ছাতকে ইউপি চেয়ারম্যান সায়েস্থা মিয়াসহ ৮জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

0
289

হাবিবুর রহমান নাসির ছাতক প্রতিনিধিঃ
ছাতকের দোলারবাজার ইউপি চেয়ারম্যান সায়েস্থা মিয়ার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২সেপ্টেম্বর রাতে ছাতক থানায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান সায়েস্থা মিয়াকে ৬ নং আসামী করা হয়েছে। এ নিয়ে ছাতক উপজেলার ২ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হল। এর আগে আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক হত্যা কান্ডের ঘটনায় গত ২৮ জুন উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে অপর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ফারুক মিয়ার স্ত্রী রেহেনা বেগম। এ মামলায় বিল্লাল আহমদকে প্রধান আসামী করা হয়।
জানা যায়, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের মঈনপুর মাঝপাড়া গ্রামের ফয়জুল ইসলামের স্ত্রী দু’সন্তানের জননী সাজনা বেগম(৩০)’র রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে তখন এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল। ২৬ জুলাই রাতে ঘটনা ঘটলেও ৩০জুলাই দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের সামনেই সাজনা বেগমের স্বামীর পক্ষ ও পিতার পক্ষের লোকজন পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে। স্বামীর পক্ষের লোকজনের দাবী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে সাজনা বেগম। অপরদিকে সাজনা বেগমের পিতার বাড়ির লোকজন বলছে পরকিয়ায় বাধাঁ দেয়ায় তাকে মারধোরসহ পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর পূর্বে ফয়জুল ইসলামের সাথে ইসলামী শরীয়ত মতে জগন্নাথপুর উপজেলা পাটলী ইউনিয়নের শেরা মোহাম্মদপুর গ্রামের তনকুশ মিয়ার কন্যা সাজনা বেগমের বিয়ে হয়। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের এক পর্যায়ে সাজনা বেগম দু’সন্তানের জননী হন। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে সাজনা বেগমের কাছে। স্বামীর পরকীয়া বাধাঁ-বিপত্তি দিয়ে স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সাজনা বেগম। এর বদৌলতে সাজনা বেগমকে সহ্য করতে হয়েছে স্বামীর শারীরীক ও মানষিক নির্যাতন। শাস্তি হিসেবে তাকে প্রায়ই অনাহারে-অর্ধাহারে রাখতো স্বামীর বাড়ির লোকজন। শুধু সংসার করার জন্য স্বামীর এসব নির্যাতন মুখবুঝে সহ্য করে আসছিল সাজনা বেগম। ঘটনার প্রায় ৬মাস পূর্বে ২য় বিয়ে করার জন্য স্ত্রীর কাছে অনুমতি চায় স্বামী ফয়জুল ইসলাম। স্বামীর এ প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় প্রায়ই সাজনা বেগমকে মারপিট করতো ফয়জুল ইসলাম ও তার পরিবারের লোকজন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সালিশ-বৈঠক হলেও সালিশকারীরা ফয়জুল ইসলামকে ২য় বিয়ে করার পক্ষে রায় দেন। ঘটনার রাতে অন্যান্য দিনের মতো ২য় বিয়ে করার বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রচন্ড ঝগড়া-বিবাদ হয়। ওইদিন মধ্য রাতে ইউপি চেয়ারম্যান শায়েস্তা মিয়া মোবাইল ফোনে সাজনা বেগম আত্মহত্যা করেছে বলে তার ভাই আশিক মিয়াকে জানান। পরদিন সকালে সাজনা বেগমের লাশ বাংলাঘরের বারান্দায় পরে থাকতে দেখে সাজনার পিতার বাড়ির লোকজন। এসময় সাজনা বেগমের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় তারা, যা পুলিশ সুরতহাল রির্পোটেও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সাজনা বেগমের মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক হওয়ায় বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা প্রয়োজন মনে করলে এসময় ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন লোক আশিক মিয়াকে থানায় যেতে বাঁধা দেন। এ নিয়ে ফয়জুল ইসলামের পরিবারের লোকজনের সাথে আশিক মিয়ার কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান উত্তেজিত হয়ে আশিক মিয়াকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকী দিয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। সাজনা বেগমের ভাই আশিক মিয়া জানান, স্বামীর পরকিয়ায় বিরোধিতা করায় প্রায়ই তার বোনকে মারপিট করতো ফয়জুল ইসলাম। পরকিয়ার বিষয়টি চরিতার্থ করতেই তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। কথাগুলো ৩০ জুলাই পুলিশের সামনেরই তিনি বলেছিলেন বলে জানান। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তেরী শেষে ওইদিন এসআই শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আত্মহত্যার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে মাথার ডান দিকে ও ডান পায়ের গুড়ালিতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের পর বিষয়টি জানা যাবে। এ ঘটনায় সাজনার ভাই আশিক মিয়া বাদী হয়ে সাজনার স্বামী ফয়জুল ইসলামসহ শফিকুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, আফিয়া বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান শায়েস্তা মিয়া, ছালেহ আহমদ ও আরজ আলীর নাম উল্লেখ করে গত ৮ আগষ্ট সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে গত ২ সেপ্টম্বর অভিযোগটি ছাতক থানায় হত্যা মামলা(নং-০৪) হিসেবে এফআইআরভুক্ত করা হয়। ছাতক থানার ওসি আতিকুর রহমান হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান শায়েস্তা মিয়ার সাথে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here