চৌগাছায় ইরি বেগুনের ব্যাপক চাষ কাংখিত দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক

0
1035

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোরে) : যশোরের চৌগাছায় চলতি মৌসুমে বিস্তৃর্ন মাঠে ইরি বেগুনের ব্যাপক চাষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতি বছর উপজেলার সর্বত্রই বেড়েই চলেছে ইরি বেগুনের চাষ। ইরি বেগুন গ্রীস্মকালিন সবজি হিসাবে ইতোমধ্যে স্থানীয় চাষিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পরিশ্রম বেশি খরচও বেশি তারপরও বলাচলে অসময়ে ভাল অর্থ পাওয়ায় কৃষক এই চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। চারা রোপনের অল্পদিনেই ছোট ছোট গাছে বেগুন ধরায় চাষিরা একে ইরি জাতের বেগুন বলে নামকরণ করেছেন। তবে মধ্যসত্য ভোগীদের দৌরত্বে বেগুনের কাংখিত দাম না পেয়ে কৃষকরা বেশ হতাশ হয়েছেন।
সূত্র জানায়, চৌগাছা উপজেলা সবজি চাষের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠের পর মাঠ বছরের পুরো সময় ধরে কোন না সবজি চাষ হয়। তবে উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলেও শীতের সবজির ব্যাপক চাষ হয়। এক সময় উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠে শুধুমাত্র শীতের সবজি চাষ হলেও বর্তমানে তা গ্রীস্মকালেও ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। গত কয়েক বছরে উপজেলার অধিকাংশ কৃষক গ্রীস্মকালীন সবজি চাষে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। গরমের সবজি চাষে পরিশ্রম বেশি খরচও তুলনা মুলক বেশি তার পরও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমানে চাষিরা গ্রীস্মের সবজির দিকে ঝুকে পড়েছেন। গরম কালের সবজির মধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে ইরি বেগুন। স্থানীয় অনেকে এই বেগুনকে গরমের বেগুন বলে থাকেন, আবার কেউ কেউ ইরি বেগুন বলেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬শ হেক্টর জমিতে ইরি বেগুনের চাষ করা হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ২শ হেক্টর বেশি বলে জানা গেছে। স্থানীয় কৃষকরা এই বেগুনকে ইরি বেগুন নাম দিলেও এটি মুলত ভারতীয় ও চায়না বেগুন। ভারতীয় জাত হচ্ছে বিএনবি-৪২১, ৪২২ ও ৪৭৮ ও চায়না -৩ এবং দেশীয় জাত হচ্ছে ভাঙ্গুর ও লাফা। উপজেলার ইছাপুর, বিশ্বাসপাড়া, লস্কারপুর, চাঁদপুর, তারনিবাস, কংশারীপুর, বেলেমাঠ, জিওলগাড়ী, হাজরাখানা, পেটভরা, কদমতলা, মাঠপাড়া, মুক্তদাহ, হয়াতপুর, দেবিপুর, পাতিবিলা, নিয়ামতপুর, সাদিপুর, পুড়াহুদা, তেঘরী, বাকপাড়া, কয়ারপাড়া, আন্দারকোটা গ্রাম এলাকায় ইরি বেগুনের ব্যাপক চাষ লক্ষ করা গেছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ইরি বেগুনের চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তাই প্রতি বছরই এলাকাতে বেগুন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল উপজেলা ইছাপুর মাঠে গেলে দেখা যায় চাষিরা বেগুন ক্ষেত পরিচর্যায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে কৃষকের বেগুনের বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষক। তাই ক্ষেত পরিচর্জায় তারা এখন বেশ ব্যস্ত। এ সময় কথা হয় ইছাপুর গ্রামের সফল চাষি নাজমুল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, ইরি বেগুন অনেকে আইরেট বা গরমের বেগুন বলে চেনে। এই বেগুন চাষ বেশ পরিশ্রমের। কষ্ট বা খরচ যদিও বেশি তারপর বাজারে চাহিদা ভাল, দামও ভাল, তাই চাষিরা কষ্টকে আমলে না নিয়ে বেগুন চাষের দিকে বেশি ঝুকে পড়েছেন। তিনি জানান, গত মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়, তাই এ বছরও তিনি ১ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে দাম অনেক কম বলে তিনি জানান। এক সপ্তাহ আগেও ১ কেজি বেগুন ১৫ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে বর্তমানে সেখানে থেকে কিছুটা দাম বেড়েছে। কৃষক নাজমুলের মত ওই মাঠে বিল্লাল হোসেন বেলা ১০ কাঠা, সেলিম হোসেন ২ বিঘা, শামছুল আলম দেড় বিঘা, লিয়াকত আলী দেড় বিঘা, তোফাজ্জেল হোসেন ১ বিঘা, উসমান গনি ১ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছে। কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, বাংলা সনের অগ্রায়নের শেষ ও পৌষ মাসের প্রথমের দিকে জমি তৈরী করে চারা রোপন করতে হয়। ১ বিঘা জমি ৪শ চারা রোপন করতে হয়। ২৪ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি দুরত্ব করে বেড তৈরীর পর শুরু হয় পরিচর্যার কাজ। ১ বিঘা জমিতে সার, সেচ, কীটনাশক সহ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না দেখা দেয় তাহলে ওই জমি থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। কৃষকরা বলেন, মধ্যসত্য ভোগীদের দৌরত্বে কৃষক তার উৎপাদিত পন্যের কাংখিত মুল্য থেকে বরাবরই বঞ্চিত, এবারও তার কোন ব্যতিক্রম নেই। বাজার মনিটারিং করে এর একটি সমাধান হওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, চৌগাছায় গ্রীস্মের বেগুন চাষ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here