চৌগাছায় প্রতিটি পন্য গরীবের নাগালের বাইরে বাজার, মনিটারিং এর জোর দাবি

0
1806

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) :যশোরের চৌগাছায় চালসহ প্রতিটি নিত্য পন্যের দাম হুহু করে বেড়েই চলেছে। বলা চলে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পন্য এখন সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অপ্রতিরোধ্য এই বাজার দরের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এ জনপদের নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবৃত্ত শ্রেনীর মানুষের অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। বর্তমান বাজার দরের পরিবর্তন না ঘটলে সাধরণ মানুষ অনেকটাই দেউলিয়া হয়ে যাবে মনে করছেন সচেতন মহল। তাই বাজার মনিটারিং জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছা একটি জনবহুল উপজেলা হিসাবে বেশ আগে ভাগেই আত্ম প্রকাশ করেছেন। ব্যবসা বানিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জনকারী এই উপজেলা সকলের নজর কাড়তে শুরু করেছে। তাই অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় এক উপজেলা হিসাবে দেশ তথা দেশের বাইরেও এই পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। সকল কর্মকান্ডের যেমন প্রসার বাড়তে শুরু করেছে তেমনি ভাবে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দামও হুহু করে বেড়েই চলেছে। যে যেমন খুশি তার মালামাল বিক্রি করে যাচ্ছে যেন দেখার কেউ নেই। চাল, ডল, মাছ, মাংস সহ সব জিনিসের দাম আকাশচুম্বি। বাজারে প্রতিটি পন্যের যথেষ্ঠ যোগান থাকার সত্যেও নানা অজুহাতে অধিক মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে মালামাল। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চৌগাছাতে সব ধরনের চাল কেজিতে ২ টাকা থেকে শুরু করে ৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, মোাটা চাল যেমন রতœ্া এক সপ্তাহ পূর্বে ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সেই একই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। মিনিকেট চাল ৬৫ টাকা আর বাসমতি চাল কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। মাছ মাংসের বাজারের অবস্থা আরও নাজুক। এক কেজি খাশির মাংস ৭০০ টাকা, গরুর মাংস ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ, দেশি মুরগী ৩শ থেকে ৩২০, পাকিস্থানী ২শ থেকে ২২০ আর পোল্ট্রি মুরগী ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছে ভাতে বাঙালী সেই চিরায়িত সত্য কথাটি আজ রুপ কথায় পরিনত হয়েছে। এক কেজি ইলিশ মাছ ২৫০ থেকে ৮শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শিং মাছ ৮শ, মাগুর মাছ ৮শ, পুটি মাছ ২শ, মায়া মাছ ৩শ পাকাল মাছ ৬শ দেশী কৈ ৬শ, রুই মাছ ২৫০ থেকে ৪শ, কাতল ২০০ থেকে ৫শ আর কার্প জাতীয় মাছ ১২০ থেকে ৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল চৌগাছার প্রধান কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারের প্রতিটি মুদি দোকানে উপচে পড়া ভিড়। দোকানে পন্যের বিক্রিয় তালিকা করার কথা থাকলেও সেটি অধিকাংশ দোকানি মানছে না। এমন অবস্থায় ক্রেতা বিক্রেতা পন্যের দাম নিয়ে রীতিমত বাকযুদ্ধেও অবতীর্ণ হচ্ছেন। এ সময় দেখা যায় ব্যবসায়ীরা ১ কেজি ফ্রেশ মশুর ডাল ৯৫ টাকা, লুচ মশুর ডাল ৬৫ টাকা, ছোলা ১ কেজি ৮৫ টাকা, মুগডাল ১১০ টাকা, শুকনা মরিচ ২০০ টাকা, এলাচ ১শ গ্রাম ১৬০ টাকা, সোয়াবিন তেল ৯০, চিনি ৫৪, মুড়ি প্রতি কেজি ৭০, লবন ৩২, সেমাই ৪০, ডালডা ১০৫, জিরে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এ ছাড়া সাবান, পেষ্ট, হ্যান্ড ওয়াসসহ প্রতিটি জিনিসের দাম আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশ দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। নিত্য পন্যের বাজারের যখন এই অবস্থা তখন কাঁচা বাজারের কি পরিনতি তা কারও বুঝতে বাকি নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে যেমন খুশি তেমন দরে পন্য বিক্রি করে যাচ্ছে। এ সব পন্যের সিংহভাগ স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত হয় তার পরও দাম কেন এতো চড়া এ প্রশ্ন সকলের মুখে মুখে। কাঁচা বাজারে খোজ নিয়ে দেখা গেছে, এক কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। অনুরুপ ভাবে কচা মরিচ ৫০ কাচা কলা ২৫ টাকা, উস্তে ৮০, আলু ১৫, পেয়াজ ৪০, রশুন ৪০, বেগুন ৪০, মিটকুমড়া ২৫, পটল ৭০, মেটে আলু ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প আয়ের একজন প্রাইভেট কার চালক বলেন, চার সদস্যের সংসার আমার। আয় রোজগারের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে আমি। মাস গেলে ৭ হাজার টাকা রোজগার করি। এই টাকায় সংসার চালিয়ে সন্তানাদির পড়ালেখা আর অসুস্থ্য হলে ওষুধ তো আছে। এখন আমি কি ভাবে দিন পার করি তা একটু ভেবে দেখুন। ভ্যান চালক আইনাল হোসেন জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচে থাকায় যেন দুরুহ ব্যাপার। দিন শেষে যা রোজগার করি তা নিয়ে চাল বাজারে গেলে সব শেষ। দিন মজুর আছের আলী আক্ষেপ করে বলেন, মাছ মাংশ আমাদের জন্য না, ওই সব খাবার বড় লোকেরা খেয়ে ভাল থাকুক। আমরা যে ভাবে আছি এই ভাবে শুধু বেচে থাকতে চাই। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে বাজার মনিটারিং জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ জনপদের খেটে খাওয়া মানুষেরা।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here