চৌগাছায় ইটভাটা ও বালু বহনে নিয়োজিত বাহনের বেপরোয় চলাচলে আতংকিত মানুষ

0
599

চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা : যশোরের চৌগাছায় গড়ে উঠা ইট ভাটা গুলোতে চলতি মৌসুমে ট্রাকের পরিবর্তে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার কর হচ্ছে ট্রাকটর। ট্রাকটরের ইঞ্জিনের পিছনে লাগানো হচ্ছে বগি যা অত্যান্ত ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যান্ত গ্রামা লের রাস্তাঘাট ওলি গলিতে। প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নই এমন চালক দিয়ে চালানো হচ্ছে এই বাহন। এমনকি শিশু কিশোরদেরকেও এই ঝুকিপূর্ণ বাহন চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেপরোয়া গতি, বিকট শব্দ আর যত্রতত্র হর্ণ বাজানোর ফলে পথচারীসহ সাধারণ মানুষ চরম আতংকের মধ্যে বসবাস করছেন। অবৈধ এই বাহনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসি।
সূত্র জানায়, সময়ের ব্যবধানে চৌগাছায় অন্তত ১৬ টির মত ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। আবাদি জমি নষ্ট করে যেখানে যেমন সুবিধা পাওয়া গেছে সেখানে তৈরী করা হয়েছে ইট ভাটা। অভিযোগ আছে এই সকল ইটভাটা গুলো সকল নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে তাদের ভাটা পরিচালনা করছেন। ফসলি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করা, কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়ানো, প্রধান প্রধান সড়কের পাশে মাটি জমা করে রাখা, শিশু শ্রম এমনকি ভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাকটর। বর্তমানে উপজেলাবাসির কাছে আতংকের এক নাম হয়ে দাড়িয়েছে ভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকটর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কোটচাঁদপুর সড়ক, দেবিপুর সড়ক, সলুয়া আফরা সড়ক, মহেশপুর সড়ক, ফাসতলা পুড়াপাড়া সড়ক, গুয়াতলী সড়ক, পুড়াপাড়া সড়ক ও পাশাপোল সড়কে প্রায় ১৬ টির মত ভাটা গড়ে উঠেছে। প্রতিটি ভাটায় ৮ থেকে ১০টি করে আবার অনেক ভাটায় এর চেয়েও বেশি ট্রাক বা ট্রাকটর কাজে নিয়োজিত আছে। সে হিসাবে সমুদয় ভাটায় কমপক্ষে দেড় শতাধিক ট্রাক বা ট্রাকটর মাটি, বালু, কাঠ ও ইট বহনের জন্য নিয়োজিত আছে। এমন এক সময় ছিল ভাটাগুলোতে এ সব কাজের জন্য শুধু মাত্র বেডফোর্ড ট্রাক ব্যবহার করা হত। কিন্তু ওই ট্রাকে খরচ বেশি হওয়ায় ভাটা মালিকরা ট্রাকের পরিবর্তে ট্রাকটরকে এই কাজে ব্যবহার করছেন। ট্রাকটরের ইঞ্জিনের পিছনে স্থাপন করা হচ্ছে বগি। এই বগির বেশির ভাগই টিনের পাত দিয়ে নির্মান করা হচ্ছে। খালি বগি নিয়ে যখন ওই ট্রাকটর সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে তখন বিকট শব্দে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। প্রতিদিন ভাটা মালিকদের নিয়মনুয়ায়ী এই বাহনের চালকরা সড়কে বেপরোয়া গতী নিয়ে চালাফেরা করছে। সূত্র জানায়, ইট ভাটার কাজে নিয়োজিত বাহনের চালকদের টিপের উপর টাকা। যে যত বেশি টিপ দিতে পারবে দিন শেষে সে তত বেশি টাকা রোজগার করে বাড়িতে ফিরবে। এই লক্ষ মাথায় নিয়ে চালকরা যখন সড়কে উঠে তখন তাদের কাছে বাজার, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এ্যাম্বুলেন্স, অফিস আদালত কোন কিছুই দেখার সময় নেই। ইতোমধ্যে স্থানীয়রা এই বাহনকে রাস্তার রাজা বলে অভিহিত করেছেন। কারন তারা কোন কিছুকেই তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছামত সড়কে চলাচল করছে। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এই বাহন উপজেলা সদরসহ গ্রামা লে চষে বেড়াচ্ছে। তাদের বেপরোয়া চলাচলে মানুষ আতংকগ্রস্থ্য হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। ২০১৭ সালে ইটভাটার কাজে নিয়োজিত ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুইজন স্কুল ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। চলতি মৌসুমে সেই ধরনের বড় কোন দূর্ঘটনা না ঘটলেও ছোট খাটো দূর্ঘটনা লেগেই আছে। ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত বাহনের মত চৌগাছায় বালুবহনকারী ট্রাকগুলোও চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বালু বহনকারী ট্রাকগুলো বালু ভর্তি করে যখন পৌর সদরে আসে তখন যেন গতি কয়েকগুন বেড়ে যায়। উচ্চস্বরে হর্ণ বাজানো তাদের কাছে নিয়য়ে পরিনত হয়েছে। এছাড়া বলু ভর্তি করে কোন তাবু কিংবা ত্রিপোল দিয়ে ওই বালু না ঢেকে উন্মুক্ত করে তারা চলে সড়কে। এতে করে বাতাসে বালু উড়ে পরিবেশ চরম ভাকে নষ্ট হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চৌগাছার এক কিন্ডার স্কুলের অভিভাবক জানান, চৌগাছায় যত গুলো ভাটা আছে প্রতিটি ভাটার মালিক অত্যান্ত ক্ষমতাধর। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবে না এটিই স্বাভাবিক। তানাহলে নিশ্চয় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করত। ১০/১২ বছরের শিশুরা বিশাল এই বাহন নিয়ে ছুটে চলছে সড়কে। তারা নিজেদের সম্পর্কে এখনও ভাল করে বুঝে উঠতে পারেনি কি ভাবে সড়কের নিয়ম কানুন বুঝবে? আমার সন্তানকে নিয়ে যখন আমি স্কুলে আসি তখন সমস্ত পথ চরম শংকার মধ্যে থাকি। এই সব বাহনের চালকদের বেশির ভাগই অপ্রশিক্ষিত। তারা এক সময় বেকার ছিল, এরপর নছিমন করিমন ইজিবাইক চালাতো এমনও অভিযাগ আছে কিন্তু রাতারাতি তারা হয়েছে ইটভাটার ট্রাকট্রারের চালক। তাদের কাছে সড়ক ও পথচারী কতটা নিরাপদ সকলের জানার কথা। উপজেলার সচেতন মহল ভাটা ও বালু বহনের কাজে নিয়োজিত বাহনগুলো পৌরসদরে একটি নিয়মের মধ্যে চলাচলের পাশাপাশি এই সব বাহনের ফিটনেস ও চালকের কাগজপত্র পরীক্ষা করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here