চৌগাছায় নির্মান সামগ্রীর অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধির ফলে মহা বিপাকে মানুষ

0
435

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় নির্মান সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল বৃদ্ধির ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন মানুষ। বিশেষ করে চলতি বছরে যারা বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মানে কাজ শুরু করেছেন তাদের মাথায় হাত। থমকে গেছে নানা ধরনের উন্নয়ন মুলক কাজও। গেল দুই মাসের ব্যবধানে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে নির্মান সামগ্রীর মূল্য। এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে তিল তিল করে জমানো অর্থ দিয়ে অনেক আশা নিয়ে যারা বাড়ি নির্মানের কাজে হাত দিয়েছেন তাদের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে এমনটি মানে করছেন অনেকে।
সূত্র জানায়, সময়ের ব্যবধানে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার মানুষের জীবন যাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আজ থেকে দুই দশক আগেও উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ছিল মাটির ঘর। সেই ঘরের ছাউনি ছিল বাঁশ আর খড় দিয়ে। কিন্তু গেল দুই দশকে প্রতিটি গ্রামের বাড়ি ঘরের পরিবর্তন ঘেেটছে। কেউ জায়গা জমি বিক্রি করে নির্মান করেছে একটি সুন্দর পাকা বাড়ি, কেউ আবার দীর্ঘ দিন প্রবাসী জীবন যাপন করে যা রোজগার করেছে সেই অর্থ দিয়ে তৈরী করেছে সুদর্শন একটি বাড়ি। বলাচলে গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি মানুষ এখন আর যাই করুক না কেন একটি ভাল পাকা বাড়ি তাদের চাই এ ধরনের মানসিকতা প্রত্যেকের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অনেকে আছেন জীবনের আয় রোজগার থেকে অল্পঅল্প করে জমানো অর্থ দিয়ে একটি বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্মান সামগ্রীর প্রতিটি জিনিসের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধিতে তাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের রডের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২২ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই মাস আগে আবুল খায়ের রড এক কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায়। অনুরুপ ভাবে রড মুনতাহার বর্তমান বাজার দর ৬৫ টাকা, এসআরএম ৬৩, সিএসআরএম ৬৬, বিএসআরএম ৭১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে প্রতিটি ব্রান্ডের সিমেন্ট বস্তা প্রতি প্রায় ১শ টাকা বেড়ে গেছে। বর্তমানে আকিজ সিমেন্ট ৪৯০, ফাইভ রিং ৪৫০, ফ্রেশ সিমেন্ট ৪৫০, সেভেন রিং ৪৭০, কিং ব্রান্ড ৪৫০ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে। অথচ একই সিমেন্ট গেল দুই মাস আগেও মানুষ বস্তা প্রতি ১শ টাকা কমে ক্রয় করে বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করেছিল। অনুরুপ ভাবে সব ধরনের বালির দামও অনেক গুন বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় বসে নেই ইট ভাটা মালিকরাও। বর্তমানে চৌগাছায় এক ট্রাক (২হাজার) ১নং ইট বিক্রি হচ্ছে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকায়। ২নং ১৪ থেকে ১৫ হাজার আর ৩ নং ইট বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়। ভাটা মালিকদের অভিযোগ কয়লা সহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইটের দামও বাড়াতে আমরা বাধ্য হয়েছি। উপজেলাতে একজন রাজমিস্ত্রি তার দিনের হাজিরা নিচ্ছে ৪৫০ টাকা আর তাদের সহকারীর হাজিরা ৩৫০ টাকা। এ অবস্থায় নির্মানাধীন বাড়ি ঘরের মালিকরা এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন। অনেকে দাম কমার আশায় নির্মান কাজ বন্ধ রেখে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এছাড়া উন্নয়ন মুলক অনেক কাজেই দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নির্মানাধীন ঠিকাদাররা তাদের কাজের গতি বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছেন। যদি খুব অল্প দিনের মধ্যে নির্মান সামগ্রীর বাজার স্বাভাবিক না হয় তাহলে ওই সব ঠিকাদারদের লাভ তো দুরের কথা বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে কাজ সমাপ্ত করতে হবে বলে জানা গেছে। চৌগাছার এক প্রবাসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদেশ থেকে যে আয় রোজগার করেছি তার সিংহভাগ দিয়ে একটি বাড়ি নির্মানের কাজে হাত দিয়েছিলাম। যখন এই কাজে হাত দিয়েছি তখন এক রকম হিসাব ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে ভাবে রড সিমেন্ট সহ সব কিছুর দাম বেড়েছে তাতে করে বাড়ির কাজ অর্ধেকও শেষ হবে না। লাখ লাখ টাকা ইতোমধ্যে খরচ করে ফেলেছি, এখন কি করব সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসেনা। চৌগাছার বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী মোমেনা ট্রেডার্সের মালিক সাইফুল ইসলাম ইসলাম জানান, রড সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। গত দুই মাস যাবত সে ভাবে আর বেচা কেনা হয়না। দিনের অনেক সময় বসে বসে অলস সময় পার করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দুই মাস আগেও ব্যবসায় যে পুজি বিনিয়োগ করে ১০ টাকা লাভ করেছি বর্তমানে তার চেয়ে অনেক গুন পুুঁজি বিনিয়োগ করে সেই একই লাভ হচ্ছে তার পরও নেই বেচাকেনা। নির্মান সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারনেই ব্যবসায় এই বেহালদশা বলে ওই ব্যবসায়ী মনে করেন।
খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here