জয়পুরহাটে ইটভাটার গ্যাসে ৯ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট

0
270

খবর৭১:মোঃ অালী হাসান: জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ বিগত তিন বছর ধরে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারণে বোরো ধানের ক্ষতি হলেও কৃষকরা পাচ্ছেন না এর কোনো সুবিচার। এবারো বিষাক্ত গ্যাসের কারণে প্রায় ৬৫ বিঘা জমির বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। জানা যায়, জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের শালপাড়া-কদমতলী পাকা সড়কের দক্ষিণ পাশে
রঘুনাথপুর মৌজায় মেসার্স হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স ব্রিকস ফিল্ড রয়েছে। ইটভাটার তিন দিকে বোরো ধানসহ ফসলি জমির মাঠ। এক সপ্তাহ পর বোরো ধান ঘরে তোলার
কৃষকের স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আট বছর আগে ওই এলাকার ফসলি জমিতে ইটভাটা বানিয়ে ইট তৈরি করে আসছেন ইটভাটার মালিক হারুন অর রশিদ। ওই ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস আর ধোঁয়ায় বোরো চাষিদের এবারো বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত তিন বছরে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারণে ওই এলাকার প্রায় দুইশ বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকরা অভিযোগ করেও পাননি এর কোনো সুবিচার। উল্টা জুটেছে হুমকি-ধমকি
ইটভাটা মালিকের পক্ষ থেকে। ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, গত
তিন বছর থেকে ওই ইটভাটার কারণে তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। ইট ভাটার ধোঁয়া, তাপ আর বিষাক্ত গ্যাসে বোরো ধান চাষ করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। গত বছর বোরো মৌসুমে ওই ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস, তাপ আর ধোঁয়ায় ভাটার দক্ষিণ ও পশ্চিম
দিকের জমির বোরো ধান পাকার কয়েক দিন আগে বিষাক্ত গ্যাস, তাপ আর ধোঁয়ার কারণে প্রায় একশ’ বিঘার জমির ধান নষ্ট হয়। বোরো চাষিদের অভিযোগ ভাটার মালিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে সামান্য কিছু টাকা দিলেও অনেকেই সে টাকাও পাননি। এবারো ৬০/৬৫ বিঘা জমির বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। প্রতি বছর কষ্ট করে ধান আবাদ করে ইটভাটার কারণে ধান নষ্ট হবে, দেশে কি কোনো বিচার নাই!
এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে স্থানীয় সংস্থা থেকে ঋণ সহায়তায় বোরো ধান আবাদ করে আর কয়েক দিন পর ধান কাটার আশায় বুক বাঁধছেন এমন সময় ইটভাটার কারণে সব শেষ বলে জানালেন বালিয়াতর গুচ্ছগ্রামের বিধবা কিষাণী আয়মা খাতুন।
বালিয়াতর গ্রামের রফিকুল ইসলামের দেড় বিঘা, মামুনুর রশিদের ১০ কাঠা, থিপুর গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক শফিকুল ইসলামের ১৫ কাঠা, রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের
দেড় বিঘা সহ অনেক কৃষকের বোরো ধান বিষাক্ত গ্যাস, তাপ ও ইটভাটার ধোঁয়ায় বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন-রাত পরিশ্রম করে আবাদ করার পর ধান পাকার কয়েক দিন আগে এ ভাবে ভাটার গ্যাস, তাপ আর ধোঁয়ায় ধান নষ্ট হবে এটা তো মানা যায় না।
শালপাড়া-কদমতলী সড়কে প্রায় এক হাজার আমগাছ। আমের জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ১৫ হাজার
টাকা এক বছরের জন্য লীজ নেন। ইটভাটার ধোঁয়ায়, গ্যাস ও তাপে তার ৫০-৬০টি আমগাছের আম নষ্ট হয়েছে। আম কালো হয়ে পড়ে যাচ্ছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলাম বলেন, গত ২০ এপ্রিল রাত তিনটায় বিষাক্ত গ্যাস, তাপ ও ইটভাটার ধোঁয়ায় ওই ভাটার পশ্চিম ও উত্তর পাশের
বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছর ওই ইটভাটায় একইভাবে
অনেক জমির বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ায় ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়া হয়েছিল। গত বছর বিষয়টি তদন্ত করে
ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বগুড়ার পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো
আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে এবার প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন ইউএনও মো. আমিনুল ইসলাম। অপরদিকে, বগুড়ার পরিবেশ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কেমিস্ট আসাদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি
সাংবাদিকদের জানান, ওই ইটভাটার মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে ভাটার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করেননি। তা ছাড়াও জয়পুরহাট ইটভাটা মালিক সমিতি হাইকোর্টে একটি মামলা করার কারণে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা। মেসার্স হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স ইটভাটার মালিক হারুন অর রশিদ বলেন, সামান্য কিছু জমির বোরো ধান নষ্ট
হয়েছে। গত বছরের মতো এবারো কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিবেন বলে তিনি জানান।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here