চৌগাছার সড়কে দুই বাহিনীর টহল থাকা সত্বেও ডাকাতি পিতা নিহত পুত্র আহত

0
318

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু স্টাফ রিপোর্টার চৌগাছা (যশোর)ঃ  যশোরের চৌগাছায় আশরাফ হোসেন আশা (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গলায় ফাঁস ও ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে দশটার দিকে চৌগাছা- কাবিলপুর সড়কের শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই এই ঘটনা ঘটায়। এসময় ওই সড়কের তিনশ” মিটারের মধ্যে বিজিবি ও পুলিশের দুটি টহল দল টহলরত ছিল বলে জানা যায়। এছাড়া পাশেই বিজিবি ক্যাম্প, ওই ক্যাম্পে ছিলেন বিজিবি জোয়ানরা। দুই বাহিনীর সদস্যদের মাঝখান থেকে এমন দুঃসাহসিক ডাকাতি এবং হত্যা সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। নিহত আশরাফ হোসেন আশা উপজেলার ধুলিয়ানি ইউনিয়নের ছোট কাবিলপুর গ্রামের আনছার আলীর পুত্র। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
নিহতের পুত্র ওই ঘটনায় আহত জসিম উদ্দিন জানান, অভাব অনাটনের সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে আমি কাতার গিয়েছিলান। সেখানে কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে দেশে ফিরে আসি। ঘটনার ওই রাতেই অর্থাৎ শুক্রবার রাত দশটার দিকে তিনি চৌগাছায় এসে পৌছান। আহত জসিম উদ্দিন আরও বলেন, পিতা আশরাফ হোসেন মটরসাইকেলে আমাকে নিতে চৌগাছা আসেন। জসিম ও আশরাফ হোসেন (পিতা-পুত্র) মটরসাইকেলযোগে চৌগাছা থেকে ছোট কাবিলপুর ফিরছিলেন। তারা সড়কের শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পের অদুরে পৌছে দেখেন সড়কে একটি ট্রাক দাড়িয়ে আছে এবং গাছে দড়ি বাঁধা রয়েছে। বেঁধে রাখা দড়িতে জড়িয়ে পিতা পুত্র উভয় সড়কের উপর আছড়ে পড়ে। এ সময় ৭/৮ জন ডাকাতদল তাদের উপর হামলা চালায়। ডাকাত সদস্যদের একজন তাদের ১০০ সিসি প্লাটিনা মটরসাইকেল (যশোর হ- ১৩-০৯৬৬) নিয়ে চৌগাছার দিকে চলে যায়। জসিম দৌড়ে বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে ক্যাম্পের সদস্যদের কাছে সহায়তা চান। কিন্তু ক্যাম্প থেকে কেউ বের না হয়ে জসিমকে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাকটি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে চলে যেতে দেখে জসিম উদ্দিন বিজিবি সদস্যদের ট্রাকটি আটকাতে বললেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ। চরম অসহায় হয়ে জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে তার পিতাকে সড়কের উপর ট্রাক চাপা দিয়ে চলে গেছে। পিতার নিথর দেহ ওই সড়কের উপর পড়ে আছে। জসিম উদ্দিনের আর্তচিৎকার এলাকার সবাই শুনলেও কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। কিছু সময় পর ওই সড়কে টহলরত দশপাকিয়া ফাঁড়ি পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আফজাল হোসেন বলেন, সন্ধ্যার সাথে সাথে আমাদের টহলটিম সড়কে টহল দিতে বের হয়ে যায়। টহল থাকা কালিন এই ঘটনায় আমরা সকলেই হতবাক হয়েছি। এদিকে মাত্র তিনশত মিটারের মধ্যে পুলিশ ও বিজিবির দুটি টহল দল এবং পাশেই বিজিবি ক্যাম্পের বিজিবি জোয়ানরা থাকলেও কিভাবে এই দুঃসাহসিক ডাকাতি এবং হত্যার ঘটনা ঘটলো এই প্রশ্ন এলাকাবাসির মুখেমুখে। ওই একই স্থান থেকে গত ১৪ মে পুলিশ পরিচয়ে মটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়ার সময় স্থানীয়রা তিন ডাকাতকে আটক করে পুলিশে দেয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, ঘটনার আগের দিন বৃহস্পতিবার ধুলিয়ানি থেকে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে দুই যুবকের কাছ থেকে ওই এলাকা থেকে একটি মটরসাইকেল ছিনতাই করে নেয়া হয়। তিনি বলেন রাত ১০টার দিকেই পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ওই সড়কে টহল দিতে যান। অথচ এ সময়ের মধ্যেই ওই সড়কেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অবশ্যই আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here