ছাত্রলীগের সম্মেলন: কারা আসছেন নেতৃত্বে?

0
425

খবর৭১: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়ে উঠা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই সংগঠনের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আগামী ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই সম্মেলনের মাধ্যমে উঠে আসবে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব। তবে এ নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। কারা আসছেন প্রাচীন এই ছাত্র সংগঠনের নতুন নেতৃত্বে?

জানা যায়, সবশেষ ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন সাইফুর রহমান সোহাগ (সভাপতি) ও এস এম জাকির হোসাইন (সাধারণ সম্পাদক)। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ দুই বছর হলেও সঠিক সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি। যার ফলে পদ প্রত্যাশী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে গত ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সম্মেলন আয়োজনে সংগঠনটির নেতাদের তাগাদা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহম্মেদ অডিটোরিয়ামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক জরুরি বর্ধিত সভায় ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখাও করেন ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। পরে অনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে গত ৮ মার্চ এই সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে সম্মেলন স্থগিতের পর থেকেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এনিয়ে তারা দলীয় হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এরপর গত ৩১ মার্চ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ছাত্রলীগের সম্মেলনের বিষয়টি সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সম্মেলনের প্রাথমিক তারিখও ১১ মে ঠিক করে দেয়া হয়। এর পরেই বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনেকটা চাপের মধ্যেই ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের জন্য ১১ ও ১২ মে তারিখ ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।

যদিও তখন তিনি সব চাপের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘কীসের চাপ? আমাদের একমাত্র অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এ সম্মেলন হচ্ছে। আমাদের উপরে কোনও ধরনের চাপ নেই।’

এদিকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে পদ প্রত্যাশী নেতাদের মাঝে এক ধরনের স্বস্থি নেমে আসে। এর পরই আলোচনা শুরু হয় কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে? এনিয়ে এখন চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। চলছে নানান হিসাব-নিকাশও।

জানা যায়, নিয়মিত ছাত্র, ক্লিন ইমেজ, ভাল সংগঠককেই বেছে নেয়া হবে ছাত্রলীগের আগামী নেতৃত্বে। টেন্ডারবাজ ও নানা অপকর্মে জড়িতদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। যেহেতু সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন; তাই এমন নেতা নির্বাচন করা হবে যাতে নির্বাচনকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে পারে।

তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে; বিতর্কিতরা যেন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে না আসতে পারে। তবে ১/১১ এর সময় দলীয় প্রধানের মুক্তি আন্দোলনে ভূমিকার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হবে।

সম্মেলনকে সামনে রেখে নতুন নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকাদের মধ্যে আছেন,
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজন, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসাইন, আইন সম্পাদক আল-নাহিয়ান খান জয়, কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মোঃ শওকতুজ্জামান সৈকত, ঢাবির সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন প্রিন্স, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইমদাদ হোসেন সোহাগ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত, স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক কামরুজ্জামান বিশ্বাস জিপু, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম , মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-সম্পাদক মোঃ আল মামুন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুল ইসলাম জুয়েল, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম হাবিবুল্লা বিপ্লব, সহ-সভাপতি সোহান খান, ঢাবি মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, জিয়া হলের সভাপতি ইউসুফ উদ্দিন খান, স্যার এ এফ রহমান হল সভাপতি হাফিজুর রহমান, জহিরুল হক হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মুহসীন হলের সভাপতি সরকার রায়হান জহির।

ছাত্রলীগের এসব নেতারা ইতোমধ্যে পদ নিশ্চিত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন পদপ্রত্যাশী দাবির কথা জানিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচনে যারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে পারবে তাদের যেন নেতৃত্বে আনা হয়। এছাড়া যাদের ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদের যেন বড় পদে না আনা হয়। সেজন্য দলীয় হাইকমান্ডারের কাছে আবেদন জানান তারা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনে আমাদের সকল প্রস্তুতি থাকবে। তারপরও আমাদের একমাত্র অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশ দেবেন সেই অনুযায়ীই কাজ করা হবে।’
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here