চৌগাছায় মুলাক্ষেত ভাইরাসে আক্রান্ত কাংখিত ফলন নিয়ে শংকায় কৃষক

0
852

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশার)ঃ যশোরের চৌগাছার কৃষকরা কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় চলতি মৌসুমে শীতের আগাম সবজি চাষ শুরু করেন। শীতের আগাম সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি হচ্ছে মুলা। কিন্তু চলতি মৌসুমে মুলা চাষ করে কৃষক মহা বিপাকে পড়েছেন। কৃষকের অধিকাংশ জমির মুলাতে দেখা দিয়েছে ভাইরাস। এরফলে মুলা আকারে ছোট হওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ মুলার গায়ে কালো দাগ দেখা দিয়েছে, ফলনও বহুলাংশে কমে গেছে। এ সব মুলা বাজারে চাহিদা কম থাকায় কাংখিত দাম না পেয়ে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের জমি সবজি চাষের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। তাই প্রতি বছর এ জনপদের কৃষক মাঠে সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এক সময় শুধু শীত মৌসুমে সবজি চাষ করা হলেও সময়ের ব্যবধানে তা পরিবর্তন হয়েছে। অধিক মুনাফার আশায় চাষিরা এখন বছরের প্রায় বার মাসই কোন না কোন সবজির চাষ করে থাকেন। তাতে পরিশ্রম ও খরচ বেশি হলেও দাম ভাল পেয়ে কৃষক মহাখুশি। শীতের সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি হচ্ছে মুলা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৫৫ হেক্টোর জমিতে উপসি জাতের মুলা চাষ করা হয়েছে। শীতের সময় মুলা চাষ করা হলেও এখন গ্রীস্মেও তা দেখা মিলছে। চৌগাছার চাষিরা গ্রীস্মে মুলা চাষ করে বেশ স্বাবলম্বি হয়েছেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে মুলা চাষ করে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মুখিন হতে চলেছে এ অ লের চাষিরা। অধিকাংশ মুলা ক্ষেত আকস্মিক ভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মুলায় কালো দাগ হওয়ার পাশাপাশি তা আকারে অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে। এরফলে চাষিরা মুলার কাংখিত ফলন ও দাম না পেয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। গতকাল চৌগাছা পৌর এলাকার পাঁচনামনা, বেড়বাড়ি, ইছাপুুর গ্রামা লের মাঠে যেয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় কথা হয় পাঁচনামনা গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছেন। প্রথম দিকে জমির সব মুলা বেশ ভালই ছিল। কিন্তু দিন যত যেতে থাকে মুলা ক্ষেতের অবস্থা বেশ খারাপ হতে থাকে। মুলা যখন একটু বড় হয় তখন প্রতিটি মুলায় দেখা দেয় কালো দাগ। প্রথম দিকে মনে হতো কোঁচো বা অন্য কোন কীটপতঙ্গের কারনে এমনটি হচ্ছে। কিন্তু এখন মুলা তোলার সময় দেখা গেছে প্রতিটি মুলায় কালো দাগ ও আকারে ছোট হয়ে গেছে। কেন কিসের কারনে এমনটি হয়েছে তা জানা নেই। কৃষক ওয়াজেদ আলীর মত ওই মাঠে মিজানুর রহমান ১ বিঘা, এনজু মিয়া ২ বিঘা, মন্টু ৩ বিঘা, আশরাফ হোসেন আশা ১ বিঘা, লিয়াকত আলী ২ বিঘা, ফন্টু ২ বিঘা, শরিফুল ইসলাম ২ বিঘা, শওকত আলী ১ বিঘা, ইন্তাজ আলী ১ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছেন। ওই মাঠে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ বিঘার মত জমিতে মুলার চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে তারা কিছুটা আগে ভাগেই মুলার চাষ শুরু করেন। প্রতি বছর তারা মুলা চাষে বেশ লাভবান হলেও চলতি মৌসুমে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে জানান। কৃষকরা বলেন, এ অ লের মাঠে উৎপাদিত মুলা খেতে অত্যান্ত সুস্বাধু। তাই বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে যথেষ্ঠ পরিমান। সে কারনে কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় তাদের আগে ভাগে চাষ করার মুল উদ্যোশ্য। বর্তমানে বাজারে এক কেজি ভাল মুলা পাইকারি ২০ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানে আমাদের ক্ষেতের মুলা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। তারা বলেন, যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে ১ বিঘা জমি থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মুলা বিক্রি করা সম্ভব। তবে এ বছর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে খরচের টাকা উঠবেনা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার রইচউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছত্রাকজনিত কারনে এমনটি হতে পারে। কৃষক কিভাবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারে সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here