চীন-ভারতের দ্বন্দ্ব কেন?

0
612

খবর৭১; সম্প্রতি এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীনের মধ্যকার নতুন করে দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর এবারের দ্বন্দ্ব দেশ দুটির মধ্যে ফের বড় কোনও যুদ্ধের আভাস দিচ্ছে। যদিও সাড়ে ৫ দশক আগের সেই দ্বন্দ্বের মূল কারণ ছিল সীমান্ত সমস্যা। তবে এবার সীমান্ত বিরোধকে ছাড়িয়ে নতুন ইস্যুতে বিপরীতমুখি অবস্থান নিয়েছে তারা।

প্রায় মাসখানেক ধরে ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দেশ দুটির আশঙ্কা নতুন এই বিরোধকে ঘিরে যেকোনও সময় যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে পারে। আর তাই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে উভয় দেশ সীমান্তে তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে এবং একটি মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে।

ভারত-চীনের মাঝে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় বিরোধ এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং মাঝে-মধ্যেই সেটি মাথা চাড়া দেয়। তবে এবারের ইস্যুটি ভিন্ন।

মূলত চীন, ভুটান আর ভারতের সিকিম প্রদেশের সংযোগস্থলে একটি উপত্যকার ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মধ্যে নতুন বিরোধের সূচনা। ভারতের উপর কৌশলগত আধিপত্য স্থাপনে ওই জায়গাটিতে রাস্তা তৈরি করতে চাইছে চীন। বিপরীতে ভারতও জানে, চীনকে সেখানে রাস্তা তৈরি করতে দিলে কৌশলগতভাবে ভারত পিছিয়ে পড়বে। একই সঙ্গে নতুন এ রাস্তা তৈরি হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ভারতের ধারণা।

কিন্তু যে জায়গাটিতে চীন রাস্তা তৈরি করতে চাইছে সেটি ভুটান ও চীনের মধ্যকার একটি বিরোধপূর্ণ এলাকা। সে উপত্যকাকে চীন এবং ভুটান-উভয় দেশই দাবি করে। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ভুটানের পক্ষে।

চীন এমন জায়গায় সড়ক নির্মাণ করতে চাইছে যার পাশেই ভারতের ২০ কিলোমিটার চওড়া একটি করিডোর আছে। এ করিডোরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো মূল ভারতের সাথে সংযোগ রক্ষা করে।

সিকিম প্রদেশের ওই সংযোগস্থলে সড়ক নির্মাণ না করার জন্য ভুটানের তরফ থেকে চীনকে আহবান জানানো হয়েছে। এ ধরনের সড়ক নির্মাণের প্রয়াসের মধ্য দিয়ে চীন আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন করছে বলেও মনে করে ভুটান।

অন্যদিকে সিকিম রাজ্যটি ভৌগলিক রাজনীতির দিক থেকে ভারতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই জায়গাটিতে চীন রাস্তা নির্মাণ করলে তা ভারতের উপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। বিপরীতে চীন যদি ওই স্থানে পৌঁছুতে না পারে তবে সিকিম প্রদেশকে ব্যবহার করে ভারত চীনের যেকোনও আগ্রাসনের শক্ত জবাব দিতে পারবে। তাই সিকিমে সড়ক তৈরিতে চীনের প্রতি এতটুকু নমনীয় হতে রাজি নয় ভারত।

এদিকে ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীনের কাছে ভারত পরাজিত হলেও এবার চীনকে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেছেন, ‘১৯৬২ সালের ভারত আর ২০১৭ সালের ভারত এক নয়। নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় ভারত এখন অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে শক্তিশালী।’

তবে চীনও ছেড়ে কথা বলছে না। তাদের ভাষ্য, ভারত সিকিম প্রদেশের ওই জায়গাটি নিয়ে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করছে। চীন মনে করে, যে জায়গাটিতে তারা সড়ক নির্মাণ করতে চাইছে সেটি তাদের অবিচ্ছেদ্য ভূখণ্ড।

ফলে ভারতের হুমকির জবাবে চীনও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলছে, অতীত স্মরণ করতে হবে। ১৯৬২ সালের চেয়ে বর্তমান চীন বহুগুণ শক্তিশালী।

দেশ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামার ভারতে বসবাসকেও চিহ্নিত করা যায়। কেননা, দালাইলামার ভারতপ্রীতি কিছুতেই গ্রাহ্য করে না চীন। সূত্র: বিবিসি।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here