খবর৭১: দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শেয়ার বাজার বাংলাদেশ। সম্প্রতি চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই শেয়ার বাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনতে চাইছে দুই দেশই।
প্রাথমিকভাবে চীনের প্রস্তাবনায় অনুমোদন দেয় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পর্ষদ। তবে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অবস্থান ভারতের পক্ষে।
২০১৩ সালে দেশের সবচেয়ে বড় এই শেয়ার বাজার ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা পৃথকীকরণ) অনুমোদন দেয় সরকার। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কৌশলগত অংশীদারদের কাছে চারভাগের একভাগ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা নেয় ডিএসই, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারবে ও শেয়ার বাজার আধুনিকায়ন করতে পারবে- এমন অংশীদার চায় তারা। স্বাভাবিকভাবেই লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে চীনের সাংহাইভিত্তিক একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে ডিএসই।
চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের একটি কনসোর্টিয়াম ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিটি ২২ টাকা মূল্যে ৪৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনার প্রস্তাব করেছে।
প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শেয়ার বাজারে টেকনিক্যাল সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। তবে ডিএসইতে একটি পরিচালকের পদ চেয়েছে চীনা কনসোর্টিয়াম। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিনিয়োগের কোনো অংশ ফেরত চাইবে না প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) একটি কনসোর্টিয়াম প্রতিটি ১৫ টাকা মূল্যে শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। আমেরিকান নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ার ফান্ড ফর বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আছে প্রতিষ্ঠানটির।
প্রস্তাবনায় ডিএসইতে টেকনিক্যাল সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছে এনএসইও। যদিও এর আর্থিক মূল্য উল্লেখ করেনি। ডিএসই বোর্ডে দুইটি পরিচালকের পদ চেয়েছে তারা। সঙ্গে পাঁচ বছর পর যাতে পরিচালকের পদ ছেড়ে দেয়া যায়- সেই সুযোগও চেয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানিয়েছে, ভারতের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি দাম হাকিয়েছে চীন। ভারতের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, চীন শেয়ার কেনার সুযোগটি পেয়ে যেতে পারে। এজন্য ডিএসই ও বিএসইসিতে লবিয়িং শুরু করেছে তারা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য রবিবার এনএসইর সিইও বিক্রম লিমায়ে ঢাকায় এসে ডিএসই ও বিএসইসির ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও করেছেন।
এদিকে শেয়ার কেনার সুযোগটি কাকে দেয়া হবে- এ নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়েছে সরকার। একদিকে দেশের বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমর্থক ভারত। অপরদিকে চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
বাংলাদেশের সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীরা মনে করছেন, ভারতকে সুযোগটি দেয়া ঠিক হবে না। প্রতিবেশীদের প্রতি খবরদারিমূলক মানসিকতার কারণে দেশটির প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ।
তাছাড়া অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ভারতকে দেখা হয় নেতিবাচক হিসেবে। সর্বশেষ মালদ্বীপে কর্তৃত্ব দেখাতে গিয়ে সেখানে নিজের অবস্থান হারিয়েছে ভারত। জায়গাটি দখল করে নিয়েছে চীন। নেপালের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো নেই দেশটির। দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় ভারতের ওপর ক্ষেপেছে নেপালিরা। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচারও বন্ধ করে রেখেছে তারা। শ্রীলংকা ভুটানের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একই অবস্থা ভারতের।
সব মিলিয়ে বিদেশীদের কাছে শেয়ার বিক্রি ইস্যুতে বাংলাদেশ কী অবস্থান নেয়- তা-ই দেখার বিষয়।
খবর৭১/জি: