‘জানোয়ারদের শাস্তি দেখে মরতে চাই’

0
332

খবর ৭১ঃ ‘মাগো, ও মা, তুই চলে গেলি! আমার কথা না হয় না-ই ভাবলি। তোর তিন ভাইয়ের কথা ভাবলি না একবারও। তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন ছিলি তুই। কত আদরের বোন ওদের। ওরা তোকে ছাড়া থাকবে কী করে। আমরা বাঁচবো কীভাবে!’ একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউ বিভাগের সামনে বসে এভাবেই বিলাপ করছিলেন বাবা এ কে এম মুসা। রাফির বাবা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এও বললেন, ‘যারা আমার মেয়েকে কেড়ে নিল, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এভাবে ওরা আমার ফুলের মতো মেয়েটাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারল। ওরা মানুষ নয়, ওরা জানোয়ার। ওই জানোয়াদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত না করে মরতে চাই না। এ ঘটনার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী বারবার আমার মেয়ের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এখন বিচারের ভার তার হাতে ছেড়ে দিলাম। তিনি বিচার করবেন।

‘গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিনই তাকে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আনা হয়। আপ্রাণ চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা বাঁচাতে পারলেন না তাকে। তার সুচিকিৎসার বিষয়ে গতকালও দিনভর চিকিৎসকরা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেল রাফি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসকরা বার্ন ইউনিটের আইসিইউ বিভাগে রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরই রাফির বাবা, মা, ভাই ও স্বজনের মাঝে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে পুরো হাসপাতালে সৃষ্টি হয় এক শোকাবহ পরিবেশ। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীদের স্বজনরাও ছুটে আসেন দোতলায় আইসিইউর সামনে। বাবা মুসা, মা শিরিন আক্তার, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান এবং তার ছোট ভাই আহমুদুল হাসান আরমান বারবার মূর্ছা যান। সম্বিত ফিরে পেয়ে আবার আর্তনাদ করতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে আইসিইউর দরজার সামনে থেকে রাফির শোকার্ত মা শিরিন আক্তার ও ছোট ভাই আহমুদুল হাসান আরমানকে পাশেই পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে নিয়ে শুইয়ে রাখা হয়। তখন তারা অচেতন। বাবা মুসা ও বড় ভাই নোমানকে স্বজনরা ধরাধরি করে নিয়ে চেয়ারে বসান। সেখানেও বিলাপ করতে থাকেন তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোনের শোকে নোমান বাকহীন হয়ে পড়েন। নির্বাক চেয়ে থাকেন উপস্থিত লোকজন ও সংবাদকর্মীদের দিকে। মাঝে মাঝে বাবার ঘাড়ে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করছিলেন, আবার চোখ মেলছিলেন সবার দিকে। কাঁদতে কাঁদতে বাবার গলাও যেন শুকিয়ে আসছিল। মাঝে মধ্যে বুক চাপড়াচ্ছিলেন আর বিলাপ করছিলেন তিনি। বলছিলেন- ‘ও মা, তুই সবার মায়া-মমতা ছেড়ে চলে গেলি। তোর ভাই, মা আমি সেই শনিবার থেকে ঠিকমতো ঘুমাইনি, শুধু তোর মুখে ডাক শুনবো বলে। তোর ভাই বলছিল- আব্বা, রাফি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে। বোনকে তারা আবার আগের মতো ফিরে পাবে। বোনকে আদর করবে। ওরা তোর জন্য কত ছোটাছুটি করছিল। একবারও ক্লান্ত হয়নি বোনের জন্য। হাসপাতালের বারান্দায় বসে রাত কাটিয়েছে সবাই, তোকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। তুই কারও কথা ভাবলি না। চলেই গেলি মা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here