খবর৭১ঃ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেছেন, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে মনোনয়ন দিয়ে গেছেন। তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনিই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে শুক্রবার বিকালে প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভা চলাকালে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলে, এর বাইরে কারও কিছু করা সম্ভব নয়। একজন সিনিয়র সদস্য আরেকজনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন- এটি গঠনতন্ত্রবিরোধী। চেয়ারম্যান (এরশাদ) জীবদ্দশায় যেহেতু বলে গেছেন, তাই জিএম কাদেরই দলের চেয়ারম্যান। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।’
এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া অপরাধ। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ উপধারা ১(ক)-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যে কোনো পদে যে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারবেন, যে কোনো ব্যক্তিকে অপসারণ করতে পারবেন এবং যে কোনো ব্যক্তিকে তার স্থলে স্থলাভিষিক্ত করতে পারবেন। তার মানে চেয়ারম্যান তার নিজ অবস্থানে যে কাউকে চেয়ারম্যান করতে পারবেন।’
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘১৭ আগস্ট প্রেসিডিয়ামের সভা হয়েছিল, সেখানে ৩৪ জনের মধ্যে ২৬ জন বক্তব্য রেখেছিলেন। তারা বলেছিলেন, পার্টির যিনি চেয়ারম্যান, তিনি হবেন পার্লামেন্টের বিরোধী দলের নেতা। সেই রেজুুলেশনের
ভিত্তিতে সংসদ সদস্যদের ডেকেছিলাম। সেখানে ১৫ সংসদ সদস্য জিএম কাদেরকে মনোনয়ন দিয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। সে অনুযায়ী আমরা স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলাম।’
এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদ পার্লামেন্টারি মিটিং ডাকেননি। পার্লামেন্টারি মিটিং ডাকতে হবে সেটা কোথাও নেই। যারা বলছেন মিটিং ডাকা হয়নি, তারা গঠনতন্ত্রবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা এটি বলেছেন। সারা দেশ থেকে, সব জেলা থেকে এরশাদ যাকে তার মৃত্যুর পর স্থলাভিষিক্ত করে গেছেন তিনিই হবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, তার পক্ষে গোটা জাতীয় পার্টি আছে।’
এ সময় দলটির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘আজ সব পত্রিকার শিরোনাম জাতীয় পার্টি। এটা আমাদের জন্য সুখবর। তার মানে জাতীয় পার্টি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দল, সেই সঙ্গে সারা দেশের নেতাকর্মী প্রয়াত চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাত্ম আছেন। সব দলের একজন কর্ণধার থাকেন, যাকে কেন্দ্র করে দল সামনের দিকে যায়। এরশাদ মানেই জাতীয় পার্টি, তাই মৃত্যুর আগে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন, স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জিএম কাদের তার অবর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।’
বাবলু বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) যারা দলের জন্মলগ্ন থেকে আছেন দাবি করে একটি ঘোষণা দিয়েছেন, তারাও জানেন- দেশ চলে সংবিধানের ওপর, আর রাজনৈতিক দল চলে গঠনতন্ত্রের ওপর। কাল যে ঘটনা ঘটেছে, যিনি একজনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন- তিনি গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন। আর যাকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন তিনি যেহেতু প্রতিবাদ করেননি, তিনিও গঠনতন্ত্রের সীমারেখা অতিক্রম করছেন।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘৪ দিন আগে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করে স্পিকারের কাছে যে চিঠি গেছে, তার প্রথম স্বাক্ষরটি করেছেন আমাদের মহাসচিব। প্রথম কাদের ভাইকে চেয়ারম্যান করার যে ঘোষণা সেটিও স্বাক্ষর করেছেন তিনি। স্পিকার আমাদের চিঠি গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাদের (রওশন) পক্ষে কেউ স্বাক্ষর দিতে পারেননি।’
সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভরায়, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় ছিলেন- কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আলহাজ সাহিদুর রহমান, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), হাবিবুর রহমান, সুনীল শুভরায়, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মনির, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ দিদার বখত, কাজী মামুনুর রশীদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নাজমা আখতার এমপি, আবদুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল রানা এমপি, সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান ও নুরুল ইসলাম তালুকদার।
রংপুর-৩ উপনির্বাচন- সাক্ষাৎকার দিলেন তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী : রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তিনজন শুক্রবার দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তারা হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরউজ্জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির ও পার্টির নির্বাহী সদস্য আবদুর রাজ্জাক।
শুক্রবার বিকালে পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে গঠিত পার্লামেন্টারি বোর্ডের কাছে এ সাক্ষাৎকার দেন তারা। উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেছিলেন আরও দু’জন। তারা হলেন- এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ ও পার্টির নির্বাহী সদস্য ড. মেহেজেবুননেছা রহমান টুম্পা। তবে তারা এদিন সাক্ষাৎকার দেননি। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
গাজীপুরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা : গাজীপুর ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি জানান, ‘জিএম কাদের জাতীয় পার্টির বৈধ চেয়ারম্যান, রওশন এরশাদকে মানি না’ স্লোগানে শুক্রবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। কাশিমপুর থানা জাতীয় যুব সংহতির উদ্যোগে জিরানী এলাকায় এ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কাশিমপুর থানা জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক। বক্তব্য রাখেন কালিয়াকৈর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, মহানগর জাতীয় পার্টির সহসভাপতি আলফাজ উদ্দিন, আয়নাল মিয়া, রাকিব হোসেন, ওবায়দুল ইসলাম অপু, রুস্তম আলী, সাহাদত হোসেন, আশিক খান, হারুন, স্বাধীন প্রমুখ