ছাতক-দোয়ারার রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা

0
423

হাবিবুর রহমান নাসির ,ছাতক(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে। অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশার কারনে দু’উপজেলায় যাতায়াত ব্যবস্থার মুখ থুবরে পড়েছে। সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী অধিকাংশ সড়কই উপজেলাবাসীর দুঃখের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবহারে প্রায় অনুপোযোগী এমন অনেক সড়কেরই অস্তিত্ব এখন হুমকীর মুখে পড়েছে। ছাতক-দোয়ারার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চরম অবনতির বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভুক্তভোগীরা ঝড় তুললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভুমিকা পালন করছেন। বিভিন্ন ভাঙ্গা সড়কের ছবি যুক্ত করে ফেইসবুকে প্রতিবাদী ষ্ট্যাটাস দিচ্ছে স্ব স্ব এলাকার লোকজন। কিন্তু এতো বে‌শি লেখালেখির পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্লজ্জের মতো মুখে লাগাম দিয়ে বসে আছেন। বর্তমানে দু’উপজেলার গ্রামীন জনগোষ্ঠির যাতায়াতে দূর্ভোগের বিষয়টি অনেকটাই অমানবিক। ভুক্তভোগী লোকজন বলছেন, যখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি তখন মানুষ শুস্ক মৌসুমে পায়ে আর বর্ষায় নায়ে চলাচল করেছে । কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেও সংস্কারের অভাবে বর্তমানে তারা নায়ে বা পায়ে কোনভাবেই  চলাচল করতে পারছেন না। বেহাল রাস্তা-ঘাটের কারনে বর্ষা মৌসুমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অনেকটা বন্দি দশায় দিনানিপাত করতে হচ্ছে। সরকার দলের সংসদ সদস্য ও কতিপয় জনপ্রতিনিধি সভা সমাবেশে ছাতক দোয়ারায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের ফিরিস্থির কথা দিব্বি বলে গেলেও ছাতক-দোয়ারার রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা দেখলে যে কেউ বলে উঠবে কোথায়, কার পকেটে গেল সরকারের উন্নয়নের আড়াই হাজার কোটি টাকা।
ছাতক-দোয়ারার ২২টি ইউনিয়ন ও একটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা নিয়ে সংসদীয় আসন সুনামগঞ্জ-৫। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সারা দেশের ন্যায় ছাতক-দোয়ারায়ও কাংখিত উন্নয়ন সাধিত হলেও ছাতক-দোয়ারার যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার দরুন সরকারের সব উন্নয়নই অনেকটা ম্লান হতে যাচ্ছে বলে সুধীমহল মনে করছেন। সরকারের দাবী অনুযায়ী দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে, তখন ছাতক-দোয়ারার উন্নয়ন কোন সড়ক দিয়ে হাঁটছে এটাই হচ্ছে   মানুষের প্রশ্ন। উন্নয়ন  হবে      এমন সব সড়কেই এখন জনগণ ধান রোপন করে তিরস্কার করছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট থেকে সাদা ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ ফুট রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশায় পড়েছিল। এলাকার লোকজন ভাঙ্গা এ অংশে একাধিকবার ধানের চারা রোপন করে এর প্রতিবাদ করেছেন। সম্প্রতি প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য সচিব ছাতকে আগমন উপলক্ষে এ অংশের দায়সারা সংস্কার করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। একইভাবে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের জাউয়া প্রাইমারী স্কুলের সামন থেকে ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ ফুট সড়ক ১০ বছরেও সংস্কার কাজ করা হয়নি। এখানের ভাঙ্গা এ অংশে বার-বার ধানের চারা রোপন করে তিরস্কার করে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রধান সড়কের বেহাল দশার কারনে এখানে প্রায়ই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকতে দেখা গেছে। জালালপুর-লামারসুলগঞ্জ সড়ক ভাঙ্গাচুরা ও খানা-খন্দে ভুরপুর। এ সড়কের পালপুর থেকে মইনপুর পর্যন্ত প্রায় এক কিমি রাস্তা খুবই বিপদজ্জনক। সংস্কার হয়েনি এক যুগেও। পালপুর-মর্যাদ-খুরমা সড়ক যান চলাচলের অনপোযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। সড়ক জুরেই খানা-খন্দ ও বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেলা দু’য়েকটি সিএনজি চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। কালারুকা বাজার থেকে আরতানপুর-চানপুর পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা নোয়ারাই ইউনিয়নের ফকিরটিলা-ক্যাম্পের বাজার সড়ক যেন মরন ফাঁদ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় একযুগ ধরে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে দু’উপজেলার ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ। নোয়ারাই-বালিউড়া-বাংলাবাজার ও নোয়ারাই-নরসিংপুর সড়ক ভাঙ্গতে-ভাঙ্গতে এখন অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। সড়ক সংস্কারের দাবীতে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগি এলাকাবাসী। মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সাব সেক্টর ও গণকবর হক নগর পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার একমাত্র সড়ক হচ্ছে বাংলাবাজার-বাঁশতলা সড়ক। এ সড়কটিও দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশায় পড়ে আছে। যান চলাচলে অনপোযোগী এ সড়কের কারনে পর্যটকরা অনেকটা বিমুখী হয়ে পড়ছেন। জাউয়ার কৈতক থেকে কালীপুর-হায়দরপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক এবং কৈতক-সিরাজগঞ্জ সড়ক দক্ষিণ ছাতকবাসীর দুঃখের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাউয়া, সিংচাপইড়, ভাতগাঁও, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নসহ জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ চরম দুর্ভোগ মেনে নিয়ে এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব সড়ক সংস্কারের দাবীতে একাধিকবার এলাকার লোকজন আন্দোলন করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কামারগাঁও বাজার-আসামপুর সড়কের প্রায় ৩শ’ফুট সড়কের কারনে বর্ষা মৌসুমে সমতা স্কুল এন্ড কলেজের দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী হাটু পানি ও কাদা মারিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। অনেক শিক্ষার্থী দু’প্রস্থ পোশাক নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর-রামপুর সড়ক, তাজপুর-বরাংপাড়-গন্ধর্বপুর সড়ক, হাজী কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কাজীহাটা-নোয়াগাঁও সড়ক, সদর ইউনিয়নের মধুকোনী-রাতগাঁও সড়ক, সিংচাপইড় ইউনিয়নের কপলা বাজার-বড়কাপন সড়ক, লক্ষমসোম-জিয়াপুর সড়ক, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদরগাঁও ইউনিয়নের বুরাইগাঁও-আলমপুর সড়ক, বোকারভাঙ্গা-মানিকগঞ্জ বাজার-খুরমা-কাশিপুর সড়ক, নোয়ারাই ইউনিয়নের জোড়াপানি-চৌমুনী সড়ক, বালিউড়া-চৌমুনীবাজার সড়ক, দোয়ারা উপজেলার দোয়ারা-টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড সড়ক, টেংরা- মহব্বতপুর-লক্ষীপুর সড়ক, দোয়ারা-টেবলাই সড়ক, বাংলাবাজা-কুমিল্লাপাড়া সড়ক, আমবাড়ী -দোয়ারা সড়কসহ দু’ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রামীণ অসংখ্য সড়ক এখন বেহাল দশায় পড়ে আছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, বছরের পর বছর ধরে এসব সড়কে কোন সংস্কার কাজ না করায় ভুক্তভোগী মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এখানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here