জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না

0
248

খবর ৭১ঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন, জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব- না হলে আসব না। এটা আল্লাহর ওপরও নির্ভর করে; তিনি যদি চান। তবে তার আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই।’

কোটা সংস্কার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারি না এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে পারি না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিক্ষকরা এ ভুল কী করে করেন। মঙ্গলবার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

সকালে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (জিটুপি-গভর্নমেন্ট টু পারসন) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকরা ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আরও সাতটি জেলা এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। প্রতিটি গ্রামে মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে।

তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি ভাতা দেয়ার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে। যাতে দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের সম্পদ ও টাকা-পয়সা কেউ কেড়ে নিতে না পারে। তিনি বলেন, আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে যার প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছে যাবে।

কেউ আর কমিশন খেতে পারবে না। টাকা সরাসরি হাতে পৌঁছে যাবে। শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রচ্ছন্নভাবে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধেই আন্দোলন হচ্ছে।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাওয়া না গেলে সুপ্রিমকোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে তার সরকার মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারি না এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে পারি না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করেছিলেন।

সেই সঙ্গে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সরকারি চাকরির জন্য কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে পাওয়া যেত না। ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাতে রাষ্ট্রপরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ থাকে।

বেসরকারি টেলিভিশনের ‘টকশো’কেন্দ্রিক দেশের তথাকথিত বৃদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু বুদ্ধিজীবী যাদের আদালতের রায় সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই, তারা ‘টকশো’তে যখন মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে কথা বলেন তখন দুঃখ হয়। আন্দোলনের নামে কতিপয় ছাত্র ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে লুটপাট করেছে। এর চেয়ে গর্হিত কাজ শিক্ষার্থীর জন্য আর কী হতে পারে। সেটা নিয়ে তারা কোনো উচ্চবাচ্য করেন না।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সাবেক আমলাদের একহাত নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যখন বলে, তখন আমি কিছু মনে করি না। যত বড় ব্যারিস্টারই হোক, আর জ্ঞানীই হোক; তারা তো মিথ্যা কথা বলায় পারদর্শী। তারা তো বলবেই। তাদের কথায় কিছু আসে যায় না। কিন্তু আমাদের সমাজের যারা শিক্ষিত, যারা শিক্ষক; তারা এ ধরনের ভুল কী করে করেন! প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টে একটা রিট হয়েছিল। সে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেন, এই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে, না হলে পদ শূন্য থাকবে। তিনি বলেন, এটি যখন আপিল বিভাগে যায় তখন আপিল বিভাগ একটা রায় দেন- ‘কোটা পূরণ করে যদি কোন শূন্য পদ থাকে তাহলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করা যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি বিষয়টি অবহিত হয়ে কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দিয়েছি। কারণ হাইকোর্টের রায় তিনি অবমাননা করতে পারেন না।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব গাথা, শহীদদের রক্ত কোনোদিন বৃথা যেতে পারে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর এ দেশের মানুষ বিকৃত ইতিহাস জেনেছে। এই দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের পদলেহনকারীরা কখনই চাইবে না বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নত হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here