ডাকসুতে পুনঃভোট দাবিতে টিএসসিতে অবস্থান বামজোটের

0
335

খবর৭১ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন বাতিল ও পুনঃতফসিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছে বাম ছাত্রসংগঠনগুলার জোট প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য।পূর্বঘোষিত ধর্মঘট কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে তারা টিএসসিতে (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) অবস্থান নিয়েছে।

টিএসসিতে জড়ো হয়ে ‘প্রহসনের’ ডাকসু ভোট বাতিলের দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছে।এসময় ‘জালিয়াতির নির্বাচন মানি না, মানবো না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, পুনঃতফসিল ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।বেলা ১১টার দিকে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করা লিটন নন্দী।

তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি চলছে। আমরা ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছি। ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল চাই।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদও এই আন্দোলনে আছে জানিয়ে লিটন নন্দী বলেন, ডাকসু’র নবনির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নুরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।হ্যাঁ, ওরা আমাদের সঙ্গেই আছে। কোটা আন্দোলনের ছেলেরা আমাদের কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসছে।

এদিকে ছাত্রদের ভোটে নির্বাচিত ভিপি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরের বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করছে ছাত্রলীগ।তারা সকাল থেকেই উপাচার্যের ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নিয়ে আছে।সেখানে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করছে তারা।

সমমিলিয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে।সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতি কাজ করছে।শিক্ষকদের উপস্থিতিও অন্যদের তুলনায় কম।

বিদ্যমন পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়য়ে প্রবোশের মুখে প্রতিটি গেটে গাড়ি ও সাধারণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

নানা অনিয়মের অভিযোগ এবং অধিকাংশ প্যানেল প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা নুরুল হক নুর।

১১ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে ভিপি নির্বাচিত হন নুর। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পান ৯ হাজার ১২৯ ভোট।

সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সামাদ, চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়া জিএস পদে ছাত্রলীগের কেন্দ্রী সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ১০ হাজার ৪৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান পান ৬ হাজার ৬৩ ভোট।

এজিএস পদে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ১৫ হাজার ৩০১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুক হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৯৬ ভোট।

এছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন সাদ বিন কাদের চৌধুরী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন আরিফ ইবনে আলী। কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন লিপি আক্তার।

আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন শাহরিমা তানজিম অর্নি। সাহিত্য সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন মাজহারুল কবির শয়ন। সংস্কৃতি সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন আসিফ তালুকদার।

ক্রীড়া সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন শাকিল আহমেদ তানভীর। ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন শামস-ঈ-নোমান। সমাজসেবা সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন আখতার হোসেন।

ডাকসু নির্বাচনের ২৫টি পদের একটি বাদে অন্যগুলোতে ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন। শুধু সমাজসেবা সম্পাদক পদে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আখতার হোসেন জয়ী হয়েছেন।

এর আগে ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে জালভোট, ব্যালটবাক্স উধাও, কেন্দ্রদখল, কারচুরি এবং অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ ছাড়া প্রায় সব প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা পুন:তফসিল দাবিতে মঙ্গলবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়।পাশাপাশি এ নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ দাবি করে বাতিল দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়।

সোমবার দুপুর ১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বাম সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও স্বতন্ত্র জোট। ছাত্রদলও তাদের সমর্থন দিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। পরে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রহসন-জালিয়াতির এই নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণা করতে হবে। হলে নয়, নতুনভাবে ভোট হতে হবে একাডেমিক ভবনে। সেই নির্বাচনে ব্যালটবাক্স হতে হবে স্বচ্ছ।

পরে দুপুর দেড়টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। এ সময় ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। প্রশাসন শুরু থেকেই ভোট কারচুপিতে যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন হল থেকে সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। এভাবে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এ নির্বাচন বর্জন করছি।

এর আগে দুপুর ১টায় প্রহসনের ভোট আয়োজন করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ‘ঘৃণা’ জানিয়ে ডাকসু নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে চারটি প্যানেল। ওই চারটি প্যানেলের পক্ষে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ভোটে অনিয়ম, কারচুপি, জালভোট ও ছাত্রলীগের অধিপত্য সর্বত্র। এই ভোট বর্জন করে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি আমরা।

পরে এসব দাবি নিয়ে ভিসি ভবনে অবস্থান নিতে যান প্রার্থীরা। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও পৃথক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি ভবনে অবস্থান নিতে যান। সেখানে ভিসিকে না পেয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিসির বাসভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন ছাত্রনেতারা।

অবস্থান কর্মসূচিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন ছাত্রনেতারা। তারা বলেন— প্রহসনের নির্বাচন ছাত্রসমাজ মানে না। এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন, যে ভিসি ছাত্রলীগের সেই ভিসি চাই না।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here