চৌগাছায় লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গম চাষ ॥ ভাল ফলনের আশায় কৃষক

0
793

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃবাংলাদেশে গম চাষ এক সময় ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। দেশের সাথে তাল মিলিয়ে সীমান্তবর্তী উপজেলা যশোরের চৌগাছাতেও এর বিস্তার লাভ করে। কিন্তু নানা প্রতিকুলতার মধ্যে দেশের দানা ফসল হিসেবে ২য় স্থান অধিকারী এই ফসলের চাষ ব্যাপক ভাবে হ্রাস পায়। বিশেষ করে গত ৩/৪ বছর ধরে গম চাষে ভাইরাস দেখা দেয়ায় কৃষক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে উপজেলায় গম চাষ বেশ লক্ষনীয়। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। দেশের উৎপাদন ও খাদ্যের দিক দিয়ে দানা ফসল হিসাবে গম ২য় স্থান অধিকার করে আছে। তাই এই চাষ আরও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, যশোরের চৌগাছা উপজেলা কৃষি পন্য উৎপাদনের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। এ জনপদের কৃষকরা নানা প্রতিকুলতার মধ্যে বছরের প্রায় বার মাসই কোন না কোন ফসল উৎপাদনের সাথে ব্যস্ত থাকেন। তাদের উৎপাদিত ফসলের মধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে গম। আশির দশকে এ জনপদের চাষিরা তাদের ক্ষেত খামারে ব্যাপক ভাবে গম চাষ করে লাভবান হয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই গম চাষে দেখা দেয় মন্দাভাব। বিশেষ করে গত ৩/৪ বছর ধরে গম চাষ ব্যাপক ভাবে হ্রাস পাই। গমে ভাইরাস দেখা দেয়ায় কৃষক ক্ষতির সম্মুখিন হতে থাকে। তাই কৃষকের কথা বিবেচনা করে উপজেলা কৃষি অফিস গম চাষ থেকে কৃষকদের বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। বর্তমানে ভাইরাস না থাকায় কৃষককে আবারও গম চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন কৃষি অফিস। তাদের কথায় সাড়া দিয়ে চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠে উল্লেখযোগ্য গম চাষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আর কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না দেখা দিলে গম চাষে কৃষক এবার বেশ লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে প্রায় ৮০ হেক্টোর জমিতে গম চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। চলতি বছরে ৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হলেও সেই লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে উৎপাদন ও খাদ্যের দিক দিয়ে দানা ফসল হিসাবে গম ২য় স্থানে রয়েছে। অর্থাৎ ধানের পরেই গমের স্থান। ১৯৯৮ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল, তাপ সহিষ্ণু ও রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্বাবন ও কৃষক পর্যায়ে হস্তান্তর হওয়ায় গমের আবাদ, উৎপাদন এবং ফলন সে সময় থেকে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। মাটির গুনাগুন ও আবহাওয়া বিবেচনায় নানা ধরনের গম চাষ হয়। তবে চৌগাছা এলাকাতে বিশেষ করে বিআর-২৬ ও ২৮ জাতের গম চাষ বেশি হয়েছে বলে জানা গেছে। উঁচু ও মাঝারি দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়। সাধারণত উচু ও মাঝারি উচু জমি গম চাষের জন্য উপযুক্ত। সহজে পানি নিস্কাশন হয় এমন জমিতে গম চাষ করা ভাল। গম চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে অগ্রায়ন মাসের ১ম থেকে ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে তাপ সহনশীল জাত ডিসেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে বপন করা যায়। কৃষকরা জানান, গম চাষ করতে হলে সেচসহ নির্ধারিত সময়ে ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং টিএসপি, এমপি ও জীবসাম চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। এরপর নিয়ম মাফিক পরিচর্জা করলে ক্ষেতে ভাল ফলন আসা করা যায়। গমের রয়েছে অভাবনীয় পুষ্টিুগুন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের মতে, আমাদের দেশে ভাতের পাশাপাশি প্রধান খাদ্য তালিকায় রয়েছে গমের রুটি। কারো কারো কাছে ভাতের চেয়ে রুটি বেশি পছন্দের খাবার। গমের আটা দিয়ে শুধু রুটি নই, তৈরী হয় বিস্কুট, কেকসহ নানা উপাদেয় খাবার। প্রতি ১শ গ্রাম গমের আটায় পাওয়া যায় ৩৬৪ কিলো ক্যালরি, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ২ দশমিক ৭ গ্রাম, প্রোটিন ১০ গ্রাম। নিয়মিত গমের আটার রুটি খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন বলেন, চৌগাছা এলাকাতে গম চাষে হঠাৎ ভাইরাস দেখা দিলে কৃষককে এই চাষ না করার জন্য বলা হয়। কৃষক তাতে সাড়া দিয়ে গম চাষ কমিয়ে দেয়। কিন্তু ভাইরাস বর্তমানে না দেখা দেয়ায় আবারও কৃষক গম চাষে মনোযোগী হয়েছেন। চলতি মৌসুমে লক্ষ মাত্রার বেশি গম চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস এসকল কৃষককে সর্বদা সহযোগী দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here