জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে জলাতঙ্ক রোগের গুজবে দিশেহারা এলাকাবাসি,

0
286

মোঃ অালী হাসান: জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গন্ডিমসারা গ্রামে কুকুরের কামরে প্রভাষ চন্দ্র দাস নামে এক
ব্যাক্তি মারা যাওয়ার পর গনক কবিরাজ ওই গ্রামে এসে গ্রামবাসির মধ্যে গজব ছড়ান যে, মৃত প্রভাস চন্দ্রের বিষ প্রবেশ করেছে এই গ্রামে শিশুসহ সবার শরীরেই। এমন গুজবে প্রান ভয়ে দিশেহারা নিরীহ গ্রামবাসী নিচ্ছেন ঝার-ফুক, পানি পড়া, গুড় পড়াসহ মান্ধাত্তা যুগের নানা
অপচিকিৎসা। আর শিশুদের স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না তাদের অভিবাকরা। এমন বেকায়দা পরে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের এখন গলদঘর্ম অবস্থা। সরেজমিনে জানা গেছে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অজো পাড়াগাঁ গন্ডিমসারা গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই নিরীহ আর সহজ-সরল প্রকৃতির হিন্দু জনগোষ্ঠীর সাধারন মানুষ। এই গ্রামের প্রভাষ চন্দ্র নামে এক ব্যাক্তিকে ৪/৫ মাস আগে কুকুরে কামরালে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী সোমবার জলাতঙ্ক রোগে মারা তিনি।
তার মারা যাওয়ার পর এক গনক কবিরাজ ওই গ্রামে এসে হাতের পাতা চালিয়ে জানান যে, এই গ্রামের শিশু, নারী-পুরুষসহ প্রায় সবার শরীরে প্রবেশ করেছে মৃত প্রভাষের কুকুরের বিষ। গন্ডিমসারা গ্রামের শিবেন দেবনাথ, বাচ্চু মন্ডল, মিলন
ইসলামসহ গ্রামবাসীরা বলেন, গনক কবিরাজের এমন গুজবে দিশেহারা গ্রামবাসী ঝার-ফুঁক, পানি পড়া, গুড়
পড়াসহ নানা সেকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কবিরাজের কথা মত তাদের অধিকাংশের শরীরে এরই মধ্যে বিষ প্রবেশ করেছে, এ অভিশাপ থেকে বাঁচতে হলে তন্ত্রমন্ত্র বলে বিষ ঝারতে হবে। তা না হলে অল্প
দিনের মধ্যে ওই অভিশপ্ত বিষক্রিয়ায় আক্রান্তরা মারা যাবে। তাই তারা তাদের সন্তানদের বিষযুক্ত বাতাস থেকে রক্ষা করতে বাড়ির বাইরে বের হতেও দিচ্ছেন না। গন্ডিমসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুনা কান্তি সরকার জানান, এ কারনে অভিবাকরা তাদের শিশুদের স্কুলে যেতে না দেওয়ায় ওই বিদ্যালয়সহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশঙ্কাজনক ভাবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।
গন্ডিমসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রিফাত হাসান, পার্শ্ববর্তী গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অনিক দেবনাথ,
গোপীনাথনাথপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেনির ছাত্রী নুপুর রানী সরকারসহ গন্ডিমসারা গ্রামের অনেক শিশুরা
জানান, হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো বিষ ক্রিয়ার ভয়ে মা-বাবারা স্কুলে পাঠাতে দেন না, সারা দিন বাড়িতে থাকতে বলেন।
মৃত প্রভাষের স্ত্রী অর্চনা রানী, ছেলে পরিতোষ কুমার ও পরিতোষের স্ত্রী রতœা রানী জানান, একদিকে জলাতঙ্ক রোগের গুজবে মৃত্যু ভয়ে গ্রামবাসিদের নির্ঘূম
অবস্থা, অন্যদিকে মৃত প্রভাষের পরিবারের সাথে ওই গ্রামের মানুষরা সামজিক যোগাযোগটুকুও বন্ধ করেছে
কূ-সংস্কারের কারনে। গুজবের প্রভাবে সেকেলে ভাবনায় মৃত প্রভাষের পরিবারটি কার্যত হয়ে পরেছেন এক ঘরে। তবে শত চেষ্টা করেও দেখা মেলেনি সেই অভিযুক্ত গনক কবিরাজের। ধর্মগুরু আর কবিরাজের প্রতি চরম ভক্তি- শ্রদ্ধার কারনে এখনো তার পরিচয় জানাননি গ্রামবাসী। আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রাধে শ্যাম আগরওয়ালা ও আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, এ অবস্থায় চরম উৎকন্ঠায় পরে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল গ্রামবাসিদের আশ্বস্থ করতে জনসচেতনতা মূলক
কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন গুজব কবলিত গ্রাম জুড়ে। পাশাপাশি গুজব ছড়ানো সেই কবিরাজের খোঁজেও মাঠে রয়েছে প্রশাসন বলে তারা জানান।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here