জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা ঘোষণা আজ

0
365

খবর৭১:বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা জোট বেঁধে আন্দোলনের জন্য নিজেদের অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করেছে। শুক্রবার (১২ অক্টোবর) আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় তিন পক্ষের নেতারা বসে এটি চূড়ান্ত করেন।

এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বৈঠকে আন্দোলনের রূপরেখা, অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আরও একদফা বৈঠকের পর এটি ঘোষণা করা হবে। শনিবার (আজ) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।’

অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর রূপরেখা, দাবি, লক্ষ্য ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় ড. কামাল হোসেনের বেইলী রোডের বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে: বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া মিলে বৃহত্তর এই মঞ্চের নাম হচ্ছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার দেয়া দাবি ও লক্ষ্যকে সমন্বয় করে অভিন্ন ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্যের খসড়া চুড়ান্ত করা হয়েছে।

অভিন্ন দাবির মধ্যে রয়েছে:

১. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা।

২. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।

৩. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

৪. শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন।

৬. দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা।

৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়া।

১১ লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে:

১। মুক্তি সংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা।

২। ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

৩। দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা।

৪। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তার বিধান করা।

৫। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।

৬। রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা নিশ্চিত।

৭। জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

৮। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া।

৯। ‘সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব- কারো সাথে শত্রুতা নয়’ এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা।

১০। বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা।

১১। দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনী আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

বৈঠক উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রধান সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জাহিদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্প ধারা যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here