খবর৭১: জনতার প্রতিরোধের মুখে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হবে বলে দাবি করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সিনিয়ন যুগ্ম মহাসচিব এই কথা বলেন।
দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজার পর বৃহস্পতিবারই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেয়া হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বিএনপি। রায়ের আগ পর্যন্ত দলের স্লোগান ছিল ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না।’
তবে বিএনপি প্রধানকে বকশিবাজারের বিশেষ জজ আদালত থেকে কারাগারে নেয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়া রায়ের আগের দিন কোনো ধরনের হটকারী কর্মসূচি দিতে নিষেধ করেছেন। এ কারণে আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার সাজার রায় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
রিজভী বলেন, ‘সরকার প্রধান সম্পূর্ণ প্রতিহিংসাপরায়ণতায় কেবলমাত্র আদালতকে ব্যবহার করে নয়, সমস্ত রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে। কারাবন্দী করা হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম জিয়াকে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা জানান, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হয়েছেন।
এই মামলার রায় পূর্বনির্ধারিত দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এ মামলায় খালেদা জিয়ার জেল হবে, তাকে কারাগারে যেতে হবেই এমন কথা সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারদলীয় নেতারা বিগত দুই বছর ধরেই বলে আসছেন। রায় ঘোষণার পরও দেখা গেছে সরকারের মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের আদালতের রায়ের হুবহু মিল রয়েছে।’
রায়ের দিন বরিশালে খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেরও নিন্দা জানান রিজভী। বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালে জনসভায় দাম্ভিকতার সহিত বলেছেন-‘কোথায় আজ খালেদা জিয়া?’। তাঁর এই বক্তব্যে মনে হয়েছে- বেগম জিয়াকে কারাগারে ঢুকিয়ে তিনি আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন। তার বক্তব্যে উল্লাসের সুর ধ্বণিত হয়েছে।’
‘প্রতিহিংসার বিচারে সারাদেশ যখন বিষন্ন বেদনায় মুষড়ে পড়েছে তখন প্রধানমন্ত্রীর উল্লাসে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়-বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছে সেটি ফরমায়েসী রায়।’
‘শেখ হাসিনা কতটা প্রতিশোধপরায়ণ এর আগেও আপনারা দেখেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে কীভাবে তাঁর স্বামীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে। কীভাবে বালুর ট্রাক দিয়ে বার বার তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এ সরকারের মানসিক নির্যাতনে অকালে ঝরে গেলো তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার করতেই বেগম জিয়া, তার পরিবার ও বিএনপির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন বলেও দাবি করেন রিজভী। বলেন, ‘প্রতিহিংসার জাল ছড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যত জেল, জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন করেন না কেন বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনার স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে। কোন ফর্মুলাতেই আপনার মসনদ রক্ষা করতে পারবেন না। সারাদেশের মানুষ আজ জেগে ওঠেছে।’
রায় শুনতে যাওয়া খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিলের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘দেখেননি চারিদিকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র মহড়া, পুলিশের গুলি, ব্যারিকেড, তাণ্ডব উপেক্ষা করে গতকাল রাজধানীবাসী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে যোগ দিয়েছিল?’। রায়ের পর ছাত্রদলের মিছিল থেকে সংগঠনটির সভাপতি রাজিব আহসানসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তাদের নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
খবর৭১/এস: