জেপির সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের: রাজনীতিতে অলঙ্ঘনীয় দেয়াল উঁচু হয়েছে

0
554
বিএনপিতে গণতন্ত্র নেই

খবর৭১ঃ
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খারাপ সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজনীতিতে একটা অলঙ্ঘনীয় দেয়াল আরও উঁচু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দেয়াল আমাদের কর্ম-সম্পর্কের পথে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দেয়াল সৃষ্টি হয়েছে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। ওই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা ছিল ইতিহাস থেকে তাদের সেই ভূমিকাকে বাদ দিয়ে ইতিহাস লেখার উপায় নেই।

শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির (জেপি) ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কাউন্সিলে আগামী ৩ বছরের জন্য আবারও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি চেয়ারম্যান ও শেখ শহীদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সকালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভব রয়েছে, সেজন্য বিএনপিকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে আঘাত আসার পরও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বারবার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বিএনপির অসহযোগিতার কারণে সেই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আজ সামাজিক অনুষ্ঠানেও কে কি মনে করে, কারও মৃত্যুর পর জানাজায় যাব কিনা- এ দ্বিধাও আমাদের মাথায় কাজ করে। এ বিষয়গুলো রাজনীতির জন্য শুভ নয়। এ কনফ্রনটেশনাল পলিটিক্স (মুখোমুখি রাজনীতি) গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র এক চাকার বাইসাইকেল নয়, গণতন্ত্র দুই চাকার বাইসাইকেল। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে, সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও গণতন্ত্রের বিকাশে অপরিহার্য শক্তি। বিরোধী দলকে অব্যশই গুরুত্ব দিতে হবে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে বিরোধী দলকেও শক্তিশালী করতে হবে। শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া শক্তিশালী গণতন্ত্র কল্পনাও করা যায় না। এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে; যা আমরা বিশ্বাস করি তা পালন করি না। এটাও আরেক বাস্তবতা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেদিন কারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল। নিরাপদে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। কারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল। কারা পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে সংযুক্ত করে আইনে পরিণত করেছিল, যাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের বিচার না হয়। ইতিহাস তাদের ভুলে যাবে না। তিনি বলেন, সম্পর্কের এ অলঙ্ঘনীয় দেয়াল আরও উঁচু হয়েছে। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সে ইতিহাস বেশি দিন আগের নয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৪ সালের আগে এতকিছুর পরও শেখ হাসিনা গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়াকে। তিনি ঘৃণা ভরে গালাগাল করে যে ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন, আপনারা কি তা শোনেননি? টেলিফোন আলাপে এত অশ্রাব্য ভাষা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি উচ্চারণ! কী করে এখানে কর্ম-সম্পর্ক গড়ে উঠবে? কীভাবে আমরা বিএনপির সঙ্গে সহাবস্থান করব। রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে দাবি করে ১৪ দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ আছে। রক্তের গন্ধ আছে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।

’৯৬ সালে সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি জেপি ও দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন কিছু আসন সংকটে ছিল, সে সময় আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল জেপি। মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের পাশে থেকে সরকার গঠনে সহায়তা করেছিল। জাতীয় পার্টি দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করতে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছিল। আজ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এ সময় প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রতিষ্ঠাতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ারও স্মৃতিচারণ করেন ওবায়দুল কাদের।

অনুষ্ঠানে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বিএনপির উদ্দেশে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে বিতর্কিত করবেন না। নির্বাচনের মাঝপথে পালিয়ে যাবেন না। ফলাফল ঘোষণা না করা পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। জেপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ঢাকা শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিন। মেয়রদের সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর মাত্র তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময়ে দেশটা কীভাবে চলবে, সেকথা ভেবে তিনি সংবিধান দিয়ে গেছেন। অনেকে বলেন- বঙ্গবন্ধুকে এভাবে গুলি করে মারা হল, সিঁড়িতে তার মরদেহ পড়ে ছিল, তারপরও বলব- বঙ্গবন্ধু একটা সন্তুষ্টি নিয়ে মারা গেছেন, তিনি দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here