকে সুপারিশও করা হয়। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয় না।

মনজিল মোরশেদ বলেন, ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত যেসব আইন রয়েছে সেসব আইন মানলে এসব ভবন টিকে থাকার কথা না। তাহলে কোন জায়গাটাতে গিয়ে থেমে যায় তাদের কার্যক্রম?

‘আইনের প্রয়োগটা করা যাচ্ছে না কারণ অনেকেই মানতে চান না। কারণ তারা তো অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এই জায়গাগুলোতে তারা আইনকে খুব একটা পাত্তা দিতে চান না।’

আইনজীবী বলেন, ‘যেহেতু আইন প্রয়োগ হয় না কাজেই স্বাভাবিকভাবে তারা উৎসাহিত হয় এবং আস্তে আস্তে এটা অনেকের মধ্যে প্রভাবিত হয় যে আইনকে তোয়াক্কা না করলেও চলে। তবে যদি তোয়াক্কা করার মতো ব্যবস্থা নেয় রাজউক বা ফায়ার ব্রিগেড তাহলে এটা বন্ধ করা খুব সহজ।’

একটি ভবন নির্মাণের সময় রাজউকের ২০০৮ সালের যে বিধিমালা রয়েছে সেটা মেনে ভবন নির্মাণ করতে হয়। রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলছেন, নিয়মের বাইরে ভবন নির্মাণ করলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পুরো এখতিয়ার রয়েছে রাজউকের। এবং সেটা তারা করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

‘সরকার থেকে রাজউককে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে যে কেউ নিয়মের বাইরে কিছু করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। আমরা নিয়মিতই সেই কাজটা করছি। প্রথমে নোটিশ দেয়া হয়, তারপর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। এছাড়া উচ্ছেদের মাধ্যমেও আমরা আমাদের কাজ করে থাকি।’

কিন্তু নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, আইন-কানুন ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে আগুন লাগলে কী করতে হবে সে বিষয়ে জানার এবং প্রস্তুতি নেয়ার একটা ঘাটতি রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আফসানা হক বলছেন, এই প্রস্তুতিটা স্কুল পর্যায় থেকে চালু করতে হবে।

‘আজকে যদি ফায়ার ড্রিলের কথা বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস বা ডিফেন্স যদি সেই ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ক’জন এর জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত? এই কাজটা করা আমাদের জন্য জরুরি। এই মানসিক প্রস্তুতিটাও আমাদের মধ্যে নেই। আমার মনে হয় একটা ছোট বাচ্চা যখন স্কুলে যায় তার লেখাপড়া বা দৈনন্দিন চর্চার মধ্যে এই বিষয়টাও নিয়ে আসা উচিত।’

ঢাকা শহরে ঝুঁকিপূর্ণ বা নিয়মবহির্ভূত কতগুলো ভবন রয়েছে তার হিসাব রাজউকের কাছে নেই। তবে রাজউক বলছে, তারা একটা নির্দেশ দিয়েছে যাতে ঢাকা শহরে যতগুলো বহুতল ভবন ১৯৯৬ সালের বিধিমালা অনুযায়ী করা হয়েছে সেগুলো তারা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিদর্শন করার কথা বলেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here