খবর৭১ঃযুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন আজ। এ নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন নাগরিকদের একটা বিরাট অংশ খোদ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মহা উদ্বেগে দিন কাটিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি জাতির উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ তালাশ করে দেখার ব্যাপারে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না।
পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ সরিয়ে জাতিকে একটি ঐক্যের জায়গায় নিয়ে যেতে তার মধ্যে কোনো তাগাদা নেই। এটিকে তার ‘খামখেয়ালিপনা’ বললে ভুল হবে। জেনে বুঝেই নাগরিকদের উদ্বেগে রাখছেন তিনি।
মুসলিম অভিবাসীদের মনে ভয়-ভীতি ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। শ্বেতাঙ্গদের উগ্রপনাকে সমর্থন দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রগামী শরণার্থীদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।
উদ্দেশ্য একটাই- যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠরা যেন বিশ্বাস করে যে, ট্রাম্পই শ্বেতাঙ্গদের একমাত্র নেতা। এই লক্ষ্য অর্জনেই ঘৃণার রাজনীতি চাঙ্গা করছেন ট্রাম্প। জাতীয়তা উসকে তার ‘মধু’ খেতে চাইছেন।
সবমিলিয়ে বিশ্ব এবার জাতিবিদ্বেষে ভরপুর ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এক নির্বাচন দেখবে। নিজের অনুগত সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করতে ২০১৬ সালের মতো এবারেও প্রবল বর্ণবিদ্বেষী রণকৌশল গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প।
সমর্থকদের এ বলে হুশিয়ারি দিচ্ছেন, নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের বিজয় হলে মহাবিপর্যয় ঘটবে। তারা সীমান্ত প্রহরা খুলে দেবে ও হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী এসে দেশ দখল করে নেবে। যাদের অনেকে মাদক পাচারকারী ও খুনি। ফলে আমেরিকার অর্থনীতি বিপন্ন হবে। পাল্টে যাবে মানুষের জীবনযাত্রা।
যুক্তরাষ্ট্র পরিণত হবে আরেক ভেনিজুয়েলায়। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় এক জনসভায় ট্রাম্প এও বলেন, অভিবাসীরা পৃথিবীর সবচেয়ে ‘জঘন্য’ মানুষ, তা জেনেও ডেমোক্রেটরা তাদের দু’হাত তুলে স্বাগত জানাচ্ছে।
উইসকনসিনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, কোনো অবৈধ অভিবাসীকে তিনি আমেরিকায় থাকতে দেবেন না।
২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ‘অভিবাসী খেদানোর’ কৌশল নিয়েছেন ট্রাম্প।
দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী কয়েক হাজার মানুষের কাফেলাকে ঠেকিয়ে দিতে মেক্সিকো সীমান্তে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তাদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে ভোটের প্রচারণা যখন রমারমা, ঠিক তখনই পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গের সিনাগগে এক কট্টর ট্রাম্প-সমর্থক এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১১ ব্যক্তিকে হত্যা করে।
২৭ অক্টোবর ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষবশত এ হামলা চালায় রবার্ট গ্রিগোরি বোয়ার্স নামের উগ্র-শ্বেতাঙ্গ। এ ঘটনার পর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি গলার স্বর কিছুটা নিচু করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার কথার পাঠ উল্টাতে ২৪ ঘণ্টাও লাগেনি। তিনি নিজের সাড়ে ৫ কোটি টুইটার অনুসারীর কাছে একটি ভিডিও বিলি করেন।
এতে খুনি হিসেবে শাস্তিপ্রাপ্ত এক অবৈধ অভিবাসীর ছবি দেখিয়ে বলা হয়, ডেমোক্রেটরা চান এ রকম মানুষকে আশ্রয় দিতে।
বর্ণবাদী ও মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে নির্মিত ভিডিওটির নিন্দার জানিয়েছেন একাধিক রিপাবলিকান নেতা। ওহাইও’র রিপাবলিকান গভর্নর জন কেইশিচ বলেন, ‘এমন নির্লজ্জ বর্ণবাদী ভিডিও ভয়াবহ বিজ্ঞাপনের একটাই উদ্দেশ্য, মানুষের মনে ভীতি জাগানো।’
সপ্তাহ দুয়েক আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনসহ ১৫ জনের বাসায় বোমা পাঠানোর অভিযোগে সিজার সিয়োক নামের এক উগ্রপন্থীকে আটক করা হয়।
ট্রাম্প সমালোচক বেছে বেছে প্যাকেট বোমা পাঠায় ট্রাম্পের কট্টর এ সমর্থক। এসবের জন্য ট্রাম্পের উত্তপ্ত বর্ণবাদ বক্তব্যকেই দায়ী করা হচ্ছে। তিনি যে ভাষায় তার প্রতিপক্ষ, অভিবাসীসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্র্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, তাতে ট্রাম্প-সমর্থকদের সহিংসতায় উসকে দেয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হল, ট্রাম্প একজন প্রেসিডেন্ট হয়েও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, জাতিকে বিভক্ত করার পক্ষে কথা বলেন।
খবর৭১/ইঃ