জুবায়ের সিদ্দিকী শিক্ষার আলো জ্বেলে সমাজকে আলোকিত করছেন — মোফাজ্জল করিম

0
330

মো. আব্দুল বাছিত
সিফডিয়া, সিলেট প্রতিনিধিঃ
সিলেটে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে জুবায়ের সিদ্দিকী’র ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে তাঁকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী সংবর্ধনা পর্ষদ, সিলেট-এর আহবায়ক সংগঠক সেলিম আউয়ালের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক হাইকমিশনার ও সচিব, শিক্ষাবিদ কবি মোফাজ্জল করিম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ কবি মোফাজ্জল করিম বলেন, সিলেট তথা বাংলাদেশের শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে এক আলোকিত নাম জুবায়ের সিদ্দিকী। দেশমাতৃকার প্রতি তাঁর নিখাঁদ ভালোবাসা ও মমতা সবাইকে প্রাণিত করে। একজন আদর্শিক শৃঙ্খলিত মানুষ জুবায়ের সিদ্দিকী শিক্ষার আলো জ্বেলে সমাজকে আলোকিত করছেন। তাঁকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে সিলেটের মানুষের দায়বদ্ধতা সম্পন্ন হল। শিক্ষাবিস্তারেও এক অদম্য সৈনিক জুবায়ের সিদ্দিকীকে মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা আরো গুণী ব্যক্তিত্বের জন্ম হবে। উদ্বোধনকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, জুবায়ের সিদ্দিকী তাঁর ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা ও মেধার মাধ্যমে সিলেটের শিক্ষাবিস্তারে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। উজ্জ্বল শিখার মত তিনি আলো জ্বেলে আদর্শ মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ। তাঁকে সংবর্ধনার মাধ্যমে সিলেটের মানুষই সম্মানিত হয়েছেন। সিলেটের মানুষদেরকে আরো বেশি আলোকিত করতে তাঁর মত গুণীদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। অনুভূতি ব্যক্ত করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী বলেন, আজকের এই অভূতপূর্ব সম্মাননা আমাকে অভিভূত করেছে। জীবনে মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করেছি সর্বদা। একজন শিক্ষক পিতার সন্তান হিসেবে শিক্ষার আলো ছড়ানোকে নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছি। মানুষের ভালোবাসা আমাকে এক সার্থক মনন উপহার দিয়েছে। এটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব সুজিত রঞ্জন দেব। দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক কবি মামুন সুলতানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান, স্কলার্সহোম-এর একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কবীর চেšধুরী, অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির।
অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, সাংবাদিক কলামিস্ট আফতাব চেšধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস-উন-নূর, তাজপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আনসারুন্নেসা বেগম, স্কলার্সহোম মেজর টিলা ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজমুল বারী জামালী, শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের উপাধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন চেšধুরী, দক্ষিণ সুরমা ক্যাম্পাসের উপাধ্যক্ষ রুমানা , সিলেট উইমেন্স মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াদুদ তাপাদার, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য মাওলানা ফজলুল করিম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. সাজ্জাদুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা -লেখক রাহাত তরফদার। জুবায়ের সিদ্দিকীকে নিবেদিত কবিতা আবৃত্তি করেন কবি এম. আশরাফ আলী, কামরুল হক জুয়েল, জালালাবাদ কলেজের প্রভাষক কবি ইশরাক জাহান জেলী, কবি আমিনা শহীদ চেšধুরী মান্না। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কবি সাংবাদিক মো. আব্দুল বাছিত। অনুষ্ঠানে জুবায়ের সিদ্দিকীর জীবনীর ওপর তথ্যচিত্র পাঠ করেন নেছার আহমদ নোমান। অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। সংবর্ধনা উপলক্ষে স্মারক এবং দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ পর্ষদের পক্ষ থেকে জুবায়ের সিদ্দিকীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, স্মারক এবং ক্রোড়পত্র তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে কৈতর প্রকাশন, জালালাবাদ কবি ফোরাম, চেতনা যুব পরিষদ, সিলেট লেখিকা সংঘ, স্কলার্সহোম, জননী ফাউন্ডেশন, মাসিক ভিন্নধারা, এডুকেশন ফর সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুল ও সম্মাননা স্মারক উপহার হিসেবে তুলে দেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ৯ই মার্চ সিলেটে জন্মগ্রহণকারী জুবায়ের সিদ্দিকী ১৯৬৭ সনে চাকুরী শুরু করে কমান্ড ও স্টাফ কলেজ কোর্স ১৯৮০, কর্নেল হিসেবে ১৯৯০-৯১ সালে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম-এ অংশগ্রহণ, ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে নয়াদিল্লিতে ডিফেন্স এটাচি ১৯৯৩-৯৮, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ টি-বোর্ড ১৯৯৮-৯৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর সিলেট স্কলার্সহোমের অধ্যক্ষের দায়িত্বপালন ছাড়াও সামাজিক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। এছাড়া ও বিভিন্ন সময় লায়ন্স ক্লাব, ধুমপান বিরোধী, নিরাপদ সড়ক, দরিদ্রের জন্য শিক্ষা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিতে কাজ করেছেন সুনাম ও দক্ষতার সাথে। একজন সফল সভাপতি হিসেবে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ কমিটির পুরস্কার গ্রহণ করেন ২০১৩ সালে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। একজন মননশীল লেখক হিসেবে ‘তাঁর সমস্যা, সংকট ও সম্ভাবনা’, ‘স্মৃতির অলিন্দে’, ‘কালের কথামালা’, ‘আমার জীবন আমার যুদ্ধ’ চারটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ইতোমধ্যে।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here