চৌগাছার আদিবাসীরা ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে

0
570

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা উপজেলার আদিবাসী স¤প্রদায় হাজারও সমস্যার কারনে তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগেও সভ্যতা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। বছরের পর বছর ধরে নিজস্ব সেই প্রাচীনতম ঐতিহ্য লালন করে আসলেও সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব এবং সামাজিক দৃষ্টিভোঙ্গির কারনে আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পারছেনা। অপরদিকে দারিদ্রতার সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে অনেকে বেঁচে আছেন। আদিবাসী পুরুষ নারী এমনকি শিশুরাও দিনের বেশির ভাগ সময় কর্মের মধ্যে থেকে দিন পার করেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ৪৫ টিরও বেশি ক্ষুদ্র বা আদিবাসী রয়েছে। বাংলাদেশ জন-সমীক্ষণ রিপোর্ট ১৯৯১ অনুযায়ী এদের মোট সংখ্যা ১২ লাখ ৫ হাজার ৭৯৮ জন। মোট জনসংখ্যার শতকরা ১ দশমিক ০৩ শতাংশ। প্রায় ৩২ টি ভাষা আদিবাসীদের মাঝে প্রচলিত। আদিবাসী, ক্ষুদ্রজাতি সত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির কথা সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। আদিবাসীরা বাংলাদেশের চট্রগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম, কক্্রবাজার, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ অ লে বেশি বসবাস করেন। সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছাতে অন্তত ৪ থেকে ৫’শ আদিবাসী পরিবার বসবাস করে। ধারণা করা হয়ে থাকে চৌগাছায় বসবাসরত আদিবাসীদের মূল বসবাস ছিল আফ্রিকা মহাদেশে। অবশ্য অনেকে বলেন শতশত বছর আগে আদিবাসীরা সিন্ধু নদের অববাহিকায় বসবাস করত। পরবর্তীতে তারা ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়-পর্বতে বসবাস শুরু করে। বৃটিশ শাসনামলে ১৮২৬ সালে মুনাফালোভী ইংরেজরা বর্তমান চৌগাছা পৌর এলাকার ডাকবাংলার, কুঠিপাড়া ও হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পাশে তিনটি কুঠি স্থাপন করে। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল এই কুঠি থেকে খেঁজুর গাছের রসের গুড় দিয়ে চিনি উৎপাদন করা। ফলে কুঠির শ্রমিক হিসেবে ও বিভিন্ন কাজের জন্য আদিবাসীদের এ জনপদে আনা হয়। ইংরেজদের পতন হলে কুঠি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এ দেশীয় পরিবেশ রীতি-নীতির সাথে দীর্ঘদিন চেনাজানা হওয়ায় আদিবাসীরা এখানে বসবাস শুরু করেন। জানা গেছে, আদিবাসী যুগে যুগে বহু সংগ্রাম ও গনঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯৪৪ সালে ঐতিহাসিক তেঁভাগা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে রাজশাহীর সাওতাল বিদ্রোহ, ১৯৫৫ সালে সাওতাল যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। আদিবাসী সাওতাল স¤প্রদায় বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সোচ্ছার হয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে তারা চরম অবহেলিত। তারপরও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসীর কয়েকজন জানান তাদের বড় বৈশিষ্ঠ হচ্ছে তারা কাজকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আদিবাসী সদস্যরা যত অভাবই পড়–ক না কেন তারা ভিক্ষাবৃত্তি কখনও পছন্দ করেনা। তারা শিকার করা খুব পছন্দ করে। এখনো সময় পেলে তারা দল বেধে বন, বাঁদাড়, জঙ্গলে সাপ, খরগোশ, ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি প্রাণী শিকার করে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জারিত হলেও তারা বাপ-দাদার জীবনাচরণ মেনে চলার চেষ্টা করেন। বর্তমানে পুরুষরা মটর শ্রমিক, ভ্যানচালক, লিবার, সেলুনের কাজসহ বিভিন্ন পেশায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া মেয়েরাও কৃষিকাজ, ধান ও খড়ি কুড়ানী, ইটের খোয়া ভাঙ্গার কাজের সাথে সম্পৃক্ত। আদিবাসী শিশুরাও অভাবের সংসারে বাবা মাকে কাজের মাধ্যমে সহযোগীতা করে। সূত্র জানায়, বর্তমান চৌগাছা উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, পাইলট হাইস্কুলের উত্তর ও পূর্ব পাশে আদিবাসীদের বসবাস ছিল। সময়ের পরিক্রমায় তাদের সেই জায়গা জমি আজ সবই হাত ছাড়া। অভাবের কারনে কেউ জমি বিক্রি করেছেন, ক্রেতা ১ শতক কিনে ৫ শতক রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ তাদের মুখে। বর্তমানে চৌগাছার আদিবাসীরা বিভিন্ন এলাকাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছেন। এরমধ্যে উপজেলা পরিষদের পশ্চিম, পূর্ব, উত্তর, বালুগর্ত, তাদের শ্মশান ঘাট এলাকা, পুড়াপাড়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকাতে বসবাস করছেন। আধুনিক সভ্যতার আলো চতুর্দিকে ছড়ালেও চৌগাছায় বসবাসরত আদিবাসীরা রয়েছেন ঘোর অন্ধকারে। তারা এখনও নানা সমস্যায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। আদিবাসীদের উন্নয়নে সরকারি পৃষ্টপোষকতার যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে বলে আদিবাসী নেতারা মনে করেন।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here