চৌগাছায় হাঁসের খামার করে সফল হয়েছেন মহিউদ্দিন দরকার সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা

0
1337

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোরঃযশোরের চৌগাছায় বানিজ্যিক ভাবে হাঁস পালন করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন মহিউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। দীর্ঘ ৮ বছর বিদেশ থাকার পর দেশে ফিরে তিনি হাঁস পালনে মনোযোগী হন। এক বছরেই সে অনেকটাই সফল। বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৩ হাজার বিভিন্ন জাতের হাঁস আছে। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে তিনি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা রোজগার করছেন। অদম্য পরিশ্রমি মহিউদ্দিন সমাজ তথা দেশের বেকার যুবকদের কাছে একটা দৃষ্টান্ত মনে করছেন অনেকে। সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে এই ক্ষুদ্র উদ্যক্তা বড় কিছু উপহার দিতে পারবেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের জলকা মাধবপুর গ্রামের হানেফ আলী বিশ্বাসের ছেলে মহিউদ্দিন (৪০)। লেখাপড়ায় বেশিদুর যেতে পারেননি তিনি। মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়ার আগেই ২০০৮ সালের দিকে তিনি পাড়ি জমান সুদুর কুয়েতে। দীর্ঘ ৮ বছর প্রবাস জীবন যাপন শেষে চলে আসেন বাড়িতে। বিদেশে অনেক কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে কি করবেন এমন ভাবনায় বেশ বিচলিত ছিলেন। একদিন তার এক নিকট আত্মিয়র কাছ থেকে হাঁস পালনের গল্প শুনে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেন মহিউদ্দিন। একপর্যায় তিনি হাঁসের খামার করতে মনস্থির করেন। ২০১৮ সালের ১৪ ফের্রুয়ারী চৌগাছা-কদমতলা সড়কের ধুনারখাল ব্রিজ নামক স্থানে মাত্র ১২ কাটা জমির উপর গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। এই খামারের পাশ দিয়ে প্রবাহমান স্থানীয় ধুনারখাল ও কপোতাক্ষ নদ। মুলত এই খালকে ঘিরেই তার খামার প্রতিষ্টিত। প্রথম বছরে তিনি ঘর নির্মান, হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহসহ যাবতীয় খরচে ব্যয় করেন ২৬ লাখ টাকা। মাত্র সাড়ে চার মাস পর হতেই খামার থেকে আয় শুরু হয়। এক বছরেই খরচের টাকা ঘরে তুলতে তিনি প্রায় সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে ২৭শ বিভিন্ন জাতের হাঁস আছে। এরমধ্যে পুরুষ হাঁস আছে সাড়ে ৩শ, বাকি সবই ডিম দেয়া হাঁস। এই সকল হাঁস থেকে তিনি প্রতিদিন ১৫শ থেকে ২ হাজার ডিম পান। প্রতিটি ডিম তিনি বিক্রি করেন ১০ টাকা দরে, যার বাজার মূল্য দাড়ায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
গতকাল সরেজমিন হাঁসের খামারে যেয়ে দেখা যায় তিনজন কর্মচারীসহ খামারী মহিউদ্দিন খামারে কাজ করছেন। এসময় কথা হয় এই ক্ষুদ্র উদ্যাক্তার সাথে। তিনি বলেন, অনেকে অনেক ধরনের ব্যবসা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। আমি কিছু ভিন্ন ধরনের ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছি এবং বলাচলে আজ অনেকটাই সফল। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে কারও কোন সহযোগীতা ছাড়াই নিজের ইচ্ছা শক্তিতেই গড়ে তোলা হয় হাঁসের খামার। তিনজন কর্মচারীর সহযোগীতায় তিনি খামারে নিয়মিত কাজ করছেন। মহিউদ্দিন বলেন, হাঁসের খামার এ অঞ্চলে তেমন একটা নেই। সে দিকটা বিবেচনা করেই এই ফার্ম করার সিদ্ধান্ত। ১২ কাটা জমি লিজ নিয়ে হাঁসের জন্য ঘর নির্মান করেছি। আর পাশের খালের পানিতে হাঁস চরানোর ব্যবস্থা করেছি। দিনের বেশির ভাগ সময়ই হাঁসের দল খালের পানিতে থাকে। খাওয়ার সময় হলেই তারা উপরে উঠে আসে। আর সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সব হাঁস দল বেধে ঘরে উঠে যায়। হাঁসের পিছে তেমন পরিশ্রম নেই তবে যেটুকু পরিশ্রম তা নিয়ম মাফিক করতে হয়। হাঁসের খাদ্য হিসাবে তিনি স্থানীয় বাওড় থেকে ছোট শামুক (গুলি শামুক) অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেন। এই শামুক তিনি প্রতিদিন দুপুরে হাঁসের মাঝে দিয়ে দেন। এছাড়া সকাল সন্ধ্যা ও রাত ৮ টার দিকে নিজের তৈরী খাবার হাঁসের খাওয়ানো হয়। হাঁসসহ খামার পরিচর্জায় তিনজন কর্মচারী রাখা আছে। তাদের প্রত্যেককে মাসে ৯ হাজার টাকা বেতন দেন তিনি। তারা সকলেই খামারের জন্য নিবেদিত বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, নতুন শুরু করার কারনে অনেক কিছুই আমার অজানা ছিল যার করনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে যা আগামীতে থাকবে না বলে তিনি মনে করছেন। হাঁসের রোগবলায় তুলনা মুলক অনেক কম তাই হাঁস পালনে তেমন বেগ পেতে হয়না। হাঁসের প্রধান রোগ হচ্ছে প্লেগ রোগ ও ডাক ভাইরাস হেপাটাইটিজ। তবে নিয়মিত রোগ প্রতিরোধক ওষুধ প্রয়োগ করলে সমস্যা হয়না। মহিউদ্দিন হাঁস পালনের পাশাপাশি দেশী মুরগীর খামার তৈরীর কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে মুরগী পালনের সব কিছুই প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মহিউদ্দিন সমাজের বেকার যুবকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকুরীর জন্য অলস বসে না থেকে কিংবা বিদেশ না যেয়ে সেই অর্থ দিয়ে এ ধরনের খামার প্রতিষ্ঠা করে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। যার প্রমান মহিউদ্দিন। সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে এই ধরনের উদ্যক্তা সমাজ তথা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here