চৌগাছায় চলতি মৌসুমে মশুরের চাষে ধস ॥ হতাশ কৃষকসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলে

0
351

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় চলতি রবি মৌসুমে মশুর চাষে ধস নেমেছে। বিগত দশ বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতি আর কখনও সৃষ্টি হয়নি বলে কৃষকরা মনে করছেন। মশুরের বাজার দর সন্তোষজনক না থাকা ও বৈরী আবহাওয়ার করনে এ বছর চাষ বহুলাংশে কমে গেছে বলে মনে করছেন কৃষি অফিসের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় নয়’শ হেক্টর কম জমিতে মশুর চাষ হয়েছে। আশংকাজনক ভাবে মশুর চাষ কমে যাওয়ায় স্থানীয় সহ এর প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে এমনটি মনে করছেন স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, মশুর একটি ডালজাত পন্য, গ্রামা ল থেকে শুরু করে শহরের অধিকাংশ পরিবারে গুলোতে মশুর ডাল একটি পরিচিত খাবার। খাবারের টেবিলে মশুর ডাল না থাকলে সেদিনের খাবারে যেন পরিপূর্ণতাই আসেনা। প্রতিটি বাঙালী পরিবারে এ নিয়ম যুগযুগ ধরে চলে আসছে। সেই মশুর চাষ সীমান্তুবর্তী উপজেলা চৌগাছাতে আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমি উপজেলাতে প্রায় ৯শ হেক্টর কম জমিতে মশুর চাষ হয়েছে। যা স্থানীয় কৃষকসহ সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন এক সময় ছিল চৌগাছার উৎপাদিত মশুর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জেলাতে রপ্তানী হত। কিন্তু সেই মশুর চাষ বলা চলে শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মাত্র ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে মশুর চাষ করা হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৪শ ৮০ হেক্টর জমিতে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মশুর চাষ কমেছে ৮শ ৩০ হেক্টর। বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য মশুরের বাজারদর মন্দা, উৎপাদন কম, বৈরী আবাহওয়াকে দায়ি করছেন কৃষক সহ কৃষি অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, যুগযুগ ধরে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মৌসুমী ফসল মশুর ব্যাপক ভাবে চাষ হয়ে আসছে। তবে আন্দারকোটা, জগদীশপুর, মির্জাপুর, কান্দি, স্বর্পরাজপুর, মাড়–য়া, আড়পাড়া, সাদিপুর. দক্ষিনসাগর, পুড়াহুদা, তেঘরী, মুক্তদাহ নারায়নপুর, পেটভরা, হাকিমপুর, হাজরাখানা, গ্রামা লের মাঠে ব্যাপক ভাবে মশুরের চাষ হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে এ সব এলাকার মাঠ গুলোতে মশুরের চাষ ব্যাপক ভাবে কমে গেছে । চলতি মৌসুমে যখন জমিতে মশুর বীজ বপন করা হবে ঠিক সেই মুহুর্তে অধিক বৃষ্টিপাত হয়। এরফলে জমি প্রস্তুত করতে না পারায় চাষ বহুলাংশে কমে গেছে বলে মনে করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে যে সকল চাষি বিচ্ছিন্ন ভাবে মশুর চাষ করেছেন তারা এবার বেশ লাভবান হবেন। এ পর্যন্ত যে আবহাওয়া বিরাজমান তাতে মশুর চাষের জন্য বেশ উপযোগী। উপজেলার পেটভরা গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি জানান, চৌগাছার মাটি সোনার চেয়ে খাটি। এ উপজেলার প্রতি ইি মাটি সব ধরনের ফসলের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে অনেক ফসল আজ বিলুপ্তির পথে। অধিক মুনাফার আশায় চাষিরা চাষ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে। এখন মশুর চাষ যোগ্য জমিতে ইরি বোরো ধানসহ হরেক রকম সবজির চাষ হচ্ছে। এ বছর মশুর চাষ বলাচলে নেই। ওই সব জমিতে কৃষক ধান রোপন করেছেন বলে তিনি জানান। কৃষক আব্দুল গনির মত অনেকেই বলেন, ভাল ফলন হলে ৮ থেকে ১০ মন মশুর হয় এক বিঘা জমিতে। বাজারদর ভাল হলে ১৫/২০ হাজার টাকার মশুর বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু চলতি বছরে কেন এই চাষ কমে গেছে তা বলা মুশকিল। সূত্র জানায়, আধুনিকতার ছোয়া আর বেশি লাভের আশায় মশুর চাষের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে সবজি, ভুট্টা, গম ধানসহ অন্যান্য ফসলে। এ সময় দেশে মশুরের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে লাখ লাখ টন মশুর আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজার সে সময়ে দখল করে নেয় পাশ্ববর্তী ভারতীয় মশুরি ডালে। স্বাদে গুনে দেশী মশুর ডাল অতুলনীয় এবং দেশের প্রতিটি এলাকায় এর চাহিদাও রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে। তাই এই চাষ বৃদ্ধির লক্ষে সংশ্লিষ্ঠ সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার সচেতন মহল। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইভা মল্লিক লোকসমাজকে জানান, চলতি মৌসুমে মশুর চাষ বহুলাংশে কমে যাওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে বৈরী আবহাওয়া। কৃষক যে সময়ে জমিতে মশুরের বীজ বপন করবে ঠিক সেই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। জমিতে পনি জমে যাওয়ায় চাষের উপযুক্ত সময় পার হয়ে যয়। যার করনে মশুর চাষ কমে গেছে। কৃষক ওই সকল জমিতে এবার ইরি বোরে ধান রোপন করেছেন। আমি আশা করছি আগামী মৌসুমে মশুর চাষ আবারও বৃদ্ধি পাবে।

খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here