মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা :যশোরের চৌগাছায় সরকারী বাওড় গুলোতে চলতি মৌসুমে মাছ আহরোন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবারের মাছ আহরোন কার্যক্রমে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরাসরি হস্তক্ষেপে লাভের মুখ দেখার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি বাওড় থেকে মাত্র ৭ দিনে প্রায় ২১ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা সম্ভব হযেছে। কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তার এই সাহসিকতা কর্মকান্ডে বাধ সাজেছে সরকারী দলের কতিপয় সুবিধাভোগী নেতাকর্মীরা। চলতি বছরে তাদের পকেট খালি হওয়ার শংকা দেখা দেয়ায় তারা নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই মহলটির বিরুদ্ধে যশোর জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন খোদ নির্বাহী কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, উপজেলার তিনটি সরকারী বাওড় চৌগাছাতো বটেই সারা দেশের জন্য গৌরব ও অহংকার। সুবিশাল এই জলাকার এলাকার পরিবেশকে করে রেখেছে যেমন সুরক্ষা, তেমনি এই বাওড়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শতশত মানুষ। অপর দিকে সেখানে মাছ চাষ করার ফলে সরকারও অর্থিক ভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। কিন্তু গত প্রায় ১০ বছর ধরে বাওড় তিনটি থেকে সরকারী ভাবে মাছ চাষে ধস নামে বলে অভিযোগ। এমনকি সেখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা সেই জেলেরাও হয়ে পড়েন সম্পূর্ণ ভাবে বেকার। বাওড় গুলোতে সরকারী দলের লোকজনের নগ্ন হস্তক্ষেপের ফলে লাভ তো দুরের কথা বছরের পর বছর লোকসানের পাল্লা ভারি হয়েছে। সেই ধারা থেকে বের হওয়ার আপ্রান চেষ্টা করছেন চৌগাছার নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইবাদত হোসেন। তার একক প্রচেষ্টায় চলতি বছরে প্রতিটি বাওড়ে লাভের মুখ দেখবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সূত্র জানায়, চৌগাছার মর্জাদ, বেড়গোবিন্দপুর ও কাঠগড়ার সরকারী বাওড় তিনটি প্রতি বছর যথা নিয়মে মাছ চাষ হয়ে আসছে। প্রতিটি বাওড়েই প্রচুর পরিমানে মাছ চাষ হয় বলে স্থানিয়রা জানান। কিন্তু গেল ১০ বছর ধরে নানা কারনে এ সব বাওড় থেকে সরকার লোকসান গুনছেন। বিশেষ করে সরকারী দলের প্রভাবশালী নেতারা মাছ আহরোন শুরু হলে নানা কৌশলে সেই মাছ নিজেদের করে নেয়ার ফলে এই পরিনতি বলে মনে করছেন অনেকে। বিগত বছর গুলোতে এমনও দেখা গেছে ওই সব নেতারা সরকারী এই বাওড়ে তারা নিজেরা নাম মাত্র মাছ ছেড়ে বাওড়ে বেড়ে উঠা সমুদয় মাছ বিক্রি করে নিয়েছে। বাওড়ে কর্মরত ম্যানেজার সহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কাছে ছিলো জিম্মি। বলাচলে সরকারী এই বাওড় নেতারা নিজেদের সম্পত্তি মনে করে হরিলুটে মেতে উঠে। এই পরিস্থিতিতে উপলব্ধি করেন চৌগাছার নবগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেন। তিনি চলতি মৌসুমে মাছ আহরোন শুরুর আগে বাওড়ে দয়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত নেন প্রতিটি বাওড় থেকে মাছ শিকারের পর সপ্তাহে একদিন স্থানীয়দের মাঝে সরকারী রেটে বাওড় পাড়ে মাছ বিক্রি করা হবে। বাকি দিন গুলোতে এলাকার মাছ আড়ৎ গুলোতে বাজার দরে বিক্রি করা হবে। সেনুযায়ী তিনি গত জানুয়ারী মাসের ২৯ তারিখে মাছ আহরোন কার্যক্রম শুরু করেন। নিজে স্বশরীরে বাওড় পড়ে উপস্থিত থেকে মাছ বাজারজাত করার ব্যবস্থাও করেন। ওই দিনেই বেড়গোবিন্দপুর বাওড় থেকে ৪ হাজার ৩শ ৪৯ কেজি মাছ আহরোন করেন। যার বাজারদর হয় ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সেদিনের খরচ বাদ দিয়ে তিনি মুল টাকা পান ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এমনি ভাবে ৩০ জানুয়ারী মাছ ধরা হয় ৩ হাজার ১শ ১১ কেজি। যার মূল্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, ৫ ফের্রুয়ারী মাছ ধরা হয় ৪ হাজার ৪শ ৯৪ কেজি। এই মাছ বাজারে বিক্রি হয় ৪ লাখ ১৫ হাজার ২শ ১০ টাকা, ৬ ফের্রুয়ারী মাছ ধরা হয় ৩ হাজার ৫শ ৯৯ কেজি। যা বাজারে বিক্রি হয় ৩ লাখ ৫৯ হাজর ৯শ ১৫ টাকায়। ৯ ফের্রুয়ারী ২ হাজার ৭শ কেজি মাছ আহরোন করা হয়। যার বাজার দর ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৭শ ২৫ টাকা, ১০ ফের্রুয়ারী মাছ শিকার করে স্থানীয়দের মাঝে সরকারী রেটে ২৪ হাজার ৮শ ৯০ টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। ১১ ফের্রুয়ারী ৩ হাজার ২শ ৩৪ কেজি মাছ ধরা হয়। যার বাজার দর ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ ৪৯ টাকা। চলতি মৌসুমে মাত্র ৭ দিনে মাছ বিক্রি হয়েছে ২১ লাখ ১৪ হাজার ৪শ ৮৯ টাকা। সমুদয় খরচ বাদি দিয়ে এ পর্যন্ত টাকা আছে ১৯ লাখ ৮৯ হাজার ৪শ ৮৯ টাকা। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা। চলতি মৌসুমে বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ে ৫০ লাখ টাকার মাছ বিক্রির টার্গেট রয়েছে। সেখানে মাত্র সাত দিনে বিক্রি হয়েছে ২১ লাখ টাকার মাছ। মৌসুম শেষ হতে এখনও অনেক দিন বাকি। তাতে ধারনা করা হচ্ছে টার্গেটের দ্বিগুন টাকার মাছ বিক্রি করা সম্ভব হবে। আর এই অসাধ্যকে সাধন করেছেন নবাগত নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেন। তার সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতায় চলতি মৌসুমে প্রতিটি বাওড় থেকে অধিক মুনাফা অর্জিত হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে বাধ সেজেছে বিগত বছর গুলোতে যারা বাওড় তোছরুপ করেছে সেই সরকারী দলের নেতারা। সুবিধাভোগী ওই নেতারা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হেয় করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। মাছ আহরোনের সময় তারা বাওড় পাড়ে উপস্থিত থেকে রীতিমত নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বাকবিতান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই সকল নেতাদের নাম উল্লেখ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে যশোর জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেনের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি লোকসমাজকে বলেন, বাওড় সরকারী সম্পদ। অথচ আমি চৌগাছায় যোগদানের পর জানতে পারি প্রতিটি বাওড় কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের সম্পত্তি মনে করে ভোগ করে আসছে। তারা বাওড়ে চাষ করা মাছ শিকার করে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করে সরকারী অর্থ নিজেরা পকেটস্থ্য করছে। তাই বাধ্য হয়ে নিজে বাওড়ে উপস্থিত হয়ে মাছ আহরোন করছি এবং তা বাজরে বিক্রি করছি। ইতোমধ্যে দুটি ছেলে বাওড়ে উপস্থিত হয়ে আমাকে জানায় তারা বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ে ৫২ লাখ টাকার মাছ ছেড়েছে। তারা এই ৫২ লাখ টাকা এখন বাওড় ম্যানেজারের নিকট দাবি করে। সরকারী জলাকারে কি ভাবে তারা মাছ চাষ করে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর তারা দিতে পারেনি। বিষয়টি আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
খবর ৭১/ ই: