চৌগাছায় অন্তত দশটি পরিবার দেশি জাতের ছাগল পালন করে স্বাবলম্বি

0
908

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় দেশি জাতের ছাগল পালন করে অন্তত দশটি পরিবার এখন স্বাবলম্বি। কৃষি কাজের পাশাপাশি প্রায় দশ বছর ধরে এই সকল পরিবার গুলো নিয়মিত ছাগল পালন করে আসছেন। বছর শেষে প্রতিটি পরিবার ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়তি রোজগার করছেন। তাদের এই সাফল্য দেখে গ্রামের অনেকেই এখন ছাগল পালনে ঝুকে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারয়নপুর ইউনিয়নের অত্যান্ত পরিচিত একটি গ্রাম হচ্ছে বুন্দলিতলা। চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের চাঁদপাড়া বাজার সংলগ্ন এই গ্রামটি এখন ছাগল পালনকারী গ্রাম হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এক সময় গ্রামের দরিদ্র কৃষক কৃষানী শখের বশত বাড়িতে দু’একটি করে ছাগল পালন করতো। কিন্তু সম্প্রতিকালে গ্রামটির অন্তত ১০ টি পরিবার বানিজ্যিক ভাবে ছাগল পালন শুরু করেছেন। গ্রামের একটি মহল্লায় বর্তমানে তিন শতাধিক দেশি জাতের নানা রঙের ছাগল রয়েছে। সংসারের সকল কাজের পাশাপাশি তারা ছাগলের পরিচর্জা নিয়মিত ভাবে করে যাচ্ছেন। এরফলে বছর শেষে প্রতিটি পরিবার বাড়তি ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাইতো এই সকল পরিবার গুলোতে এখন বইছে সুখের সুবাতাস। গতকাল সরেজমিন গ্রামটিতে যেয়ে দেখা যায় পরিবার গুলোর সদস্যরা এখন ইরি ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবারের ছোট সদস্যরা এই সময়টিতে ছাগলের দলকে মাঠে চরানো এবং তাদের দেখাশুনা করছেন। এ সময় কথা হয় গ্রামের মৃত হারান মন্ডলের ছেলে কৃষক ওমর আলীর সাথে। তিনি জানান, আমাদের মুল পেশা হচ্ছে কৃষি কাজ। কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়িতে দু’একটি করে ছাগল পালন নতুন কিছু নই। যুগযুগ ধরে এই নিয়মে চলে আসছে আমাদের সমাজ তথা পরিবার। একটি পরিবার বাড়িতে একটি ছাগল পালন করে বছর শেষে সেই ছাগল ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। বেশ লাভজনক ছাগল পালনে। এই বিষয়টি অনুধাবন করেই মুলত আমরা বেশি বেশি ছাগল পালনে মনস্থির করি। বর্তমানে গ্রামটির মোশারফ হোসেন, মইনুর রহমান, রনক আলী, হাসান আলী, শফিনুর রহমানসহ অন্তত দশটি পরিবারে ৩ শতাধিক ছাগল আছে। কৃষি কাজ করার পাশাপাশি তারা নিয়মিত ছাগল পালন করে যাচ্ছেন। এই পরিবার গুলোর সদস্যরা মিলে দিনে দুইবার করে সমুদয় ছাগলকে মাঠে চরাতে নিয়ে যান। দিনে সকালে একবার ও বিকালে একবার ছাগলের দল নিয়ে তারা মাঠে যান। মাঠে অনাবাদি জমিতে ছাগলের দল ছেড়ে দিয়ে পাহারা দেন। সকালে এক থেকে দুই ঘন্টা তাদেরকে মাঠে রাখা হয়। আর বিকালে মাঠ চরানো শেষে গোধুলীলগ্নে ছাগলের পাল নিয়ে ফেরেন বাড়িতে। এরপর যার যার ছাগল ভাগ হয়ে স্বস্ব বাড়িতে চলে যায়। কৃষক রওনক আলী বলেন, ছাগলের দলকে মাঠে চরানো ছাড়া তাদের পিছনে তেমন কোন সময় ব্যয় হয়না, এমনকি বাড়তি কোন খাবারও লাগে না। একটি মা ছাগল বছরে দুইবার বাচ্ছা দেয়। কোন ছাগল একটি আবার কোন ছাগল ৩/৪টি পর্যন্ত বাচ্ছা দেয়। ওই বাচ্ছা এক বছর পালন করলে তার বাজারদর হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বিশাল এই ছাগলের দলে অন্তত ৪ থেকে ৫টি প্রজননক্ষম ছাগল আছে। প্রজননের জন্য কৃষকদের অন্য কোথাও যেতে হয়না বলে তারা জানান। বর্তমান সময়ে বাজারে দেশি জাতের ছাগলের মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় তারা দেশি ছাগল পালন করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি ছাগল মৌসুমী রোগ বালায়ে আক্রান্ত হয়। এ সময় তারা বিভিন্ন পশু ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করেন। ছাগল পালন করে ওই সব পরিবার এখন স্বাবলম্বি। তাদেরকে অনুসরন করে গ্রামের অনেক পরিবারই ছাগল পালনে ঝুকে পড়েছেন। এলাকাবাসি মনে করেন, সরকারী ভাবে ছাগল পালনকারী পরিবার গুলোকে যথাযথ ভাবে সহযোগীতা প্রদান করলে তারা আরও উপকৃত হবেন।
খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here