চৌগাছায় রস সংগ্রহে একদিকে চলছে গাছ তোলার প্রস্তুতি অন্যদিকে চলছে গাছ নিধোনের প্রতিযোগীতা

0
580

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোরঃ যশোরের চৌগাছা উপজেলার গাছিদের নিরালস পরিশ্রম জানান দিচ্ছে শীত সন্নিকটে। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা এক গাছ থেকে আরেক গাছে উঠে যাচ্ছে। গাছ থেকে রস সংগ্রহে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ চলছে। আর কয়েক দিন পরেই পাওয়া যাবে রস। সেই রস থেকে তৈরী হবে গুড়, পাটালী ও সুস্বাধু কত না খাবার। প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া খেজুর গাছ তুলতে যখন গাছিরা ব্যস্ত ঠিক সেই সময় এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী নানা প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্র শ্রেনীর মানুষের নিকট থেকে গাছ কিনে তা ইট ভাটায় বিক্রির প্রতিযোগীতায় নেমেছে। যশোরের যস খেজুরের রস এই চিরায়িত সত্যকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে খেজুর গাছ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ জনপদের সচেতন মহল।
খেজুর অতি পরিচিত একটি গাছ। এ গাছ লম্বায় প্রায় ২০-২৫ ফুট হয়। এর আদি নিবাস ভারত উপমহাদেশে। বাংলাদেশের খুলনা, যশোর, বরিশাল, ফরিদপুর, মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ে এ গাছ বেশি জন্মে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে এদেশে ৬৮.১০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে খেজুর জন্মে। দেশে খেজুর গাছের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার। সূত্র জানায়, চৌগাছা উপজেলার প্রতিটি এলাকার গাছিরা এখন খেজুর গাছ তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের ব্যস্ততায় জানান দিচ্ছে শীত ধেয়ে আসছে। আর কিছু দিন পরেই দীর্ঘ ১ বছরের প্রতিক্ষায় থাকা সেই খেজুরের রস দেখা মিলবে। গ্রাম বাংলার মায়েরা প্রস্তুত করছেন খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরী করার চুলাও প্রস্তুত করছেন। খেজুরের রস অত্যান্ত সুস্বাদু আর গুড় ও গুড় থেকে তৈরী নানা পিঠা পায়েসের তো জুড়িই নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর এনার্জি। এতে জলীয় অংশও বেশি। এটাকে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক বলা যেতে পারে। এতে গ্লুকোজের পরিমান বেশি থাকে। খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যায়, আবার জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরী করেও খাওয়া যায়। গুড়ে আয়রন বা লৌহ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরীতে সহায়তা করে। যারা শারীরীক দূর্বালতায় ভোগেন খেজুরের রস তাদের জন্য দারুন উপকারী। এতে ১৫ থেকে ২০ ভাগ দ্রবীভূত থাকে। আখের গুড় থেকে খেজুরের গুড় বেশি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এই গুড়ে প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের খেজুরের গুড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উপজেলার বয়োবৃদ্ধরা জানান, ভারত সীমান্তের গা ঘেষে গড়ে উঠা চৌগাছা উপজেলায় এমন এক সময় ছিল যে দিকে চোখ যেত শুধুই দেখা মিলত খেজুর গাছ। প্রতি বাংলা সনের আশ্বিন মাসের শেষ দিকে ওই সকল খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে গাছিরা গাছ তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ত। কিন্তু আবহাওয়া জনিত কারনে এখন খেজুর গাছ তোলা কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। শীত কিছুটা দেরিতে আসায় এ বিলম্ব বলে তারা জানান। সময়ের ব্যবধানে এখন আর সেভাবে খেজুর গাছ দেখা যায়না। এলাকা ভিত্তিক যা আছে তাও দু’একটি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। খেজুর গাছ নিধোনের পিছনে সব থেকে বেশি দায়ি এ অ লের ইট ভাটা গুলো এমনটিই মনে করছেন এলাকাবাসি। উপজেলায় অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। আর ইট পোড়ানোর জন্য কয়লার পাশাপাশি খেজুর গাছ অত্যান্ত উপযোগী। তাই ইটের মৌসুম শুরুর বেশ আগে ভাগেই ভাটা মালিকরা নানা কৌশলে প্রত্যান্ত গ্রামা ল থেকে খেজুর গাছ সংগ্রহ করছেন। এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী নানা প্রলোভন দেখিয়ে গাছ মালিকদের নিকট থেকে তা কিনে ভাটায় বিক্রি করছেন। বলাচলে ইটের মৌসুম এলে এ জনপদে খেজুর গাছ নিধোনে চলে প্রতিযোগীতা। ভাটা মালিকরাও সকল আইন কানুনকে উপেক্ষা করে কয়লার পাশাপাশি ভাটায় খেজুর গাছ দেদারছে পুড়াচ্ছেন। উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামের গাছি আলী বকস জানান, তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত। শীত মৌসুম এলেই গাছ তোলার কাজে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টি গাছ তিনি তুলতে পারেন। মৌসুমে তিনি এই গাছ তুলে বাড়তি রোজগার করেন। কিন্তু এখন আর সে ভাবে কাজ হয়না। কারন হিসাবে তিনি বলেন, প্রতি বছর খেজুর গাছ মারা হচ্ছে, এতে করে গাছ কমে যাওয়ায় কাজও কমে গেছে। প্রতি বছর যে পরিমান গাছ নিধোন হচ্ছে সে পরিমান গাছ লাগানো হচ্ছে না। যার কারনে এখন আর খেজুর গাছ সেভাবে দেখা যায়না। খেজুর গাছ সংরক্ষনে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার সচেতন মহল।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here