চৌগাছার শিশু শর্মীলা হত্যাকান্ডে একজনকে আসামী করে চার্জসিট প্রত্যাখান পরিবারের

0
215

চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় চা ল্যকার শিশু শর্মীলা হত্যাকান্ডের চার্জসিট দেয়া নিয়ে নিহতের পরিবারে চরম ক্ষোভ আর হতাশা দেখা দিয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ লৌহমর্ষক এই হত্যাকান্ডে একজনকে আসামী করে আদালতে চার্জসিট জমা দেন। চার্জসিট জমা দেয়ার চার দিন পর নিহত শর্মীলার পরিবার পত্রিকা মারফত এই খবর জানতে পারেন। একজনকে আসামী করে চার্জসিট প্রদান করায় এই চার্জসিট তারা প্রত্যাখান করেন পাশাপাশি পুনরায় এই হত্যা মামলাটি তদন্তের জন্য তারা আইনের আশ্রায় নিবেন বলে জানান। একজনকে আসামী করে চার্জসিট প্রদানের খবরে গোটা এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, চৌগাছার চা ল্যকার শিশু শর্মীলা খাতুন (১০) হত্যা মামলার চার্জসিট আদালতে জমা দিয়েছেন পুলিশ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর একজনকে আসামী করে আদালতে এই চার্জসিট জমা দেয়া হয়। সেই একজন আসামী হলেন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার বিলধরা গ্রামের তবির উদ্দিনের ছেলে তজিবর রহমান ওরফে ঘরজামাই তজিবর। আদালতে চার্জসিট জমা দেয়ার চার দিন পর নিহতের পরিবার এই খবর পত্রিকা মারফত জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা বলেন, লৌহমর্ষক এই হত্যাকান্ড কোন ক্রমেই একজন করতে পারেনা। আমরা ৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করি কিন্তু কিভাবে একজনকে আসামী করা হলো ? আমরা এই চার্জসিট মানিনা। হত্যাকান্ডটি তদন্তের জন্য আমরা আইনের আশ্রায় নিবো। প্রকৃত হত্যাকরীদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। গতকাল নিহত শিশু শর্মীলার বাড়িতে গেলে তার স্বজনদের কাছ থেকে এই ক্ষোভ আর হতাশা দেখা যায়। এ সময় অনেকে শর্মীলার স্মৃতি চারণ করতে যেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নির্মম হত্যার শিকার শিশু শর্মীলার পিতা হাফিজুর রহমান ওরফে কালু মিয়া বলেন, পৃথিবীর সকলে বিশ্বাস করলেও আমি বিশ্বাস করিনা একজন ব্যক্তি আমার মেয়ে শর্মীলাকে এই ভাবে হত্যা করতে পারে। আমি ৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করি। যে ৬ জনকে আসামী করেছিলাম তারা সকলেই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। কিন্তু একজনকে কেন আসামী করা হলো ? এই মামলার চাজর্সিট আমি প্রত্যাখান করছি। শুধু প্রত্যাখান না মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পুনরায় তদন্ত হলে হত্যা মামলা নিয়ে কত লক্ষ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে এবং কারা এই টাকার ভাগ পেয়েছে তা বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় যে ৬ জন আসামী আছে তারা আদলতের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমানিত হয়ে বের হয়ে আসুক, সেক্ষেত্রে আমার কোন কষ্ট থাকবে না, কিন্তু আদালতে যাওয়ার আগেই কেন তাদেরকে চার্জসিট থেকে বাদ দেয়া হলো ? তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে থানায় নিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এখন বুঝতে পারছি তারা কেন সেদিন আমার সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমি অশিক্ষিত এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারা এই জঘন্য কাজটি করেন বলে তিনি জানান। শর্মীলার মা জাহানারা বেগম ওরফে জানু বলেন, আমার কলিজার টুকরাকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল তাদের সকলকে গ্রামবাসি আটক করে পুলিশে দিয়েছিল। কিন্তু একজন বাদে সকলকে পুলিশ ছেড়ে দেয়। সেদিনই বুঝে ছিলাম মামলা নিয়ে কিছু একটি হতে যাচ্ছে। চাজর্সিট প্রদানের চার দিন পর পত্রিকার খবরে সেই সত্যটি প্রমানিত হয়েছে। আমি এই চার্জসিট মানি না। পুনরায় এই হত্যামালা তদন্তের দাবি করেন তিনি। চাচা গোলাম মোস্তফা জানান, শর্মীলার লাশ উদ্ধারের দিনই যে ৬জন আটক হয়েছিল তারা সকলেই হত্যার সাথে জড়িত। অথচ পুলিশ কি ভাবে একজনকে আসামী করে আদালতে চার্জসিট দেয়। আরেক চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসির হাতে আটক ৬ জনের মধ্যে ৫ জন ছাড়া পাই। তাদের মধ্যে তিন জন আজও গ্রামছাড়া। এ থেকে কি প্রমানিত হয় না এই হত্যাকান্ডে তারা জড়িত ছিল। পুলিশ কেন একজনকে আসামী করে চার্জসিট দিলো ? দাদি আয়েশা বেগম বলেন, গ্রামবাসির চেষ্টায় ৬ আসামীকেই আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। পুলিশ একজনকে আটক রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়। আমরা আশা করেছিলাম সকলেই এই মামলার আসামী হবে। কিন্তু না হওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। শর্মীলার স্বজনরা আরও জানান, যে ৫ আসামীকে পুলিশ সেদিন ছেড়ে দিয়েছিল তারা বাইরে আছে। আমরা ওই খুনিদের ভয়ে আতংকে আছি। না জানি তারা আবারও বড় ধরনের কোন ক্ষতি না করে। এদিকে হত্যাকান্ডের প্রায় তিন মাস পর যে চার্জসিট পুলিশ আদালতে জমা দিয়েছে তা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা চা ল্যকার এই হত্যা মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আকিকুল ইসলাম বলেন, বাদি একজনকে আসামী করে মামলাটি করেছেন। সেটি ব্যাপক ভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকেই অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জসিট দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ জুন সন্ধ্যর সময় থেকে নিখোঁজ হয় শিশু শর্মীলা খাতুন। নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর তার গলিত লাশ বাড়ির অদুর থেকে উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনার এক দিন পর বুধবার বিকেলে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার বিলধরা গ্রামের তবির উদ্দিনের ছেলে তজিবর রহমানকে আটক করে গ্রামবাসি। তার স্বীকারোক্তিতে চৌগাছার ফকিরাবাদ গ্রামের আবু বক্করের ছেলে জাহাঙ্গীর (৪৮), তার পুত্র রাজু (১৪), জাহাঙ্গীরের জামাই জলিল ওরফে ভাষনের ছেলে সুমন (৩২), জাহাঙ্গীরের বোন-জামাই ও রফিকুলের ছেলে তুষার (৩২) এবং তুষারের ছেলে নাহিদকে (১৩) গ্রামবাসি ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ওই রাতেই নিহত শিশুর পিতা বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলা নং ২৪, তারিখ-২৭-০৬-২০১৮। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস তদন্ত শেষে একজনকে আসামী করে আদালতে চার্জসিট দেয় পুলিশ।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here