চৌগাছায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে হুমকির মুখে কয়েকটি গ্রামের মানুষ

0
465

স্টাফ রিপোর্টার চৌগাছা (যশোর): যশোরের চৌগাছায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র সরকারী বিল বাওড় খাল এমনকি ব্যক্তি মালিকানা স্থান থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহাৎসবে মেতে উঠেছে। বছরের পর বছর তারা এই অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকলেও প্রশাসন অদৃশ্য কারনে রয়েছে চুপ। প্রতি নিয়ত ভুগর্ভস্থ্য থেকে বালু উত্তোলনের ফলে চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ঠ এলাকা। বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসি।

সূত্র জানায়, উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বালুময় বলে পরিচিত। বিশেষ করে পাতিবিলা বাজার হতে দেবীপুর বাজার পর্যন্ত মেইন সড়কের দুই পাশের সকল জমি বালুযুক্ত। এক সময় কতিপয় ব্যক্তি সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে বালু উত্তেলান করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তা ব্যাপক আকার ধারন করেছে। সড়টির দুই পাশের দিকে তাকালে মনে হবে প্রাকৃতিক ভাবে সেখানে কোন জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবে ঠিক তার উল্টো চিত্র। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বছরের পর বছর আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বালু উত্তোলন করার ফলে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল জলাশয়। একাধারে বালু উত্তোলনের ফলে চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কসহ স্থানীয় পাতিবিলা, দেবীপুর, নিয়ামতপুর গ্রাম ও এর আশপাশ এখন চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তি মালিকানা এই সব জমি থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি ওই অসাধু ব্যক্তিদের এখন নজর পড়েছে সরকারী বিল বাওড় খালের দিকে। সূত্র জানায়, উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের সাবেক এক জনপ্রতিনিধির সার্বিক তত্বাবধানে ঐতিহ্যবাহি মর্জাদ বাওড় থেকে অবৈধ পন্থায় উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। ইউনিয়নের হয়াতপুর গ্রামের নিচ দিয়ে প্রবাহবান এই বাওড়ে কমপক্ষে পাঁচটি স্থানে বসানো হয়েছে মেশিন। দিন রাত ওই মেশিনের মাধ্যমে বাওড়ের তলদেশ থেকে তুলে আনা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাওড় পারেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাতিবিলা গ্রামের সাবেক ওই জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম, বিপ্লব হোসেন, ফরুক হোসেন, আব্দুল মমিন, কামাল হোসেন, আশরাফ হোসেন, রুলু মিয়া, আব্দুস সালাম, নিয়ামতপুর গ্রামের ফজলুর রহমান, হয়াতপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন, তাপস কুমার, চৈতন্য রায়, তারোকসহ প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি বাওড় থেকে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তেলানের মহাৎসবে মেতে উঠেছে। উল্লেখিত সকলেই স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী ও সরকারী দলের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি উপজেলা সাবেক সহকারী (ভুমি) কমিশনারকে মৌখিক ভাবে জানানোর পর তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়নের ভুমি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু অদৃশ্য কারনে ওই কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে যান। থানা পুলিশসহ প্রশাসনের প্রায় প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তাগন ওই সড়ক দিয়ে মাসের প্রায় দিনই যাতায়াত করেন। কিন্তু তারাও বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। বছরের পর বছর বালু উত্তেলান করে কয়েকটি গ্রাম, বাজার আবাদি ফসল এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে ওই চক্র, আর প্রশাসন রয়েছে সম্পূর্ণ নিরব, এর অর্থ কি এ ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকার সচেতন মহলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত সকলেই প্রভাবশালী। তারা সরকারী সব জায়গা ম্যানেজ করেই একেবারেই ফ্রি ষ্টাইলে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। পাতিবিলা দেবীপুর বাজারের মধ্যখানে সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারী বুড়ি ভৈরব নদেও চলছে বালু উত্তোলন। সূত্র জানায়, উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর বাওড়, নিয়ামপুর ক্লিনিক সংলগ্ন মাঠ, জিওলগাড়ী, স্বরুপদাহ মাঠ, খড়িঞ্চা বাওড়সহ বেশ কিছু এলাকায় সরকারী বে-সরকারী জলাশয় থেকে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। সংশ্লিষ্ঠ এলাকার প্রভাবশালীরা আইনকে অমান্য করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনে মেতে উঠেছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যারা বালু উত্তোলন করে রাতারাতি বড় লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তারাও জানে এই কাজটি আদৌ ভালো না। তাদের কারনে শত শত মানুষ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন তারপরও টাকার নেশায় তারা যেন সব কিছুই ভুলে গেছে। দেশে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই, যার কারনে সব ধরনের অপরাধ নিরবে নিভৃতে সকলকে সহ্য করে যেতে হচ্ছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষেপর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার সচেতন মহল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here