টার্কি মুরগে স্বাবলম্বী বাহুবল’র ইমরুল

0
297

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বাহুবল উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা শংকরপুর। এক যুগ আগেও গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ছিল কৃষিজীবী। ফসলাদি ভালো না হলে বছরজুড়ে অভাব লেগে থাকত। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। পুকুর-জলাশয়ে মাছ চাষ, মাছের সঙ্গে হাঁস পালন ও মোরগের খামার স্থাপন এবং সবজি চাষাবাদের মাধ্যমে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে।
এ গ্রামের বাসিন্দা হাজী আইয়ুব আলীর ছেলে ইমরুল কবির ক্রমেই একজন আদর্শ টার্কি মোরগ খামারী হিসেবে নিজেকে অনুকরণীয় করে তোলছেন। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ইমরুল অক্লান্ত শ্রম ও মেধা দিয়ে নিজের পরিবারে ফিরিয়ে এনেছেন স্বচ্ছলতা। পাশাপাশি গ্রামবাসীকে শেখাচ্ছেন চাষবাস ও পশু-পাখি পালনের নানা কৌশল।
ইমরুল জানান, ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছিলেন বাবা আইয়ুব আলী নিজেদের অল্প কৃষি জমিতে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে অনেকটা টানাপুড়েনের মধ্য দিয়ে পরিবারের খরচ বহন করছিলেন। বাবার এমন কষ্ট দেখে নিজে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেই নেমে পড়ি জীবিকার তাগিদে। বাড়ির পাশের পৈত্রিক জমিতে প্রথম অবস্থায় ক্ষুদ্র পরিসরে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচ শতাধিক বাচ্চা নিয়ে পোল্ট্রি ফার্মের খামার চালু করি। সেখানে প্রথম ধাপে লাভবান হয়ে আরো ১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ১ হাজার বাচ্চা তোলে খামারটির পরিসর বড় করে তুলি। তাতে লাভও হয় অনেক। এতে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
ইমরুল কবির টার্কির সন্ধানে বের হন এবং সিলেট থেকে ১১শ’ টাকায় আটটি টার্কির ডিম ক্রয় করেন এবং দেশীয় মুরগি দ্বারা তা দিয়ে ৭টি বাচ্চা ফুটাতে সক্ষম হন। এর মধ্যে ৪টি পুরুষ ও ৩টি নারী টার্কি ছিল।
ইমরুল আরো জানান, বর্তমানে মাংসের চাহিদা পূরণে গরু, মুরগি ও হাঁসের খামারের দেখা মেলে অহরহ। কিন্তু মুরগির মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য অধিক মাংসসমৃদ্ধ টার্কি জাতের মুরগি পালনের বিষয়টি আমার কাছে অধিক লাভজনক বলে মনে হয়েছে। পাশাপাশি টার্কি মুরগি পালনে ব্যয়ও হয় কম। টার্কি মোরগ সাধারণতঃ ৩০ সপ্তাহ পর থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি টার্কি বছরে ৮০ থেকে ১০০টি ডিম দেয়। আবার ২৮ থেকে ৩০ দিনেই এই ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন হয়। ৩ থেকে ৪ মাস বয়স হলেই একটি টার্কি মাংসের জন্য বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। দেশি হাঁস-মুরগির মতো সাধারণ নিয়মে পালন করলেও ৩ থেকে ৪ মাসে প্রতিটি টার্কি গড়ে ৫ থেকে ৬ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। খোলা বা আবদ্ধ উভয়ভাবেই টার্কি পালন করা যায়। দেশি মুরগির মতোই টার্কি মুরগিও খাবার গ্রহণ করে। টার্কি পালনে অতিরিক্ত কোন খাবার দিতে হয় না। ঘাস, লতা-পাতা ও কচুরিপানাই তাদের নিত্যদিনের খাবার।
টার্কি মুরগি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারে। তবে টার্কি না দিয়ে ফোটানোই উত্তম। কেন না টার্কি ডিমে তা দিলে পুনরায় ডিম পারতে সময় ক্ষেপন করে। এর বদলে দেশি মুরগি অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায়। টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হিসেবে নামীদামি হোটেলে সরবরাহ হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত টার্কি মুরগি পালন করে গত দশ মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকারও বেশি আয় করেছেন বলে তিনি জানান।
তার কাছে থেকে টার্কির বাচ্চা নিয়ে সফল হয়েছেন আশপাশসহ উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি। তারা বাড়িতে ছোট আকারেই পালন করছেন এ টার্কির মুরগি।
তাছাড়া তিনি তার বসত বাড়িতেই গরুর খামার গড়ে তোলেছেন। খামারে বর্তমানে ১০টি ষাঁড় ও গাভী রয়েছে। গাভী থেকে দৈনিক ৪ লিটার দুধ সংগ্রহ করে থাকেন তিনি। পাশাপাশি গরুর গোবর দ্বারা বায়োগ্যাস প্লান্ট চালু করা হয়েছে। যা রান্নার জন্য বিকল্প জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গরু বিক্রি করে বছরে দুই লাখ টাকারও বেশি আয় হচ্ছে বলে ইমরুল জানান।
পৈত্রিক কৃষি জমিতে বরবটি, লাউ, শিম, করলা, টমেটো, লাল শাক, পেঁপে, কলা, আলু, বেগুন, মিষ্টি কোমড়া প্রভৃতি চাষ করে পরিবারের সবজি চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন। এতে মাসে ৫ হাজার টাকারও বেশি উপার্জন হয়।
আত্মপ্রত্যয়ি যুবক ইমরুল কবির বলেন, এ পর্যন্ত পথচলায় তার কোন প্রতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। বই, পুস্তক, পত্র-পত্রিকা পড়ে এবং টেলিভিশনসহ বিভিন্ন সমাজিক মাধ্যমে প্রচারিত প্রমাণ্য চিত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত ধারণা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা পেলে তিনি টার্কি মোরগ, গরু-ছাগল ও মাছ চাষাবাদের সমৃদ্ধ খামার স্থাপনে আগ্রহী।
পশুপাখি পালন ও চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়া ইমরুলকে দেখে এখন এলাকার অনেক বেকার যুবক-যুবা মহিলা টার্কি মুরগিসহ ব্রয়লার মোরগ, গরু, ছাগল ও হাঁস ইত্যাদির খামার স্থাপনে দিকে ঝুঁকছেন।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here