চৌগাছার কপোতাক্ষ নদ অবৈধ দখলদারদের কবলে কচুরি নদীকে গ্রাস করতে বসেছে

0
324

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছার উপর দিয়ে বয়ে চলা মহাকবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের কপোতাক্ষ নদ অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে তার সকল ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তি নদকে তাদের ইচ্ছামত ব্যবহার করার ফলে প্রমত্তা কপোতাক্ষ সংকুচিত হয়ে এখন মরাখালে পরিনত হয়েছে। বর্ষার ভরা মৌসুমে নদে নেই কোন স্রোরত, পটকচুরিতে নদ ভরে গেছে। মরা নদের মাঝে পাটাতন দিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ আবার অনেক নদের সম্পত্তি দখলে নিয়ে তৈরী করছে বসতবাড়ি কেউ বানিয়েছেন পুকুর। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে এখনই কপোতাক্ষকে বাঁচানোর উপযুক্ত সময়। অন্যথায় অচিরেই স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাবে কপোতাক্ষের ঐতিহ্য।
সূত্র জানায়,কপোতাক্ষ নদ ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাহক হিসাবে চৌগাছার বুক চিরে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। নদকে ঘিরে ব্যবসা বানিজ্যে অসামান্য সাফল্য পেতে থাকে এ জনপদের হাজারও মানুষ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই নদ এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। খনন না করার ফলে নদে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এর সাথে কিছু অসাধু ব্যক্তি নদকে নিজেদের মত দখল করে নেয়ায় তার স্বাভাবিক চলা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষার ভরা মৌসুমেও কপোতাক্ষে পানি নেই। যতটুকু পানি আছে তর পুরোটাই পটকচুরিতে ভরে গেছে। বর্তমানে কপোতাক্ষ পাড়ে গেলে বুঝার উপাই নেই এখানে এক সময় পাল তোলা নৌকা চলতো, জোয়ার ভাটা আসত নিয়মিত। দখলদারদের কবল হতে নদকে উদ্ধার করার পর খনন করা জরুরী মনে করছেন সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চৌগাছা উপজেলাকে কপোতক্ষ নদ বলা চলে দু’ভাগে বিভাক্ত করেছে। সুদুর চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা থেকে উৎপত্তি কপোতাক্ষ নদের। প্রায় ৬৫ মাইল দুরাত্ব এই নদ সাপের মত আঁকাবাঁকা হয়ে চৌগাছার বুক চিরে মিলিত হয়েছে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরে। বৃটিশ শাসনামলে এই কপোতক্ষ নদে চলেছে বিশাল বিশাল জাহাজ। বৃটিশ ব্যবসায়ীরা সে সময় জাহাজে করে বর্তমান চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের খলশী বাজার নামক স্থানে এসে তাদের বহনকরা জাহাজ নোঙ্গর করত। সে দেশ থেকে নিয়ে আসা চুন, লবণ, কেরোসিন তেল, পোশাক, শিশুদের খেলনাসহ নানা ধরনের মালামাল খালাশ করা হত এখানে। খালাশীরা (মুটে) জাহাজ থেকে এখানে মালামাল খালাশ করায় এই স্থানকে সে সময়ে খালাশি বলে ডাকা হতো। খালাসি হতে পরবর্তীতে জায়গাটি খলশি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই ভুখন্ডে বৃটিশরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে এখান থেকে নীল, চিনি, গুড় ওই জাহাজে বোঝাই করে পুনরায় কপোতাক্ষ দিয়ে পাড়ি জমাত তাদের দেশে এমনটিই জানালেন এলাকার বয়োবৃদ্ধরা। এলাকাবাসিরা জানায়, দেশ স্বাধীনের পরও এই কপোতাক্ষ নদে নিয়মিত জোয়ার ভাটা আসত। পাল তোলা নৌকা নিয়ে মাঝি মনের সুখে গান গাইতে গাইতে নিজ গন্তব্যে পৌছাতেন। ভরা যৌবনের কপোতাক্ষের অঢেল পানি আর জীব বৈচিত্র এ অ লে এক অপরুপ সৌন্দর্য বিরাজ করত। সে সময়ে কপোতাক্ষ নদে দেশী প্রজাতির মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাছের ব্যাপক সমারোহ ছিল। নানা জাতের পাখির কিচির মিচির ডাকে মুগ্ধ হতেন মানুষ। নদকে কেন্দ্র করে কপোতাক্ষের পাড়ে শতাধিক জেলে পল্লী গড়ে ওঠে। তাদের জীবন জীবীকার এক মাত্র মাধ্যম ছিল কপোতাক্ষ। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই কপোতাক্ষ আজ মরাখালে পরিনত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে জীব বৈচিত্রের উপর। বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে কপোতাক্ষ পাড়ে বসবাসরত জেলেরা। তারা কোন উপায়ান্তর না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করে আজ অনেকে হয়েছে দিন মজুর, কেউ নাপিত, ভ্যান চালক বা মুদি ব্যবসায়ী আবার অনেকে চলে গেছে অন্যত্র। অবৈধ দখলদারদের কারনেই কপোতাক্ষ নদের আজ এই পরিস্থিতি বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। বর্ষা মৌসুমে নদের কিছুটা রুপ ফিরে পাই। কিন্তু সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয়না। বৃষ্টি থামার পর কয়েক দিনের মধ্যে পানি সরে আবার ফিরে আসে পূর্বের চেহারায়। আর গ্রীস্ম মৌসুমে তো কপোতাক্ষের বুকে চরে গরু ছাগল। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কপোতাক্ষের অসংখ্য জমি চলে গেছে দখলদারদের কবলে। এই জমিতে কেউ তৈরী করছেন পুকুর, আবার অনেকে নদের পাড়ের জমি দখলে নিয়ে তৈরী করছে বসতবাড়ি। এ সব বাড়িঘর তারা নিন্মবিত্তদের মাঝে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে নিয়মিত হারে ভাড়া আদায় করছেন বলেও অভিযোগ। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে এক সময়ের প্রমত্তা কপোতাক্ষ মুক্ত করার পাশাপশি খনন করে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এ জনপদের মানুষ।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here