চৌগাছায় আদিবাসিদের ভিটা বাড়ির জমি দখল করে নেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল

0
281

চৌগাছা (যশোর)ঃ যশোরের চৌগাছায় যুগযুগ ধরে পৈত্রিক ভিটা বাড়িতে বসবাস করে আসা ১০টি অদিবাসী পরিবারকে ক্ষমতার জোরে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জোর করে উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ওই সম্প্রদায়ের কয়েকশ নারী-পুরুষ ও শিশু। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বাধীনতা ভাস্কর্য মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে আদিবাসি সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটা হিসেবে উপজেলা পরিষদের উত্তর পাশে ১৩২ নং দাগের জমিতে তারা যুগযুগ ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ওই দাগে মৃত ভোলানাথ সরদার ও মৃত বন্দিরাম সরদার নামের দুই সহোদরের ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে। সেখানে দির্ঘদিন থেকে পৌরসভার ইছাপুর গ্রামের শাহিনুর রহমান ওরফে শাহিন দেওয়ান তাদের বসবাসকৃত সম্পত্তিটি দখল করার পায়তারা করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতের একটি আদেশের কপিসহ গত ২৪ জুলাই চৌগাছা থানার এসআই আক্তারুজ্জামানকে নিয়ে জমি থেকে আদিবাসিদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। আদালতের কপি দেখিয়ে সেখানে বসবাসরত সিপন সরদার, বিলু সরদার, ভানু সরদার, তারক সরদার, কার্তিক সরদার, আরতী রাণী সরদার, লক্ষী রাণী সরদারসহ ১০টি পরিবারের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ওই স্থানে বসবাসরত আদিবাসী পরিবারগুলো আদালতের স্মরণাপন্ন হলে মহামান্য আদালত জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। মানববন্ধনে আদিবাসিরা দাবি করেন, আদালত তাদের উচ্ছেদ করলে উচ্ছেদের আগে নোঠিশের মাধ্যমে আমাদেরকে জানানো হবে। এমনকি একটি নিদিষ্ট সময় বেধে দিবে, কিন্তু কোন নোঠিশ বা সময় ছাড়াই এক প্রকার ক্ষমতার জোরে আমাদেরকে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আদিবাসীরা আরো বলেন, দখলকারী শাহিনের দাবি ভোলানাথ সরদারের নিকট থেকে বহু আগে জমিটি ক্রয় করেন, তাহলে সহোদর বন্দিরামের জমিও তারা কি ভাবে দখল করতে আসেন ? তারা মানববন্ধনস্থলে ২০০২ সালের ১০ মার্চ খুলনার তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি আপীল কেস নং ০২/২০০০ এর আদেশের কপি সরবরাহ করেন। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে বাদিপক্ষের (শাহিন দেওয়ানের পিতা মিজানুর রহমানের) দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমান নেই এবং তাদের প্রদর্শনকৃত দলিলে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এই আপীল কেসটি ছিল তৎকালীন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কর্তৃক তার আদালতের মিসকেস ৫১/ীররর/৯৬-৯৭নং মোকাদ্দামার ২৭-১০.৯৯ সালে প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে। বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেয়া আদেশ বহাল রেখে রিভিশন মামলাটি খারিজ করে দেন।
এদিকে বর্ষা মৌসুমের মধ্যে গত ২৪ জুলাই হঠাৎ করেই ১০টি পরিবারকে বসত-ভিটা থেকে উচ্ছেদ করায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। মাথা গোজার কোন ঠাই না থাকায় নিন্ম আয়ের এই মানুষ গুলো অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাদের কষ্টের কথা বলতে যেয়ে অনেকে কেঁদে ফেলেন। মানববন্ধন শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান। এ বিষয়ে শাহিনুর রহমান ওরফে শাহিন দেওয়ানের ব্যবহৃত ০১৭১৫০৯৮৮০৪ নম্বর মোবাইলে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। থানার এসআই আক্তারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি থানার না, আদালতের নির্দেশে সার্ভেয়ার ও প্রসেসরের উপস্থিতিতে প্রথমে বসবাসরতদের মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়, পরে উচ্ছেদ করা হয়। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভুমিকা পালন করেছে মাত্র। থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, মানববন্ধ বা উচ্ছেদ কোনটিই আমাদের ব্যাপার নয়। এটি আদালতের বিষয়। পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভুমিকা পালন করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবাদত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কোন স্মাকরকলিপি পায়নি। তবে আদিবাসীদের বিষয়টি আমি শুনেছি।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here