জঙ্গিবাদের মতো মাদকও প্রতিরোধ করবো: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

0
381

খবর৭১ঃপ্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের মাটিতে যেমন জঙ্গিবাদ শেকড় গাড়তে পারেনি, তেমিন মাদকও নিয়ন্ত্রণে আসবে। এর জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদেরকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সামাজিক সচেতনতার সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়ে তোলার ওপর সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় কেউ যাতে মাদকাসক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। অন্য যারা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদেরও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সচেষ্ট থাকতে হবে। মাদক ব্যবহার, বিক্রি বা বহন করা এগুলো যে অপরাধ, জনগণ এ ব্যাপারে এখন যথেষ্ট সচেতন। সরকার যাদেরকে আত্মসমর্পন করাচ্ছে (মাদক ব্যবসায়ী), তাদের চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে রাখার পদক্ষেপ নিয়েছি। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা অন্য কোন ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে ভালভাবে চলতে পারে। এভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের বিরোধীদলীয় সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হবে। আমরা যখনই সরকারে আসি তখনই গণপরিবহণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বিআরটিসিসহ গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ বিআরটিসি লাভজনক নয়। আমরা ক্ষমতায় এসে আবার বিআরটিসিকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেই। আমরা ক্ষমতায় এসে অনেকগুলো বিআরটিসি বাস ক্রয় করি। কিন্তু আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত তিন থেকে চারশ’ বিআরটিসির বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমরা গণপরিবহণ যত বেশি চালু করতে পারি সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্বের সব দেশেই ট্রাফিক সমস্যা আছে। লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় দেশেরও এ সমস্যা রয়েছে। কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে, মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যাও বাড়ছে। ঢাকার যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা ও ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।এটা চালু হলে যানজট নিরসন আরো কার্যকর হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার উদাত্ত আহ্বান জানান। সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগরে যানজট নিরসনে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

মুজিবুল হক চুন্নুর অপর প্রশ্নের জবাবে দেশের সকল গ্রামকে শহরের সুযোগ সুবিধা দিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকান্ড বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অকৃষি খাতের অবদান বেড়ে চলেছে। আমাদের মূল লক্ষ্যই হলো- সকল গ্রামে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া। তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গ্রাম কেন্দ্রিক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লব, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি নিয়েছে।

কুড়িগ্রাম-১ আসনের সদস্য আসলাম সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১২ মে মহাশুন্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপন সম্পন্ন হয়েছে। মহাকাশে এখন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ গৌরব আমাদের সবার। এটি বর্তমান সরকারের গতিশীল উন্নয়নের ধারাবাহিকতার একটি অংশ। এর মধ্য দিয়ে জাতির পিতার আরেকটি স্বপ্ন পূরন হয়েছে।

স্যাটেলাইট সেবার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তাদের সম্প্রচার কাজ সম্পন্ন করছে। ডাইরেক্ট টু হোম সার্ভিসের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী চ্যানেল অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যাবস্থা, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চার টি টিভি, সমুদ্রগামী বাণিজ্যক জাহাজ ও মৎস আহরণকারী জাহাজগুলোর নিরাপদ চলাচল ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণ, ই-লার্নিং, টেলিমেডিসিন, ই-কৃষির মতো নতুন নতুন সেবা দেয়া হচ্ছে। যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও আপদকালীন সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন টেলিকমিউনিকেশন সেবা, দূর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইনটারনেট সুবিধাসহ চিকিৎসা সেবা নেয়া যাবে। ইতোমধ্যে আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রাপ্তির সুবিধা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোই বছরে প্রায় ৮ মিলিযন মার্কিন ডলার বিদেশী স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে আসছে। এছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও বিদেশী স্যাটেলাইট থেকে ভাড়ায় সেবা নিয়ে আসছে। এ স্যাটেলাইট-এর মাধ্যমে বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জঙ্গীবাদ নির্মূল সংক্রান্ত বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জঙ্গীবাদ দমনে পুলিশের অপারেশনাল ও লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্পেশালাইজড নতুন ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) গঠন, বাহিনীর সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এ যাবত বেশ কিছু বড় ধরণের সফল অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গী তৎপরতা প্রতিরোধ করেছে। জঙ্গী সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্তকরণের সুবিধার্থে হ্যালো সিটি, রিপোর্ট টু র‌্যাব প্রভৃতি অনলাইন এ্যাপস চালু করা হয়েছে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত ও আটক জঙ্গীদের নিবিড় নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ দমনে সফলতা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

সরকারদলীয় সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্য অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্টের জন্য আমরা বহুবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়। কাজেই মানুষের সমস্যা জানার এবং সমাধানের চেষ্টা করি। রাজনীতিবিদ হিসেবে এটাই আমার কর্তব্য বলে মনে করি। আর ক্ষমতা ভোগ করার বিষয় নয়, জনসেবার বিষয়। সেজন্যই বাংলাদেশের মানুষের কিভাবে কল্যাণ করতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here