চৌগাছার নারায়নপুর কপোতাক্ষ নদের উপর সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন

0
364

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর); যশোরের চৌগাছার নারায়ানপুর কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত বহু কাংখিত সেতুটি অবহেলা আর অযতেœ ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। সেতু নির্মানের কাজ শেষ হওয়ার কিছু দিন পরেই এর দুই পাশের পার্শ্ব রাস্তায় ভাঙন দেখা দেয়। যা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। পার্শ্বরাস্তার সাথে এবার সেতুর মুল অংশের কাছের সড়কেও দেখা দিয়েছে ভাঙন। এ জনপদের মানুষের বহু কাংখিত স্বপ্নের সেতুর পাশ্বরাস্তা চোখের সামনে ভেঙ্গে যেতে দেখেও কারও কিছু করার নেই, সবাই দেখছে আর হতাশা প্রকাশ করছেন। বিষয়টি নিয়ে এর পূর্বেও বেশ কয়েকবার পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। সড়কে যে ভাবে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তা এখনই মেরামত করা না হলে দুই পাশের সড়কই কপোতাক্ষের গর্ভে একদিন বিলীন হয়ে যাবে এমনটিই মনে করছেন এলাকাবাসি।
সূত্র জানায়, উপজেলার নারায়নপুর ও হাকিমপুর ইউনিয়নবাসিসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নারায়নপুরে কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু। দেশ বিভাগের পরও এই স্থানটি দিয়ে মানুষ খেয়া পারাপার হতো। অসহনীয় দূর্ভোগকে সাথী করে মানুষ প্রতিদিন তার গন্তেব্যে পৌছাতেন। স্বাধীনতার পর যতবার নির্বাচন হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনে এ জনপদের মানুষের প্রানের দাবি ছিল আমরা কিছুই চাইনা, শুধু চাই কপোতাক্ষ নদের উপর একটি সেতু। মানুষের কষ্টের দিক বিবেচনা করে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে খেয়া পারাপারের স্থানে সেতু নির্মানের কাজ শুরু করা হয়। ওই সরকারের মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় সেতুর কাজ। এরপর পার হয়েছে কয়েকটি বছর। একপর্যায় বর্তমান সরকারের প্রথম দিকে সেতুটি পুনরায় নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। দীর্ঘ দিন সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর নির্মান কর হয় পার্শ্বরাস্তা। পাশ্ব রাস্তার কাজ শেষে সেতুটি ব্যবহারে খুলে দেয়া হয়। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই সেতুর পূর্ব পাশের পাশ্বরাস্তায় দেখা দেয় ভাঙন। প্রথম দিকে এই ভাঙ্গন অল্প হলেও বর্তমানে তা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে যে খুটি নির্মান করা হয়েছে সে গুলোও ভাঙনের কবলে পড়েছে। মুল সেতুর দুই পাশে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ ভেঙ্গে সড়কের ইট খোয়া পিচ বালু সব কিছুই এখন সড়কের পাশে পুকুরের পানিতে। গত কয়েক দিনের বর্ষনে সেতুর পূর্ব পাশে মুল সেতু সংলগ্নের সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন। বিশাল একটি অংশ ইতোমধ্যে ভেঙ্গে কপোতাক্ষের গর্ভে চলে গেছে। এই অবস্থার উন্নতি না হলে সেতুতে উঠার সড়ক পুরোটাই ভেঙ্গে মিশে যাবে কপোতাক্ষে মনে করছেন স্থানীয়রা। বর্তমান ভাঙন স্থান দিয়ে অত্যান্ত শতর্কতার সাথে যানবাহনসহ পথচারীরা পারাপার হচ্ছেন। নারায়নপুর গ্রামের আবু সাঈদ মোঃ রাজু জানান, কপোতাক্ষ নদ গ্রামটির পাশ দিয়ে প্রবাহমান। যুগযুগ ধরে সেতু সংলগ্ন স্থান দিয়ে খেয়া পারাপার হতো। মানুষের কষ্টের দিক বিবেচনা করে নদের উপর নির্মান করা হয় সেতু, যা স্থানীয়দের বহুদিনের কাংখিত ফসল। সেতুটি নির্মানের পর এ অঞ্চলের মানুষের কষ্ট বহুলাংশে কমে যায়। বিশেষ করে কৃষক তার উৎপাদিত ফসল যথা সময়ে বাজারে নিয়ে ন্যায্য দামে বিক্রি করে লাভবান হতে থাকে। অসুস্থ্য মানুষ দ্রæত সময়ের মধ্যে উপজেলা সদরে যেয়ে কাংখিত চিকিৎসা সেবা গ্রহন করতে পারছেন। সেতুটি নির্মানের পর বলাচলে এ অঞ্চলের চিত্র অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি বলেন, সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর প্রতি দিন বিকালে স্থানীয়রাসহ দুরদুরান্ত থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। বলাচলে এযেন এক মিনি পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু হঠাৎ করে সেতুর দুই পাশের সড়ক ভেঙ্গে পাশে পুকুরে যেয়ে পড়েছে। সড়ক সংকুচিত হয়ে আসছে। এমনিতেই মুল সড়ক থেকে সেতু অনেক অনেক গুন উঁচু। এমন পরিস্থিতিতে সড়ক ভাল না হলে এখানে দূর্ঘটনার আশংকা আছে। গত বর্ষায় সেতুর কাছাকাছি সড়কেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই পাশের সড়কই এখন ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, নারায়নপুরে কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত সেতুটি মুল সড়ক থেকে অনেক উঁচু। মুল সেতুতে উঠা নামা বেশ ঝুকিপূর্ণ। তারপর পার্শ্বরাস্তা যে ভাবে ভাঙতে শুরু করেছে তাতে ঝুকি আরও বেড়ে গেছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, সেতুর দুই পাশের পাশ্বরাস্তা সেতুর সাথে মিল করে নির্মান করতে যেয়ে সড়কও উচু করতে হয়েছে। সড়কগুলো যে ভাবে উচু করা হয়েছে তার পাশের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেতুর পূর্ব পাশের সড়কের দুই ধারে রয়েছে পুকুর। অল্প বৃষ্টিতেই সড়কের মাটি ভেঙে পুকুরে চলে যাচ্ছে। অনুরুপ ভাবে সেতুর পশ্চিম পাশের সড়কও ভেঙ্গে চলে যাচ্ছে নিচু এলাকায়। এই ভাঙন রোধে দরকার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। অন্যতায় স্থানীয়দের স্বপ্নের কাংখিত সেতুটি এক সময় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে মনে করছেন অনেকে। এলাকাবাসি সেতুটি রক্ষায় পাশ্বরাস্তা দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here