চৌগাছায় শব্দ দূষন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন শিশুরা

0
351

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : চৌগাছায় শব্দ দূষন এখন প্রকাট আকার ধারন করেছে। দিন দিন এর মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন যান বাহনের যত্রতত্র উচ্চ স্বরে হর্ণ বাজানো, স্যালো মেশিন চালিত বাহনের লাগামহীন শব্দ, ইট ভাঙ্গা মেশিনের বিকট শব্দ সর্বোপরি বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার মাইকের শব্দে নাজেহাল মানুষ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন শব্দ দূষনের ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন শিশুরা। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে শিশুরা বধির হওয়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছা প্রতি নিয়ত ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। এক সময়ের ছোট্ট চৌগাছা বাজার এখন এ অঞ্চলের বৃহৎ একটি বাজার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। ব্যবসা সহ সব কিছুতে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে এ জনপদে। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের কর্মের। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলা সদরে মানুষ নানা কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। এর ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে চৌগাছার সুনাম এলাকার গন্ডি পেরিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, চৌগাছা বাজার কেন্দ্রিক আবাসিক এলাকা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, বে সরকারী ক্লিনিক সহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সড়কের পাশে এই সকল স্থাপনা গড়ে উঠায় সংগত কারনে মানুষের বসবাসও এই সকল এলাকাতে তুলনা মুলক বেশি। কিন্তু এই সড়ক গুলোতে চলাচলকারী প্রতিটি যানবাহন কোন নিয়ন কানুন মানছে না বলে অভিযোগ। উপজেলা সদরে প্রায় ১০টির মত শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। খুব সকাল থেকেই অভিভাবকরা তাদের প্রিয় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানে রওনা দেয়। কিন্তু সড়কে ইঞ্জিন চালিত নছিমন, করিমন, ভটভটি, আলমসাধু, পন্যবাহি ট্রাক, ইট বহনকারী ট্রাক, বালু বহনকারী ট্রাক এমনকি যাত্রীবাহি বাস চলছে বেপরোয়া গতি নিয়ে। শুধু গতি নিয়ে চলা না, তারা সময় অসময়ে উচ্চ স্বরে হর্ণ বাজিয়ে এক ধরনের আতংকের সৃষ্টি করছে। পথচারীদের অভিযোগ সব থেকে বেশি ক্ষতি করছে ইঞ্জিন চালিত নছিমন করিমন। এই সব বাহনের শব্দ নিরোধ যন্ত্রটি হয় ভাঙ্গা অথবা বিকট শব্দ তৈরীর লক্ষে ওই যন্ত্রাংশটি চালক খুলে রেখে দেয়। ফলে তারা যখন সড়কে উঠে তখন বিকট শব্দ তৈরী করে। এতে করে যে কোন ব্যক্তি বা যানবহান তাকে দ্রুত জায়গা করে দেয় তারা বাতাসের গতীতে উড়ে চলে সড়কে। এই সব বাহনে ধরন ক্ষমতার অনেক গুন বেশি লোড নিয়ে সড়কে উঠলে সেই শব্দ আরও কয়েক গুন বেড়ে যায়। অনুরুপ ভাবে ইট ভাঙ্গা মেশিন গুলোও সকল নিয়ম কানুনকে উপেক্ষা করে বিকট শব্দ তৈরী করে প্রতিনিয়ত সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ দিকে আবাসিক এলাকাগুলোতে যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠেছে স্যালোমেশিন মেরামতের কারখানা। ওই সকল কারখানায় ইঞ্জিন মেরামতের নামে সৃষ্টি করছে শব্দের কারখানা। ইট, বালু বহন ও যাত্রীবাহি বাস গুলোর চালকেরা যেন নিয়ম কানুন ভুলে গেছে। তারা পৌর সদরে প্রবেশ করলে বাহনের গতি কয়েকগুন বেড়ে যাই। যে যেমন ভাবে পারছে চালাচ্ছে তাদের বাহন, ইচ্ছামত বাজাচ্ছে উচ্চস্বরে হর্ণ। এ দিকে সপ্তাহের প্রায় প্রতি দিনই কোন না কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার মাইক বের হওয়া এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। বেসরকারী ক্লিনিক গুলো সেবায় আমাদের লক্ষ, সেবায় আমাদের ধর্ম, বিখ্যাত চিকিৎসক বসছে অমুক ক্লিনিকে আজই আসুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বাহারী সব প্রলোভন দেখিয়ে বের করছে প্রচার মাইক। বসে নেই মাছ কিংবা পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ীরা। সুলভ মূল্যে অমুক দোকানে মিলছে মাছ কিংবা পোল্ট্র মুরগী। সম্পুর্ণ নিয়ম বহির্ভূত প্রচার প্রচারনা ও সড়কে চলাচলকারী এই সব বাহন কারো দোহাই মানছে না। এতে করে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা। হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে এসে চালকরা উচ্চস্বরে বাজাচ্ছে হর্ণ। অনেক সময় অসুস্থ্য রোগী এই শব্দে আতকে উঠছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, শব্দ দূষন একটি মারাত্মক সমস্যা। প্রতি নিয়ত বিকট শব্দ শ্রবনে সব ধরনের মানুষের চরম ক্ষতি হয়। বিশেষ করে শিশুরা বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এর ফলে শিশুরা আস্তে আস্তে বধিরও হয়ে যেতে পারে। শব্দ দূষনের এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে উপজেলাবাসি প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here