জয়পুরহাটে মুক্তিযুদ্ধ!

0
404

মোঃ অালী হাসান: জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ  ১৯৭১ সালের ১মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে
সারাদেশের ন্যায় জয়পুরহাটের মানুষও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৩মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ ও হরতালের ডাক দেন। ৩মার্চ হরতাল চলছিলো।
দিনটি ছিলো শুক্রবার। সেই দিন সারা দেশের ন্যায় জয়পুরহাটেও হরতাল বিক্ষোভ মিছিল ও সভা আনুষ্ঠিত
হয়। শহরের সরকারি ডাক্তার খানার মাঠ (বর্তমান শহীদ ডাক্তার আবুল কাশেম ময়দান) হতে মহাতাব উদ্দীন মন্ডলের নেতৃত্বে সকাল ১০টায় একটি বিরাট মিছিল বের হয়। শহরের সব মানুষ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে যেন মিছিলে যোগ দিয়েছেলেন। সেই মিছিলে ব্যবসায়ী,
চাকুরিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, জনতা সব বয়সের মানুষ ছিলো। সবার মুখেই গগনবিদারী সেই শ্লোগান পদ্মা,
মেঘনা যমুনা/তোমার আমার ঠিকানা, বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন করো। শ্লোগানের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন,আনিছুর রহমান, আবুল কালাম, কে, এম ইদ্রীস আলী মন্ডল সহ অনেকে। ৭মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষন রেডিওতে প্রচার হবার পর থেকে জয়পুরহাটের মানুষও মানসিকভাবে যুদ্বের
প্রস্তুতি নিতে খাকে। ১৩ মার্চ আব্দুল মতলেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগ নেতা কাফেজ উদ্দীন মন্ডলকে অাহব্বায়ক ও মহাতাব উদ্দীন মন্ডলকে যুগ্ম অহবায়ক করে হানদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য জয়পুরহাট মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। ১৫ মার্চ জয়পুরহাট ডিগ্রী কলেজ মাঠে মুক্তি যুদ্ধের ট্রেনিং শুরু হয়। ট্রেনিং দিচ্ছিলেন মুক্তিযুদ্ধেও তৎকালীন কমান্ডার সাকিল আহম্মেদ। ২০ এপ্রিল
মঙ্গলবার পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কয়েকটি জীপে করে পাঁচবিবিতে এসে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করে সেই দিনই চলে যায়। ২৪ এপ্রিল সান্তাহার থেকে
ট্রেন যোগে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী জয়পুরহাটে এসে জয়পুরহাট সদর থানা ও গারিয়াকান্ত এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চালায়।বাটার মোড়ে মুকুর দোকানে বড় ভাই
আবদুস কে গুলি কওে হত্যা কওে হানাদার বাহিনী, মিনাষ্টোরে মিনা মোখলেছের ছোট ভাইকে গুলি কওে হানাদার বাহিনী, এছাড়াও বিশিষ্ঠ হোমিওপ্যাথিক
চিকিৎসক আবুলকাসেম, বাবুপাড়ার আওমীলীগ নেতা আ: মালেককে ধওে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২৬
এপ্রিল জয়পুরহাট সদর উপজেলার কড়ই ও কাদিপুর গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় ও তাদের দোসরদের সহায়তায় বাড়ী-ঘর থেকে ধরে ধরে এন মাঠে লাইনে দাড় করিয়ে ৩৭১জন সংখ্যা লঘুদের গুলি করে ও বেওনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। জয়পুরহাট শহরে তারা লুটপাট
চালায় এবং বিভিন্ন বাড়িতে আগুন জালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী পাগলাদেওয়ান গ্রাম দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা
থেকে এসে শরনার্থীরা বর্ডার পাড় হয়ে ভারতে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছিলো। ঠিক সেই সময় পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে তাদের হত্যাযজ্ঞ চালায়। এছাড়াও
পাগলা দেওয়ান গ্রামের স্থানীয় লোকজনদেরও তারা হত্যা করে। এভাবে কয়েকদিনে সোখানে হানাদার বাহীনী কয়েক হাজার শরণার্থী ও গ্রামবাসীকে হত্যা করে। প্রথমে হানাদার বাহিনী সকালে সান্তাহর থেকে জয়পুরহাটে এসে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সন্ধ্যার আগেই আবার সাšস্তাহারে চলে যেত। কিছুদিন এভাবে চলার পর
তারা স্থায়ীভাবে জয়পুরহাটে ক্যাম্প করে ৯মাস নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। তখন জয়পুরহাটের মুসলীম লীগ নেতা আবদুল আলীম পিস কমিটির চেয়ারম্যান
ছিলেন। । যুদ্ধাপরাধের বিচারে তার আমৃত‚্য যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন।
সীমান্তবর্তী গ্রাম পাগলা দেওযানে ছিলো
হানাদারদের শক্তঘাটি। ৯মাসে মুক্তিযোদ্ধারা পাগলা দেওয়ান, পাহাড়পুর ও পাঁবিবির কড়িয়াতে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মূখযুদ্ধ করে। এছড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিবাহিনী গেড়িলা আক্রম চালায়। ব্রীজ কালভার্ট উড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ ৯মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবুল নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা জয়পুরহাট শহরের ডাকবাংলো
চত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এদিকে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাগলা দেওয়ান বদ্ধভূমি, কড়ই-কাদীপুর বদ্ধভূমিতে সরকারি উদ্যোগে স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়েছে। কালেকটরেট চত্তরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধদের নামফলক তৈরী করা হয়। জয়পুরহাট শহরের ডা. আবুল কাশেম ময়দানে শহীদ মিনার এর সাথে লাগোয় ৭১এর শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ নির্মান করা
হয়েছে। জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের জয়পুরহাট শাখার উদ্যোগে সরকারি (জেলা পরিষদের) অর্থায়নে দেশের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের অদিবাসী
ভাস্কর্য জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের নন্দাইল গ্রামে নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক আমিনূল হক জানান জয়পুরহাট সরকারি ডিগ্রী কলেজের
পূর্ব পাশে, বারোঘাটি পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে, খঞ্জনপুর কাচারী প্রাঙ্গনে, কুটিবাড়ী ব্রীজের পাশে, খঞ্জনপুর মিশনে, মঙ্গলবাড়ী পাথুরিয়া রাস্তার পাশে সহ জেলায়
৪০টিরও অধিক গণ কবর ও বদ্ধভূমি রয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলি সঠিকভাবে চি্িহ্নত করে স্মৃতি ফলক নির্মান করা প্রয়োজন।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here