চৌগাছায় অভিনব কায়দায় গ্রাম্য মহিলাদের নিকট থেকে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

0
604

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা থেকে অভিনব কায়দায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে এক পল্লী চিকিৎসক। মোটা অংকের এই টাকা নিয়ে সে গত ২৮ অক্টোবর শনিবার দিবালোকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পাড়ি জমিয়েছে অজানা ঠিকানায়। চৌগাছা পৌর সদরসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সমুদয় টাকা সংগ্রহ করে। তার লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবরে ভুক্তভোগীদের এখন মাথায় হাত। টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগী পরিবার গুলো প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, চৌগাছা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক নুরুল হক (৫২) ওরফে ব্যাস্ত ডাক্তার। ব্যাস্ত ডাক্তার নুুরুল হকের স্থায়ী ঠিকানা সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলায় বলে জানা গেলেও তার কোন সত্যতা মেলেনি। তিনি ২০০৯ সালের দিকে চৌগাছায় এসে প্রথমে ৬ নং ওয়ার্ডের বাকপাড়া মহল্লায় বাড়ি ভড়া করে বসবাস শুরু করে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেখান থেকে চলে আসে ২নং ওয়ার্ডের পাচনামনা মহল্লায়। সেখানে ৬ শতক জমি কিনে টিন সেটের বাড়ি নির্মান করে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে। স্ত্রী মরিয়ম বেগম, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ওই বাড়িতে সে বসবাস করত। ২০১৫ সালে ব্যাস্ত ডাক্তারের একমাত্র মেয়েকে চৌগাছা পৌর এলাকার পুরাতন থানাপাড়া মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত গাড়ি চালক গোলাম নবীর ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। ব্যাস্ত ডাক্তার নুরুল হক পেশায় পল্লী চিকিৎসক হলেও চৌগাছা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশে একটি টোং দোকান নিয়ে সেখানে চা বিক্রিও করতেন। দিন রাতের বেশির ভাগ সময় সে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মাথা ব্যাথা, গ্যাস, জ্বরসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ ফ্রি বিতারণ করে মানুষের মন অতি সহজে জয় করে ফেলে। প্রতিটি পরিবারের কাছে সে আপনজন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তার বসবাস পাঁচনামনা গ্রামে হলেও সে পাশ্ববর্তী বেড়বাড়ি, বাকপাড়া, নিয়ামতপুর, হাকিমপুর, দুলালপুর, টেংগুরপুর গ্রামসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষকে সে ম্যাজিক ভালবাসা দিয়ে খুব অল্প সময়ে নিজের করে নেয়। বিশেষ করে প্রতিটি পরিবারের মহিলাদের কাছে সে অতি আপনজন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। গ্রাম্য মহিলাদের ছোট খাটো রোগ শোকে ব্যস্ত ডাক্তার নুরুল হক ছায়ার মত পাশে দাড়িয়েছে। গ্রামের মধ্যবৃত্ত নিন্মবৃত্ত শ্রেনীর পরিবারের মহিলাদেরকে সে নিজের করে নিয়ে সময়ে অসময়ে তাদের নিকট থেকে টাকা ধার নিয়ে তা আবার সময় মত পরিশোধও করেছেন। তিনি নিজেকে ধুয়া তুলসিপাতা সেজে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে আত্ম গোপনে। সূত্র জানায়, ব্যাস্ত ডাক্তার নুরুল হক পৌর এলাকাসহ অন্তত ৮/১০ টি গ্রামের মহিলাদের মাধ্যমে উপজেলার অধিকাংশ এনজিও থেকে সর্ব নিন্ম ১০ হাজার আর সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋন তুলে নিয়ে সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সহজ সরল মহিলাদেরকে সে বলেছে, আপা কিংবা ভাবি আমি একটু অর্থনৈতিক সমস্যায় আছি। আপনী এনজিও থেকে ঋন তুলে দেন, আমি কিস্তি পরিশোধ করব। ঋন নিতে এনজিওতে যে জামানত জমা দিতে হয় তা আমি দিবো এমনকি সেখানে যে সঞ্চয় জমা হয় তাও আমি জমা দিবো। লোন পরিশোধের পর সঞ্চয় ও জামানতের সমুদয় টাকা আপনার। আমার তো মান সম্মান আছে আপনি যে আমার টাকা তুলে দিচ্ছেন বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে এমনকি বাড়ির ভাইকেও বিষয়টি জানাবেন না। এ ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে পৌর এলাকার পাঁচনামনা গ্রামের শহিদুলের স্ত্রীর নিকট থেকে ১০ হাজার, আছের আলীর নিকট থেকে ১০ হাজার, রফিকুল ইসলামের নিকট থেকে ২০ হাজার, রোকনের স্ত্রীর নিকট থেকে ২০ হাজার, আমিনুরের স্ত্রীর নিকট থেকে ১০ হাজার, চান্দুর স্ত্রীর নিকট থেকে ৫০ হাজার, মতলেবের স্ত্রীর নিকট থেকে ১ লাখ, আল আমিনের স্ত্রীর নিকট থেকে ১০ হাজার, আম্বিয়া বেগমের নিকট থেকৈ ৪০ হাজার, এরফান আলীর নিকট থেকে ১০ হাজার, মনজুরা বেগমের নিকট থেকে ৪০ হাজার, সন্তোষের স্ত্রীর নিকট থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার, রাজ্জাকের স্ত্রীর নিকট থেকে ৪০ হাজার, কাঞ্চন বিরি নিকট থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার, ঝন্টুর স্ত্রীর নিকট থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার, শমসের আলীর স্ত্রীর নিকট থেকে ৮০ হাজার, দুলী বেগমের নিকট থেকে ৮০ হাজার, আব্দুল আজিজের নিকট থেকে ৯৪ হাজার, শাহিনের নিকট থেকে ১২ হাজার, আজিজুর রহমানের নিকট থেকে ২৮ হাজার, লিয়াকতের স্ত্রীর নিকট থেকে ৩০ হাজার, শুকুর আলীর নিকট থেকে ২০ হাজার, পরানের স্ত্রীর নিকট থেকে ২০ হাজারসহ ৮/১০টি গ্রাম থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে এখন চৌগাছা ছাড়া। সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর আগে তার বসতবাড়ি পাঁচনামনা গ্রামের জৈনক লাল মিয়ার নিকট অত্যান্ত গোপনে বিক্রি করে দেয়। বসত বাড়ি বিক্রির পর সে ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সে চলে যাওয়ার পর এই বিষয়টি জানাজানি হয়। ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌগাছা পৌরসভার প্যানেল মেয়র সহিদুল ইসলাম জানান, ব্যাস্ত ডাক্তার আমার এলাকার একজন পরিচিত মুখ। সে চলে যাওয়ার পর বিষয়টি প্রচার হয়েছে, এর আগে কখনও জানা যায়নি সে এ ভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নং ০১৮২৭০৬০২৬৫ চলে যাওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার গুলো টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here