ডলফিন কি সত্যিই বুদ্ধিমান?

0
519

খবর৭১: মাত্র ৫০ বছর ধরে এটা নেওয়া হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণিগুলোর মধ্যে ডলফিন অন্যতম। বিষয়টি এখানেই থামেনি। কেউ কেউ বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে মানুষ, শিম্পাঞ্জি আর ডলফিনকে একই কাতারে ফেলে দিয়েছেন। অথচ দিন এখন পাল্টে গেছে। কারণ বর্তমানে একাধিক গবেষক ও একটি সাড়া জাগানো গ্রন্থে দাবি করা হয়েছে, জলজ এ প্রাণিটি আসলে মোটেও স্পেশাল কিছু নয়। সূত্র: স্পাইজেল ম্যাগাজিন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডলফিন কমিউনিকেশন প্রকল্পের জীববিজ্ঞানী জাস্টিন গ্রেগ রাখঢাক ছাড়াই বললেন, ‘ধরে নেওয়া হয়, মুরগির বাচ্চা একেবারে হাবাগোবা প্রাণি। কথাটি ঠিক নয়। আবার ডলফিনকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণি ভাবা হয়। এটাও ঠিক নয়। মুরগির বাচ্চারাও ডলফিনের মতই স্মার্ট হতে পারে। বলতে পারেন, ডলফিনকে যতটা বুদ্ধি ভাবা হয়, প্রাণিটি ঠিক ততটা বুদ্ধিমান নয়।’

দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটার্সর‌্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রাণি স্নায়ুতত্ত্ববিদ পল ম্যাংগার আরও খোলাসা করে বললেন, ‘ডলফিনের রয়েছে বিশেষ ধরনের জটিল মস্তিষ্ক, এটা পরিশীলিত ভাষা ব্যবহার করে, এরা আত্মসচেতন এবং যন্ত্র ব্যবহার করতে পারে- এসব আসলে গালগপ্পো ছাড়া আর কিছু নয়।’

নিজের মতের পক্ষে পল ম্যাংগার যুক্তি দেন ‘পানির পাত্রে রাখলে সাধারণ একটা গোল্ডফিশও লাফ দিয়ে মুক্তি পেতে চায়। অথচ জাল দিয়ে ঘিরে ফেললেও ডলফিন নিজের স্বাধীনতা রক্ষায় লাফ দিয়ে জাল ডিঙানোর কথা কখনই ভাবে না। ডলফিন ব্যতিক্রমী বুদ্ধিমান- এটা একটা মিথ ছাড়া আর কিছু নয়।’

ডলফিনের সাঁতার দক্ষতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু মাছ-আকৃতির এ ছোট তিমিকে সবাই বোকা প্রাণিই ভাবতো। পঞ্চাশের দশকে চিকিৎসক ও পশু স্নায়ুতত্ত্ববিদ জন লিলিই প্রথম এ প্রাণীটির গায়ে বুদ্ধিমানের লেবেল সেঁটে দেন। তিনি জীবিত ডলফিনের গায়ে ইলেকট্রোড ছুঁইয়ে এটার নিউরন উত্তেজিত করতেন। একদিন একটি ডলফিন তার যন্ত্রে আটকে গিয়ে ভয়াবহ চিৎকার শুরু করে। লিলি এটাকে ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেন। কিন্তু অডিও রেকর্ডিং আগাগোড়া বাজিয়ে তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান, ‘ডলফিনটি তার নির্যাতকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে।’

দ্বিতীয় দফা একটি পরীক্ষা চালিয়ে জন লিলি সিদ্ধান্তে উপনীত হন, ডলফিন মানুষের মতই কথা বলতে পারে। উৎসাহী লিলি ডলফিন গবেষণায় আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে ছুটে যান। ওখানে হিপ্পি প্রজন্ম তাকে ‘আধ্যাত্মিক গুরু’ হিসেবে বরণ করে নেয়। তিনি তার হাফ-বেকড ডলফিন গবেষণার আলোকে একাধিক বইও লিখে ফেলেন। শুধু কি তাই, এক বইতে দাবি করে বসলেন, ‘ডলফিনরা পুরুষ ও নারীর চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান।’

আর যায় কোথায়? শিল্পীরা এঁকে দেখালেন, ডলফিন পানিতে নয়, মহাশূন্যেই সাঁতরে বেড়াচ্ছে! মানুষ বিশ্বাস করতে শিখলো ডলফিন হলো শান্তি ও শর্তহীন ভালবাসার রাষ্ট্রদূত। ওদের রয়েছে রোগ সারানোর আশ্চর্য ক্ষমতা! ওরা টেলিপোর্টের মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহে মহাকাশ বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারে!!

বিজ্ঞানীরা বুদ্ধিমত্তা মাপেন দেহের তুলনায় মস্তিষ্কের আয়তন নিয়ে। অর্থাৎ যে প্রাণির মস্তিষ্ক তার দেহের ওজনের অনুপাতে বেশি, সেই প্রাণিই বেশি স্মার্ট বা বুদ্ধিমান হবে। মানুষের মস্তিষ্কের ওজন ১৩০০ গ্রাম। এটা তার দেহের ওজনের প্রায় দুই শতাংশ। শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্ক তার দেহের ০.৯ শতাংশ, হাতির মস্তিষ্ক তার দেহের ওজনের ০.২ শতাংশ আর ডলফিনের মস্তিষ্ক তার ওজনের ০.৯ শতাংশ।

বোধহয় ডলফিনের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বাজার-চলতি ধারণাগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখার সময় এসে গেছে।

উল্লেখ্য, যদিও ডলফিন দেখতে মাছ মনে হয়, আসলে এরা মাছ নয়। তারা মাছদের মতো পানিতে সাঁতার কাটে বটে, তারা মাছদের মতো ডিম পাড়ে না। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণি। স্তন্যপায়ীদের রক্ত উষ্ণ বা গরম থাকে।

পৃথিবীতে প্রায় ৪০ প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। বেশির ভাগ ডলফিনের গায়ের রং কালো, বাদামি অথবা ধূসর। সবচেয়ে বড় ডলফিনের নাম কিলার হোয়েল। একটি কিলার হোয়েল প্রায় ৩২ ফুট লম্বা হয় এবং তার ওজন হয় প্রায় ৫৪০০ কিলোগ্রাম। আর সবচেয়ে ছোট ডলফিনের নাম মাওয়ি ডলফিন। এদের আকার প্রায় চার ফুট আর ওজন প্রায় ১১০ পাউন্ড হয়।

সাধারণ ডলফিন এবং বোটলনোজ বা বোতলনাক ডলফিন এমন এক ধরনের ডলফিন যাদের চিড়িয়াখানা বা অ্যাকুরিয়ামে দেখা যায়। আবার সমুদ্রে স্পিনার নামে এক ধরনের ডলফিন দেখা যায়, যারা সুমদ্রে বাতাসের উপর লাফিয়ে ডিগবাজি দেয়।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here