খবর৭১:চীনের এক বৃদ্ধ নারী অবসরগ্রহণের পর যিনি সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাকে নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ৭৩ বছর বয়সী এই সাবেক স্কুলশিক্ষিকার নাম মিস চি।
তিনি বলছেন, অবসরের পর ছেলেমেয়ের ওপর বোঝা না হওয়ার জন্যই তিনি ঘোরাঘুরি শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ওপর তিন মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত এক কোটি ১০ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে। কিন্তু এ ভিডিও নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
ভিডিওর এক জায়গায় মিস চি প্রশ্ন তুলেছেন, বয়স হয়ে যাওয়া চীনাদের কেন তাদের ছেলেমেয়ের বাড়িতে থাকতে হবে? কেন ঘরের কাজকর্ম করতে হবে? কেন নাতি-নাতনিদের মানুষ করার দায়িত্ব নিতে হবে? চীনা সমাজে বয়স্ক মানুষের ভূমিকা এবং তাদের প্রতি সমাজের দায়িত্ব সম্পর্কে মানুষজন নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- মিস চি ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। এই সফরগুলোর সময় তিনি সাধারণত ছাত্রদের হোস্টেলে থাকেন। যাতায়াতের ব্যয় তিনি ছাত্রদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন।
তিনি বলেন, তার সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তরুণদের সঙ্গে আলাপচারিতা করা। তিনি বলেন, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করি এই কারণে যে, তারা নতুন কথা বলে।
তারা নতুন ধ্যানধারণা তুলে ধরে। মিস চির মায়ের বয়স ৯২ বছর। তিনি এখনও জীবিত। তিনি বলছেন, প্রতিদিন তিনি মায়ের সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলেন। তিনি কেমন আছেন সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। মিস চির জীবনধারা নিয়ে চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছে। অনেকেই তার স্বাধীন সত্তার প্রশংসা করেছেন।
কেউ আবার বলেছেন, তার ভিডিওটি তাদের দারুণভাবে উৎসাহিত করেছে এবং তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা সম্পর্কে চিন্তাভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে একজন বলেন, চীনা বাবা-মায়েরা যে কেন সবসময় ছেলেমেয়েদের বলে বিয়ে করো, বাচ্চা নাও! অন্য একজন মন্তব্য করেন- এই জন্যই আমি বিয়ে করতে চাই না। পিতামাতা, সমাজের বয়োবৃদ্ধ কিংবা পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো কনফুসিয়াস প্রবর্তিত মূল্যবোধের অংশ, যা চীনে কঠোরভাবে পালন করা হয়।
বয়স হওয়ার পর পিতামাতারা সন্তানের সঙ্গে থাকবে চীনা সমাজে এমনটিই আশা করা হয়। কিন্তু এখন বহু মানুষকে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়, আর বাড়িতে বৃদ্ধ পিতামাতা তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করে থাকেন। গড় আয়ু বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে চীনে বয়স্ক মানুষদের জন্য সংকট শুরু হয়েছে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ চীনের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মোট ৪ ভাগের ১ ভাগের বয়স হবে ৬৫ বছরের ওপরে।
খবর৭১/জি: