খবর৭১:কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃকুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নান সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৫ লক্ষাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সকল ধর্মের অনুসারীদের পদচারনায় প্রমাণ করলো রাম-রহিমের সত্যিকারের চারণ ভূমি চিলমারী বন্দর।
ব্রহ্মপুত্র স্নান উপলক্ষ্যে গত তিন দিন পূর্ব থেকেই চিলমারীতে শুরু হয় সাজ সাজ রব। দুর দুরান্ত থেকে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা চলে আসে চিলমারীতে। রমনা ইউনিয়নের চিলমারী বন্দর ঘাট থেকে ব্যাংকমারা হয়ে পুটিমারী পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটারব্যাপী বালুচরের উপর বসে নানা ধরণের ষ্টল। আসে বাইস কোপ, সার্কাস, নানান ধরণের খেলনার দোকান। বাঁশের বাঁশিওয়ালা, ফেরীওয়ালা, মাটির তৈরী হাড়ি, থালা, বদনা থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পারিবারিক জিনিসপত্র তো ছিলই। তার পাশাপাশি উঠে বিভিন্ন দেব-দেবীর মুর্তি, পুতুল, বাঘ, আম, নৌকা ইত্যাদি। এগুলোও মাটির তৈরী। এ মেলায় মৃৎ শিল্প প্রাধান্য পেয়েছে দু’টি কারণে- প্রথমত; ধর্মীয় মতে মাটির দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে বলে, দ্বিতীয়ত; দুর-দুরান্ত থেকে যারা আসেন তারা হাড়ি পাতিল বহন করে আনা পছন্দ করেন না। এসব কারণে হিন্দু পুন্যাথীরা যে দু‘তিন দিন ধর্মীয় কারণে চিলমারীতে অবস্থান করে তারা অল্প পয়সায় মাটির বাসন কোসন কিনে তাদের প্রয়োজন মিটানোর পর ওগুলো ফেলে রেখেই চলে যান।
শনিবার রাত ১০টা ১৪ মিনিট থেকেই ‘হে ভগবান ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্র, আমার পাপহরণ করো’ পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণ করে ফুল, কলা, আম, ডাব, হরতকিসহ পূণ্যযাত্রীরা ভক্তিমন্ত্রের সাথে সাথে মেতে ওঠে স্নানোৎসবে। এরপর থেকে পর দিন রবিবার সকাল ৭টা ৫২মিনিট ২৭ সেকেন্ড পর্যন্ত øান চলে।
উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মির্জা মুরাদ হাসান বেগ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ সরকার অষ্টমীøান মেলা পরিদর্শণ করেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীগণ অষ্টমী øান মেলায় আসেন। সরকারীভাবে অষ্টমী øান মেলাস্থলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য ৩০টি টিউবওয়েল, মহিলাদের কাপড় বদলানোর জন্য সরকারী, বেসরকারী ও এনজিওদের সহায়তায় শতাধিক তাবুর ব্যবস্থা করা হয়। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপির সদস্য মোতায়েন করাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশী পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মেলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। রবিবার বিকেলে জোড়গাছ বাজার, সোমবার বিকেলে বালাবাড়ীহাটে এবং মঙ্গলবার সকালে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
এই মেলাটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বরাবরই মেলার কয়েক দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন রেল, নৌ এবং বাস ষ্টেশনগুলোতে দিবা রাত্রি পুলিশ টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করে পূন্যার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করে। বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থীদের থাকবার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মেলা পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে তাবু খাটানো হয়। এই সকল তাবুতে সারা রাত ধরে চলে একনাম জপ ও কীর্তন। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ঢোল, ঢাক, বাঁশি, জুরি, তবলা, হারমনিয়াম বাঁজিয়ে হরিনাম জপতে জপতে ব্রহ্মপুত্র স্নানে আসেন। ব্রহ্মপুত্র øানে আসা পুন্যার্থীরা øান শেষে বাতাসা (ভেটি স্বরুপ) হরিলুট দিয়ে øানের সমাপ্তি ঘটায়।
খবর৭১/জি: