জামিন জালিয়াতি থামছে না

0
341

খবর৭১ঃ জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিলো আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনের। কিন্তু বিচারের শুরু থেকে ছিলেন পলাতক। নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার প্রায় ২২ বছর পর ২০১৭ সালে আত্মসমর্পণ করেন এই আসামি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তিনি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। চান জামিনও। কিন্তু চলতি বছরে হাইকোর্ট জামিন না দিয়ে আবেদন খারিজ করে দেয়।

এরপরই হাইকোর্টের অন্য একটি ডিভিশন বেঞ্চে মামলার সকল নথি জাল করে জামিন চান। এপ্রিল মাসে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ আসামিকে জামিন দেয়। মিথ্যা তথ্য ও জাল নথি দাখিল করে জামিন হাসিলের বিষয়ে তথ্য পান রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট জাহিদ সারওয়ার কাজল। এরপরই তিনি নথি পর্যালোচনা করে বিষয়টি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নজরে আনেন। হাইকোর্ট আসামি মোয়াজ্জেমের জামিন বাতিল করে দেন। একইসঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে বুধবারের মধ্যে আদালতে হাজির করতে মাগুরার পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের আদেশের বিষয়টি ইত্তেফাককে জানান ডিএজি জাহিদ সারওয়ার কাজল।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে মাগুরায় আসাদুজ্জামান ও হান্নান নামে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় পরের বছর আসামি মোয়াজ্জেমসহ কয়েকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। পলাতক আসামি মোয়াজ্জেম ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। এরপরই সাজা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে ওই বছরই আপিল করেন। চান জামিনও। আপিল নম্বর ৯৩৩১/২০১৭। ওই আপিলের ওপর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। জামিন না পাওয়ায় ওই আসামি মিথ্যা তথ্য ও মামলার সকল নথি জাল করে হাইকোর্টে আরেকটি ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন। যার নম্বর ১০৮৪/২০১৯। এই আপিলে আসামি জামিনও চান। গত ১৭ এপ্রিল হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ওই আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে জামিন মঞ্জুর করে। জামিন পেয়ে আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

এ অবস্থায় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জামিন পাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন ডিএজি জাহিদ সারওয়ার কাজল। তিনি দুটি আপিলের নথি পর্যালোচনা করেন। নথি পর্যালোচনায় দেখতে পান যে, ১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ জোড়া খুনের মামলায় মোয়াজ্জেমকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়। কিন্তু এই রায় প্রদানের তারিখ বদলে জাল নথি দাখিল করেছেন আসামি। সেখানে বলা হয়েছে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর তাকে দণ্ড দিয়েছে দায়রা আদালত।

এছাড়া মামলার এজাহার, সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখও পাল্টে দেওয়া হয়েছে এই আপিলে। এভাবে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। বিষয়টির ওপর সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেন।

ডিএজি বলেন, এটা একটা ভয়াবহ জামিন জালিয়াতি। আসামি জাল কাগজ দিয়ে যেভাবে জামিন হাসিল করেছেন সেটা গুরুতর অপরাধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here