চৌগাছার কপোতাক্ষ নদের উপর বাঁশের সাঁকো পারাপারে দূর্ভোগে নিত্য দিনের

0
487

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারপারে মানুষের দূর্ভোগ লেগেই আছে। এই দূর্ভোগ কয়েকগুন বেড়ে যায় যখন কোন বাৎসরিক উৎসব আসে। বিশেষ করে চৌগাছার ঐতিহ্যবাহি পীর বলুহ মেলাকে কেন্দ্র করে মানুষ সাঁকো ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করে। তখন ওই অঞ্চলের মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাই। এলাকাবসি সাঁকো স্থানে ছোট পরিসরে হলেও একটি ব্রিজ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, মহাকবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের কপোতাক্ষ নদ চৌগাছা উপজেলাকে বলা চলে দু’ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। নদের পশ্চিম পাড়ে বৃহৎ দু’টি ইউনিয়নের অবস্থান। তারমধ্যে অন্যতম একটি ইউনিয়ন হচ্ছে নারায়নপুর। এই ইউনিয়নের একটি গ্রাম হাজরাখানা। গ্রামটির অধিকাংশ মানুষই কোন না কোন ব্যবসার সাথে জড়িত। হাজরাখানা গ্রামের মাটিতে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ)। পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ) এর মাজার শরীফের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহমান কপোতাক্ষ নদ। এই স্থান দিয়ে এলকাবাসির পারপারের জন্য একটি ঘাট আছে যুগযুগ ধরে, যাকে স্থানীয়রা হাজরাখানার ঘাট বলে চেনে। এক সময় নৌকায় করে মাঝি পথচারীদের পারাপার করতেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সব কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তের ছোঁয়া লেগেছে হাজরাখানার এই ঘাটে। নৌকার পরিবর্তে সেখানে নির্মিত হয়েছে বাঁশ কাঠের সাঁকো। বছরের পর বছর এ অঞ্চলের মানুষ এই সাঁকো পার হয়ে তার নির্দিষ্ঠ গন্তব্যে পৌছান। হাজারখানা গ্রাম দিয়ে সাঁকো পার হয়ে পূর্ব পাশে পাতিবিলা ইউনিয়নের তালপট্টি, নিয়মতপুর, পাতিবিলিা, পাঁচনামনা গ্রাম হয়ে পৌছানো যায় চৌগাছা উপজেলা সদরে। এই বাঁশের সাঁকো নদের দুই পারের মানুষের মধ্যে এক ধরনের সেতুবন্ধন তৈরী করে রেখেছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম এলে সাঁকো পারাপারে বেশ ঝুকিতে পড়তে হয় স্থানীয়দের। নদে পানি বেড়ে যাওয়ায় মুল সড়ক থেকে সাঁকো পর্যন্ত যেতে তাদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। সাঁকোর উপর দিয়ে পায়ে হেটে ও সাইকেল ছাড়া তেমন কোন কিছু পারাপার করা সম্ভব হয়না। বছরের বেশির ভাগ সময়ই স্থানীয়রা কষ্ট ভোগ করে চলাচল করলেও একটি সময় তাদের কষ্ট কয়েকগুন বেড়ে যায়। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাজরাখানা গ্রামে চির নিদ্রায় শায়িত এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ) এর মাজারকে ঘিরে প্রতি বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার মেলা বসে। সরকারী ভাবে এই মেলার মেয়াদ তিন দিন করা হলেও অঘোষিত ভাবে তা ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত চলে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীসহ দর্শনার্থীরা হাজির হয় মেলা চত্তরে। মানুষের ভিড় সামাল দিতে যেয়ে এলাকাবাসিকে রীতিমত হিমশীম খেতে হয়। মেলায় আগত মানুষের একটি বৃহৎ অংশ কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত এই সাঁকো ব্যবহার করেন। সে সময়টাই মানুষের কষ্ট কয়েকগুন বেড়ে যায়। সাঁকো পারাপারের চাঁদা আদায়কারী ও ইজারাদার আব্দুর রাজ্জাক জানান, যুগযুগ ধরে এই ঘাট সরকারী ভাবে ডাক হয়ে আসছে। যখন এখানে নৌকার মাধ্যমে পারাপার করা হতো তখন ঘাটের ডাক ছিলো অনেক কম। কিন্তু প্রতি বছরই ডাক বাড়েই চলেছে। তিনি জানান, চলতি অর্থ বছরে তিনি ৫৮ হাজার টাকায় এই ঘাট ডেকে নিয়েছেন। গত অর্থ বছরে ডাক ছিল ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করা বেশ ঝুকিপূর্ণ। কারণ অধিকাংশ স্থানের বাঁশ দূর্বল হয়ে গেছে। বলুহ মেলাকে কেন্দ্র করে সাঁকো মেরামত করা হবে। তিনি বলেন, বছরে একবার যখন মেলা শুরু হয় তখন কিছু রোজগার হয়। বাকি সময় তেমন কোন রোজগার হয়না। হাজরাখানা গ্রামের ইশানুর রহমান জানান, সাঁকো পারাপারে মানুষকে বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ সাকোটি অনেক সরু যার কারনে সাইকেল ছাড়া অন্য কোন বাহন নিয়ে এই সাঁকো পারাপার সম্ভব হয়না। মানুষের দূর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কপোতাক্ষ নদের উপর বাঁশের সাকোর স্থলে ছোট পরিসরে একটি ব্রীজ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি। হাজরাখানা গ্রামের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, বাঁশের সাঁকো দিয়ে পথচারীদের চলাচলে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মান করা হলে সকলেই উপকৃত হবেন বলে তিনি মনে করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here