“জোর যার জমি তার” জমি হারিয়ে নিঃস্ব হামিদ

0
294
Exif_JPEG_420

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ কাগজপত্র না থাকলেও “জোর যার মুল্লুক তার” এখন “জোর যার জমি তার” ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ঘনেশ্যাম গ্রামে। সেই গ্রামের সহজ সরল নীরহ কৃষক আব্দুল হামিদ (৫৬)। ১৯৮০ সালে নিজ নামে ১একর ৩৯ শতক জমি কেনেন। জমি কেনার পর যখন তিনি দখলে গেলেন, তখন ওই একই এলাকার আব্দুল বারেক গং দলবলে এসে আব্দুল হামিদকে জমি ছেড়ে দখল বুঝিয়ে দিতে বলেন। নীরহ কৃষক আব্দুল হামিদ পড়েন বিপদে। তিনি যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন, তারা কাগজপত্র ও দলিল-দস্তাবেজ দেখিয়ে প্রমাণ দিলেন যে, এজায়গায় কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু প্রভাবশালী দলটির নিকট থেকে দখল জমির ছাড়াতে পারছেন না কিছুতেই। আব্দুল হামিদ বুঝতে পারছেন না, এ মুহূর্তে তার কী করা উচিত। জমির দখল নিয়ে ৪/৫টি পাল্টা-পাল্টি মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। এছাড়াও পরপর কয়েকবার জমি দখলের চেষ্টাও করেন ওই দলটি। শেষ পর্যন্ত আঃ হামিদেও জমি বেদখল হয়ে যায়। জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব তিনি। বছরের পর বছর জমি দখল নিয়ে কোর্ট-কাছারিতে দৌড়াতে দৌড়াতেও তার জীবন বিপন্ন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তো ঝুলছে। পর্যায়ক্রমে মামলার ধাপ কবে পেরিয়ে যাবে, মিলবে প্রতিকার এ যেন এক দুর্বিষহ প্রতীক্ষা আঃ হামিদের।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘনেশ্যাম গ্রামের মৃতঃ বাহার উদ্দিনের পুত্র সহজ সরল নীরহ আব্দুল হামিদ। ১৯৮৮ সালে চুড়ান্ত রেকর্ড ভুক্ত বি.আর.এস খতিয়ান নং- ৪৮৩, ২১৯৭ ও ২১০৪ মূলে নিজ নামে ১ একর ৩৯ শতক জমি কেনেন। সরকারের রাজস্ব খাজনা পরিশোধ করে নিজনামে খারিজ করিয়া ভোগ দখল করছেন। যার খারিজ কেস নং-৫৯৪/০৯-১০ইং, হোল্ডিং নং-২০৮৭। কিন্তু আব্দুল হামিদের কোন পুত্র সন্তান না থাকার সুবাদে একই এলাকার আজগার আলীর পুত্র প্রভাবশালী ডাঙ্গাবাজ, মামলাবাজ ও পরধনলোভী আঃ বারেক (৪০), খালেক (৩৫), মালেক (৩০) গংরা ওই সম্পত্তি আত্মসাতের লিপ্ত হন। ২৩ জুলাই ২০১৭ইং তারিখে উক্ত সম্পত্তির উপর নীরহ কৃষক আব্দুল হামিদ বসতভিটা করে জীবন যাপন করেন। তাকে ভিটামাটি ছাড়া করতে প্রভাবশালী গংরা জোর করে ট্রাক্টর দিয়ে জমি হালচাষ করিয়া বে-দখল করার চেষ্ঠা করেন। স্থানীয়দের বাঁধার মূখে বে-দখলে ব্যর্থ হয়ে আব্দুল হামিদকে মারপিটসহ পঙ্গু করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত আব্দুল হামিদের নিজের জায়গাটুকু বেদখল হয়ে যায়। জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব সহজ সরল নীরহ কৃষক আব্দুল হামিদ ০৬/০৭/২০১৭ইং তারিখে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কালীগঞ্জ অ ল, আদালত, লালমনিরহাটে তুষভান্ডার ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘনেশ্যাম গ্রামের প্রভাবশালী, ডাঙ্গাবাজ, মামলাবাজ ও পরধনলোভী মৃতঃ আজগার আলীর পুত্র আঃ বারেক (৪০), খালেক (৩৫), মালেক (৩০), সহিদ আলীর পুত্র বাবু মিয়া (৩৮), আঃ বারেকের পুত্র আঃ মজিদ (২৬), আজিত মিয়া (২৩), জাহেদুল ইসলাম (২০), আবুল কাশেমের পুত্র হাবিল আলী, ছকির আলীর পুত্র শাহাজালাল (৩৫), মৃত: বাহার উদ্দিনের পুত্র আজগার আলী (৬০), ইয়াকুব আলীর পুত্র আঃ আউয়াল, মৃত: দাউদ আলীর পুত্র শহিদুল (৩৫), ফরহাদুল (৪০) ও ফয়েজ উদ্দিনের পুত্র আমজাদ গং এর বিরুদ্ধে ফৌ: কা: বি: আইনের ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যার পিটিশন নং-১২৪/১৭ (ক)। যার তফশীলভুক্ত জমি জেলা-লালমনিরহাট, থানা-কালীগঞ্জ, মৌজা-দক্ষিণ ঘনেশ্যাম, জে,এল,নং-৩০, বি,আর,এস খতিয়ান নং-৪৮৩, ভুক্তদাগ নং-৯৪৫৮ জমি ১৮ শতক। দাগ নং-৯৪৬০ জমি ১২৭ শতক। দাগ নং-৯৪৬২ জমি ১৭ শতক। দাগ নং-৯৪৬৩ জমি ১৪ শতক মোট ১৭৬ শতক। বি,আর,এস খতিয়ান নং-২১৯৭, ভুক্তদাগ নং-৯৪৬৪ জমি ১২ শতক। বি,আর,এস খতিয়ান নং-২১৭৪ ভুক্তদাগ নং-৯৪৬৫ জমি ০৬ শতক। মোট ৩টি জোতে ১৯৪ শতক জমি। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঘটনার সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রকৃত দখলদার যাচাই অন্তে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা, তুষভান্ডার ইউনিয়ন ভুমি অফিস, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাটকে নির্দেশ দেন। যার আদেশ নং-০১, স্মারক নং-৩১১/১৭, তাং ০৬/০৭/১৭ইং। এ আদেশের প্রেক্ষিতে তুষভান্ডার ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোছাঃ রুম্মান জাহান বিবাদীদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময় একটি একতরফা প্রতিবেদন দাখিল করেন। যার স্মারক নং-৭৭, তাং ৩০/০৮/২০১৭ইং। যা আদালত অবমাননার সামিল।
তুষভান্ডার ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদনে বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলাধীন দক্ষিণ ঘনেশ্যাম মৌজার বি,আর,এস খতিয়ান নং-৪৮৩, খতিয়ানভুক্ত ৯৪৫৮ দাগে ০.১৮ একর। ৯৪৬০ দাগে ০.১২ একর, ৯৪৬২ দাগে ০.১৭ শতক। ৯৪৬৩ দাগে ০.১৪ একর। বি,আর,এস ১৯৭ খতিয়ারভুক্ত ৯৪৬৪ দাগে ০.১২ একর। বি,আর,এস ২১৭৪ খতিয়ানভুক্ত ৯৪৬৫ দাগে ০.০৬ একর সর্বমোট ১.৯৪ একর জমি। সরেজমিন তদন্তে নালিশী ৯৪৫৮ দাগে ০.১৮ একর, ৯৪৬২ দাগে ০.১৭ একর, ৯৪৬৩ দাগে ০.১৪ একর, ৯৪৬৫ দাগে ০.০৬ একর সবমোট ৪ দাগে ০.৫৫ একর জমি আব্দুল হামিদের ভোগদখল দেখানো হলেও প্রতিবেদনটি মিথ্যা। বাস্তবে আব্দুল হামিদের জমির কাগজপত্র থাকলেও তার জমি লাঠিয়াল বাহিনের হাতে বে-দখলে রয়েছে। বর্তমান সম্পূন নালিশী জমি ৯৪৬০ দাগে ১.২৭ একর, ৯৪৬৪ দাগে ০.১২ একর ০.২ দাগে ১.৩৯ একর জমি আব্দুল বারেক গংকে ওই প্রতিবেদনে ভোগদখল দেখা হলেও নালিশী জমি সম্পূন্ন তারা জোড়পূর্বক ভোগদখল করছেন। অথচ তাদের নামে খারিজ বা খাজনা পরিশোধের কোন কাগজপত্রাদি নেই।
এ ব্যাপারে নীরহ কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, বর্তমান কাগজপত্র না থাকলেও “জোর যার মুল্লুক তার” এখন “জোর যার জমি তার”। জোড়পূর্বক জমি দখল ফিরতের আদালতে মামলা করলে আদালত ভুমি অফিসের নিকট থেকে প্রতিবেদন চান। কিন্তু তুষভান্ডার ভুমি অফিসের কর্মকর্তা রুম্মান জাহান অফিসে বসে বিবাদীদের নিকট মোটা অংকের টাকার বিনিময় অতিরিক্ত দাগ ৯৪৬০ ও খতিয়ানভুক্ত ৯৪৬৪ জড়িয়ে একটি একতরফা মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন। আমার নিকট ভুমি অফিসার টাকা চেয়েছেন, আমি গরীব মানুষ টাকা দিতে পারি নাই, কিন্তু যাদের কাগজপত্র নেই, টাকা আছে, তাদের পক্ষে প্রতিবেদন যাবে, এটা কি ঠিক। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ১৯৮০ সালের ভোগদখলীয় জমি জোড়পূর্বক দখলে নিতে আমার নামে ৩/৪টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করেছেন। তিনি আরও বলেন, ভোগদখলীয় জমি বে-দখল হওয়ায় আমি নিঃস্ব। বছরের পর বছর জমি দখল নিয়ে কোর্ট-কাছারিতে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি ক্লান্ত হয়েও কোন সুফল পাচ্ছি না। প্রশাসনের নিকট আমার দাবী, বিষয়টি তদন্ত করে একজন নীরহ কৃষক আব্দুল হামিদ-কে বাঁচান।
ওই এলাকার নুর হোসেন ও আনোয়ার হোসেন জানান, এটা অন্যায়। প্রভাবশালীরা গ্রাম্য শালিশ-বৈঠক মানেন না। তাছাড়া তাদের কোন কাগজপত্র নেই, হঠাৎ তারা জমির মালিক হলেন কিভাবে। প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ খুবেই জরুরী।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here