ঠাকুরগাঁওয়ে ২৭৭ বিঘা খাস জমি-পুকুর দখল

0
774

সোহেল পারভেজ,ঠাকুরগাঁও : বে- গ্রুপের বেচিক’স নামে একটি কথিত কোম্পানি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে প্রায় ২শ’৭৭ বিঘা খাসজমি ও পুকুর দখল করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। তবে কোম্পানির মালিক একটি এনজিওকে এ বিষয়ে দোষারোপ করছে।

জানা গেছে,সংশিষ্ট প্রায় ২শ’ ৭৭বিঘা জমির অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের দস্তমপুর ও আগ্রাগরিনাবাড়ি মৌজায় । ১নং খতিয়ানের ১৪৫ জেল.এল নম্বরের ৪৩৬ ও ৮০৬ এই দুই দাগের ১’শ ৪০ বিঘা এবং ১৪৬ জেল এল নম্বরের ৬/১ খতিয়ানের ৭৪৬ দাগের১শ’৩৭ বিঘা কৃষি-অকৃষি জমি রয়েছে । এর মধ্যে রাস্তা, দেবস্থান, বিল-পুকুর, জলাশয় ও ঘরবাড়ি রয়েছে । এই সম্পত্তির মালিক ছিলেন বিলুপ্ত পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের দিনাজপুর কালেক্টর ।বর্তমান বাংলাদেশ সরকার । এ দুই’ মৌজার অবস্থান ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা। ভারতের ওপারে মালং আর বাংলাদেশের দানাজপুর গ্রাম । আগ্রা -গরিনাবাড়ি ও দস্তমপুর মৌজার ৩০বিঘা ১৮ শতকের ধধরা বিল-পুকুর দু:স্থ মুক্তিযোদ্ধারা সরকারকে নামমাত্র মুল্যে সেলামি দিয়ে মাছ চাষ করে ।এ পুকুরটিও ওই কোম্পানি দখল করে নিয়েছে ।এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছে । দস্তমপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন আগ্রাগরিনাবাড়ি’র সেদুরাম রায় ও অনিলের ৫৬ শতক জমি কিনে জমি দখলের ফাঁদ বসিয়েছে কোম্পানিটি। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) আসনের আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক বলেন,তার সময় দস্তম পুর ও আগ্রাগরিনা বাড়ি মৌজায় টি-আর ও কাবিখা প্রকল্পের আওতায় পুকুর খনন করা হয়। এ পুকুর মুক্তিযোদ্ধারা মাছ চাষ করে। তবে ঐ মৌজার জমির মালিক রয়েছে। অংশীদাররা ইতিমধ্যে খাজনা পরিশোধ করেছেন।
ভূমি উন্নয়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে এ সম্পত্তির দাবিদার চৌধুরী গংদের ওয়ারিশরা খাজনা পরিশোধের জন্য এডিসি(রাজস্ব)-এর কাছে আবেদন করে । এর প্রেক্ষিতে ঠাকুরগাঁওয়ে কর্মরত সাবেক এডিসি (রাজস্ব) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস এক আদেশে উলেখ করেন- ওই জমির প্রতিবন্ধকতা না থাকলে খাজনা নেয়া যেতে পারে । এ আদেশের ওপর ভর করে ইউনিয়ন ভুমি উন্নয়ন সহকারী কর্মকর্তা মোতাহার রশিদ (বর্তমানে অবসরে) আবেদনকারীদের কাছে খাজনা নেয় । এর পর জমির মালিকানা জড়ালো ভাবে দাবি করছে চৌধুরী গংরা । বীমা কর্মী এনামুল হক বলেন খাজনা পরিশোধের রশিদ দেখিয়ে জমির দাবিদাররা জমিগুলো স্থাণীয়দের বর্গা দেয় । এসব কাগজ দেখিয়ে জাবরহাটের আনোয়ার চৌধুরী ও আনিসুর মাষ্টার সহ কয়েকজন ওই কোম্পানির কাছে কিছু জমি বিক্রি করে ।সূত্র জানায়, বীমাকর্মী এনামুলের বাবা আব্দুল কাফি কোম্পানির কর্মী ও জমি বিক্রির ঘটক ।দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জের তারেক রেজার (সাবেক আমলা) মাধ্যমে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হন কাফি । তিনি এই জমি বিক্রির ঘটকের কাজে জড়িত । কাফির ছেলে এনামুল হক জানায়,এ কোম্পানির মালিক শামসুর রহমান সাবেক আমলা । তিনি ভূমি মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। সরকারের সম্পত্তি রক্ষায় পীরগঞ্জ উপজেলার সাবেক এসিল্যান্ড সফিকুল ইসলাম ওই আদেশের বিরুদ্ধে এডিসি(রাজস্ব) বরাবর পুন:বিবেচনার জন্য রিভিউ করেন। সাবেক এডিসি(রাজস্ব) আব্দুল ওয়াহেদ সরকারের এ সম্পত্তি টিকিয়ে রাখতে তা’ শুনানী অন্তে ওয়ারিশগণের আবেদন নথিজাত করেন । এরপর ওয়ারিশগণ নতুন করে খাজনা পরিশোধের জন্য এডিসি(রাজস্ব) কাছে ফের আবেদন করে ।তবে খাজনা নেয়নি সংশিষ্ট বিভাগ।
গত ১৪’জুন খাস জমি জলাশয় দখলের প্রতিবাদে আগ্রা গরিনাবাড়ি ধনীপাড়া মন্দির প্রাঙ্গণে ভুমিহীনদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । সমাবেশের প্রধান অতিথি আওয়ামীলীগ নেতা ও হাজীপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম । সিপিবি’র নেতা এনামুল হক দুলাল বলেন, এ কোম্পানির মালিক প্রভাব খাটিয়ে ভূমি হীনদের উচ্ছেদ করে জমি দখল করছে। আগ্রা গরিনা বাড়ি গ্রামের হরিপদ মন্ডল বলেন, তারা জানে এই জমি খাস। এ হিসেবে দরিদ্র ভূমি হীনরা ঐ জমি গুলো চাষাবাদ করছে। তবে ঐ গ্রামের নবাব আলী বলেন,দীর্ঘদিন জমি পরে থাকায় শূধূ ভূমিহীন নয়,অনেক প্রভাব শালী ও বিত্তবানরা ঐ জমি গুলো দখলে নিয়েছে।
ভূমিহীনদের নেতা নরেন্দ্র নাথ রায় অভিযোগ করে বলেন, দূর্ণীতিপরায়ন সরকারি কর্মকর্তাদের লোভের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি এভাবে বেহাত হচেছ ।্একটি বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডিএ জানায় এ উপজেলায় ৮হাজার ৪শ’ বিঘা খাস জমি রয়েছে । জমিগুলো কব্জায় নিতে মরিয়া হয়েছে প্রভাবশালীরা ।
বৈরচুনা ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন সহকারি কর্মকর্তা আনিসুল হক বলেন, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় তারা কাজ করছে । পীরগঞ্জ ভূমি জরিপ অফিসের সার্ভেয়ার আব্দুস সালাম জানান, হালনাগাদ জরিপে দস্তমপুর ও আগ্রা গরিনাবাড়ি মৌজার ওই জমি-বিলপুকুর আবারও খাসখতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে । ঠাকুরগাঁও আইনজীবি সমিতির সদস্য অ্যাড. ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, ১৯৫০সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাসত্ব আইনে ওই সম্পত্তির মালিক সরকার ।পীরগঞ্জ উপজেলা এসিল্যান্ড সারওয়ার র্মোশেদ বলেন যেহেতু বিষয়টি অস্পট এবং বিচারাধীন । সেহেতু চৌধুরী গং দের আবেদন মঞ্জুর হয়নি । তিনি জানান, ঘুষ খেয়ে কারও পক্ষ নেয়া যায়। তবে জমির মালিকানা দেয়া সম্ভব নয়। এদিকে গত ১৩ জুন সরকারের সম্পত্তি রক্ষায় এডিসি(রাজস্ব) সরেজমিন পরিদর্শন করেন বলে জানান এসিল্যান্ড। এ বিষয়ে এডিসি (রাজস্ব) আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সহকারী জানান,স্যারের স্ত্রী অসুস্থ তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।
উলেখ বে-গ্রুপ উপজেলার সেনগাঁ’ও ইউনিয়নের আগে বৈরচুনা ইউনিয়নের জগন্নাথপুর মৌজার খেঁকীডাঙ্গা গ্রামের ৮শ’ ৩১ বিঘা খাস জমি দখল নিতে ধাপে ধাপে ম্যানেজ করছে । ওই জমিতে ২শ’ভূমিহীন পরিবার যুগ-যুগ ধরে বাস করছে । তাদের উঠিয়ে দিতে কোম্পানিটি পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ ভূমিহীনদের।
এ বিষয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে বে-গ্রুপের চেয়ারম্যান শামসুর রহমান বলেন, বৈধ ভাবে তিনি জমি কিনেছেন। তিনি আরও বলেন,সিডিএ নামে একটি এনজিও ও কিছু লোক উদ্দেশ্য ভাবে গুজব ছড়িয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here